বাজারে ২২ টাকায় আলু কিনছে আমজনতা। আর নবান্নে বসে কৃষিমন্ত্রী আশ্বাস দিলেন, আলুর দাম কমবে দু’দিন পরে।
টানাপড়েন চলছে মাসখানেক ধরে। কখনও রাজ্যের সীমানায় আলুর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। কখনও মিলনমেলায় আলু রেখে তা পাঠানো হয়েছে মূলত পাইকারি বাজারে। সেই আলুর মান নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। আবার জ্যোতি আলুর দাম ১৪ টাকা কিলোগ্রামে বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছেন নবান্নের কর্তারা। কিন্তু কোনও কিছুতেই আলুর দাম কমানো যায়নি। মঙ্গলবার আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ফের দাম কমার আশ্বাস দিলেন। কীসের ভিত্তিতে? কৃষিমন্ত্রীর দাবি, হিমঘর-মালিক, আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি দাম কমার কথা বলছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকার যেখানে কেজি-প্রতি আলুর দর ১৪ টাকায় বেঁধে দিয়েছে, সেখানে দাম কতটা কমবে? কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আলোচনা চলছে। দেখুন, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।”
সরকার কোনও আলু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না কেন?
মন্ত্রীর জবাব, “অ্যাকশন নিচ্ছি। কত গাড়ি আটক করেছি জানেন! এর আগে কখনও এ-রকম হয়েছে? ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ১৪ টাকায় বিক্রি করছি।” পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি, তাঁদের সরকার মানবিক। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, হিমঘর-মালিক, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ২৫ অগস্ট টাস্ক ফোর্সের বৈঠক আছে। তার মধ্যে আলুর দাম কমবে।
কতটা কমতে পারে দাম?
নবান্নের খবর, চাপে পড়ে আলুর দাম কেজিতে দু’-এক টাকা কমাতে পারেন ব্যবসায়ীরা। অনেকের মতে, এক ধাক্কায় অনেকটা দাম বাড়ার পরে এখন সামান্য কমানোর ব্যবস্থা করে সরকার মুখরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলুর দাম বাড়ার পিছনে সরকারের নীতিই দায়ী। পশ্চিমবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরেন মণ্ডলের মতে, দাম বেঁধে দেওয়া এবং অন্য রাজ্যে পুরো মাত্রায় রফতানি করতে না-দেওয়ায় অনেকেই হিমঘর থেকে আলু বার করছেন না। ফলে বাজারে জোগান কমেছে। তার জেরে দাম বেড়েছে। ওই সংগঠনের দাবি, দর বেঁধে দেওয়ার আগে ১৭-১৮ টাকায় জ্যোতি আলু পাওয়া যাচ্ছিল।
প্রশাসনের কর্তারা কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই বক্তব্য মানতে রাজি নন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আলুর দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে। অন্য রাজ্যে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলার ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে আলু বাইরে পাঠালেন। আলুর দাম নিয়ে ফাটকাবাজি চলছে বলে কৃষি বিপণন দফতরের কয়েক জন কর্তাও অভিযোগ করেছেন।
সরকারি ব্যবস্থায় সস্তার আলু এখন অনেক পাইকারি বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে না। কোলে মার্কেটে গত দু’দিন ১২ টাকা দরের সস্তার আলু পাননি ব্যবসায়ীরা। সোম ও মঙ্গলবার তাঁরা জ্যোতি আলু কিনেছেন ১৬-১৭ টাকা কেজি দরে। অনেক খুচরো বাজারে এ দিন চন্দ্রমুখী আলুর দাম গড়ে দু’টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারের একাংশ বলছে, সরকার আলু আটক করছে। কিন্তু হিমঘর থেকে আলু বার করার চেষ্টা করছে না। সেটা করতে পারলে বাজারের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy