Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধাধরা পড়ার ধাত নেই প্রথম বার প্রথম অন্বেষার

বাঁকুড়ার পোয়াবাগান বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন স্কুলের ছাত্রী অন্বেষা পাইন ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯০ নম্বর নিয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছে। সে বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৮ ও ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে।

মায়ের সঙ্গে অন্বেষা পাইন। নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে অন্বেষা পাইন। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভ্র মিত্র
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

সংখ্যায় তারা কম। তবু কয়েক বছর আগেও বাঁকুড়া জেলায় মাধ্যমিকের কৃতীদের কেউ কেউ মহাকাশচারী বা আইএএস, আইপিএস- হওয়ার স্বপ্নের কথা মুখে আনত। এ বার কিন্তু জেলার কৃতীদের বেশির ভাগই চিরাচরিত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বাইরে ভাবছে না।

বাঁকুড়ার পোয়াবাগান বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতন স্কুলের ছাত্রী অন্বেষা পাইন ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯০ নম্বর নিয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছে। সে বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৮ ও ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে। জুনবেদিয়ার প্রণবপল্লির বাসিন্দা এই কৃতীর বাঁধাধরা সময়ে পড়াশোনা করার ধাত তার কোনওদিনই নেই। সবকটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা করে মোট ১০ জন গৃহশিক্ষক ছিল। সেই সঙ্গে দাদু অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানের শিক্ষক জ্ঞানরঞ্জন পাত্র ও ইঁদপুরের গোঁসাই জোনড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বাবা বিশ্বজিৎ পাইনও তাকে পড়া দেখিয়ে দিতেন। স্কুলের শিক্ষকদের অবদান তো ভোলার নয়। পেশাদারি ভঙ্গিমায় তার মন্তব্য, ‘‘ভাল নম্বর পাওয়াটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল। যখনই পড়াশোনা করতাম মন দিয়ে পড়তাম। ডাক্তার হতে চাই।”

তার থেকে এক নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র মোজাম্মেল হক। টিউশনের চেয়েও স্কুলের পড়াশোনা ও বাড়িতে পড়ায় বেশি মনোযোগী ছিল পাটপুরের এই বাসিন্দা। তার প্রাপ্ত নম্বর: বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে। মোজাম্মেলেরও ইচ্ছা, ডাক্তার হবে। তার কথায়, “কয়েকটি টিউশন নিলেও স্কুলের পড়াশোনাতেই আমি বেশি গুরুত্ব দিতাম। স্কুলের শিক্ষকদের উপর নির্ভর করতাম।”

মাধ্যমিকে ৬৮৭ নম্বর পেয়ে যৌথ ভাবে চতুর্থ হয়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র প্রতাপবাগানের বাসিন্দা স্বয়ম কর্মকার ও বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী কাটজুড়িডাঙার মেয়ে সুবর্ণা দে। দু’জনেরই স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার।

৬৮৫ নম্বর পেয়ে যৌথ ভাবে ষষ্ঠ হয়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র প্রতাপবাগানের বাসিন্দা প্রতীক্ষাকান্তি মণ্ডল ও বাঁকুড়া গার্লস স্কুলের ছাত্রী নতুনচটির বাসিন্দা স্বাগতালক্ষ্মী মণ্ডল। তারাও জানিয়েছে, ডাক্তার হতে চায়।

৬৮৪ নম্বর পেয়ে যৌথ ভাবে সপ্তম স্থান দখল করেছে বড়জোড়া হাইস্কুলের ছাত্র সুকান্ত কুণ্ডু ও বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র অনিন্দ্যসুন্দর শতপথী, রাহুল মান্না ও সোনামুখী বিন্দুবাসিনী জুবিলি হাইস্কুলের দীপেন্দু গড়াই। বনশ্রীপল্লির বাসিন্দা সুকান্ত দুঃস্থ পরিবার থেকে উঠে এসেছে। তার বাবা প্রণবকুমার কুণ্ডু বড়জোড়ার একটি ছিপি তৈরির কারখানায় মাসে ছ’হাজার টাকা মাইনেতে শ্রমিকের কাজ করেন। ওই টাকাতে থেকে বাড়ি ভাড়া দেন। মূলত স্কুলের শিক্ষকদের পাশে পেয়েই এই সাফল্য বলে জানাচ্ছে সুকান্ত।

বিরাট কোহালির ভক্ত দীপেন্দুর পরিবারও তার বাবার নীলবাড়ি এলাকার স্টেশনারি দোকানের উপরে নির্ভরশীল। প্রান্তিকার ছেলে অনিন্দ্যসুন্দর পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলতে ও গান শুনতে ভালবাসে। ওরা তিন জনেই ডাক্তার হতে চায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা রাহুল বাবার কর্মসূত্রে এখন প্রতাপবাগানে থাকে। সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।

আরও পড়ুন:মাধ্যমিকে নজর কাড়ল রাজ্যের মেয়েরাই

বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা দিশা গোস্বামী ও মরার সম্মিলনী হাইস্কুলের সায়ন কুণ্ডুর প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩। বিষ্ণুপুর শহরের শালবাগানে সায়নের বাড়ি হলেও সে ভাল পরিবেশের জন্য মরার স্কুলকে পছন্দ করেছে। তাদেরও ইচ্ছে ডাক্তার হবে।

একই ইচ্ছে মাধ্যমিকে ৬৮২ নম্বর পেয়ে যৌথ ভাবে নবম হওয়া দিশারই সহপাঠী ইঁদারাগোড়ার সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় ও গোবিন্দনগরের বাসিন্দা সঙ্গীতা মণ্ডলের। ভবিষ্যতে পড়া চালাবে কী করে, তা নিয়ে আশঙ্কায় একই নম্বর পাওয়া জয়রামবাটির রামকৃষ্ণ মিশন সারদা বিদ্যাপীঠের সায়ন পানের। তার কথায়, ‘‘ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু বাবা সামান্য জমিতে চাষ করে সংসার চালান। মিশনের মহারাজরা দু’হাতে আগলে রেখেছিলেন বলে এই সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু ইচ্ছে কী ভাবে পূরণ হবে জানি না।’’

৬৮১ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে বাঁকুড়া জেলা স্কুলের ছাত্র ঋষান্ত পাল ও জয়পুর হাইস্কুলের তথাগত মুখোপাধ্যায়। ঋষান্ত ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও তথাগত ডাক্তার হতে চায়।

এ দিন জেলা প্রশাসনের তরফে বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে যান। তিনি অবশ্য অনেককেই আইএএস, আইপিএস হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE