Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উঁচু পদে নিন ভূমিপুত্রদেরই, সওয়াল মন্ত্রীর

নতুন শিল্প তো মরীচিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেগুলো আছে, একে একে পাততাড়ি গোটাচ্ছে সেগুলোও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বেসরকারি সংস্থায় ‘হাই-এন্ড জবস’ বা উঁচু পদের চাকরিতে বাংলারই ছেলেমেয়েদের যাতে নিয়োগ করা হয়, তার জন্য আবার সওয়াল করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, এ রাজ্যে দক্ষ কর্মী পাওয়া সহজ। স্বল্প বেতনে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা হয় এখানে। অথচ উঁচু পদে চাকরির জন্য এখানকার ছেলেমেয়েদের পাড়ি দিতে হয় গুড়গাঁও, বেঙ্গালুরু, পুণে ইত্যাদি শহরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

নতুন শিল্প তো মরীচিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেগুলো আছে, একে একে পাততাড়ি গোটাচ্ছে সেগুলোও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বেসরকারি সংস্থায় ‘হাই-এন্ড জবস’ বা উঁচু পদের চাকরিতে বাংলারই ছেলেমেয়েদের যাতে নিয়োগ করা হয়, তার জন্য আবার সওয়াল করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, এ রাজ্যে দক্ষ কর্মী পাওয়া সহজ। স্বল্প বেতনে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা হয় এখানে। অথচ উঁচু পদে চাকরির জন্য এখানকার ছেলেমেয়েদের পাড়ি দিতে হয় গুড়গাঁও, বেঙ্গালুরু, পুণে ইত্যাদি শহরে। তাঁদের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এখানেই উঁচু পদের চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে।

যৌথ গবেষণার জন্য বণিকসভা ফিকি-র উদ্যোগে বেসরকারি সংস্থা জেনপ্যাক্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ‘মউ’ বা সমঝোতাপত্র সই করেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিবিজ্ঞান ও অর্থনীতির ৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রতি বছর প্রশিক্ষণ দেবে জেনপ্যাক্ট। পরে সেখানেই তাঁরা চাকরির সুযোগ পাবেন বলে জানান উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। শুক্রবার সমঝোতাপত্র সইয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পার্থবাবু। সেখানেই রাজ্যে উঁচু পদে চাকরির সুযোগের জন্য সওয়াল করেন মন্ত্রী।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নতুন নতুন শিল্পই যদি না-আসে, উঁচু পদে চাকরির সুযোগটা হবে কোথা থেকে?

রাজ্যের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কে-ই বা এখানে ভাল কাজ করতে আসবেন?

পার্থবাবু অবশ্য কোনও খামতির কথা মানতে রাজি নন। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “এত উন্নত পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে এ রাজ্যে। তা হলে আর চাকরির সুযোগ তৈরিতে বাধা কোথায়?” কিন্তু শিল্প না-হলে চাকরি হবে কী করে? এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে।

শিল্পমহলের একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েক বছর ধরে কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় সংস্থায় নতুন বিনিয়োগ কার্যত হয়ইনি। বরং ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে একের পর এক সংস্থা। হিন্দমোটর, শালিমারের মতো প্রাচীন সংস্থা ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে। শুরুর আগেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে জিন্দল গোষ্ঠী। ফলে নতুন শিল্পের অভাবে কাজের সুযোগ তো বাড়ছেই না। উল্টে বড় বড় সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজের সুযোগ ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।

শিল্পমহলের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞদের বক্তব্য, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পাওয়া বড় কাজের বেশির ভাগ বরাতই চলে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদে। তাই উঁচু মানের কাজ হচ্ছে অন্য শহরগুলিতেই। সেই জন্যই ছেলেমেয়েরা রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এক প্রবীণ শিক্ষাবিদের কথায়, “ঠিক কত শতাংশ ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষার পরে বাইরে চলে যায়, তার হিসেব নেই। তবে কৃতী ছেলেমেয়েদের বড় অংশই যে রাজ্য ছাড়ে, তা নিয়ে সংশয় নেই।”

এবং ওই সব ছেলেমেয়ের বেশির ভাগই বাংলা ছাড়ছেন বাধ্য হয়ে। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানালেন, দেশ ছেড়েছিলেন বছর দশেক আগে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে বদলি হয়ে এসেছেন। কয়েক মাস আগে গড়িয়া অঞ্চলে দেড় হাজার বর্গফুটের ফুটের সুসজ্জিত ফ্ল্যাট ছেড়ে তাঁর মা-বাবাও চলে গিয়েছেন সেখানে। কারণ, তাঁর সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ওই উচ্চপদস্থ অফিসারের এ রাজ্যে বদলির সম্ভাবনা নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এখন মহারাষ্ট্রে কাজ করছেন বছর ছাব্বিশের এক যুবক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। তাঁর মায়ের কথায়, “কলকাতার বাড়ি ছেড়ে আমাদের পক্ষে বাইরে যাওয়া কঠিন। ছেলেটা ওখানে একা কী করছে, কী খাচ্ছে, সেই চিন্তা তো লেগেই থাকে।”

কৃতীরা যে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, তা নিয়ে কী করছে সরকার?

পার্থবাবু জানান, এখানকার ছেলেমেয়েদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে রাজ্য সরকার একটি ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ তৈরি করছে। তাতে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ছাড়াও অন্য কয়েক জন মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দফতরের সচিব থাকবেন। কিন্তু সুযোগ ছাড়া প্রশিক্ষণ কোন কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

education west bengal partha chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE