Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধ পাওয়া যাবে তো, ভাবাচ্ছে জিএসটি

প্রসবের নির্দিষ্ট তারিখ ছিল ১ জুলাই। হঠাৎই এগিয়ে আনলেন ডাক্তার। কেন? জবাব, ‘‘যদি কোনও জটিলতা হয়, ওষুধ পাওয়া যাবে না। তাই সাবধান থাকতেই এই সিদ্ধান্ত।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:৫৭
Share: Save:

বাড়িতে একাধিক বয়স্ক, গুরুতর অসুস্থ রোগী। মাসে হাজার সাতেক টাকার ওষুধ লাগে। পরিচিত ওষুধের দোকান ক্রেতাকে সাবধান করছেন, ‘‘এক সঙ্গে দু’মাসের ওষুধ কিনে রাখুন। পরে পেতে অসুবিধা হতে পারে।’’

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে অস্ত্রোপচার হবে পায়ে। কিছু দিন আগে থেকেই তারিখ ঠিক করে রাখা আছে। হঠাৎই ডাক্তার জানালেন, আপাতত পিছোতে হচ্ছে। কারণ ওষুধের সরবরাহে সমস্যা হতে পারে।

প্রসবের নির্দিষ্ট তারিখ ছিল ১ জুলাই। হঠাৎই এগিয়ে আনলেন ডাক্তার। কেন? জবাব, ‘‘যদি কোনও জটিলতা হয়, ওষুধ পাওয়া যাবে না। তাই সাবধান থাকতেই এই সিদ্ধান্ত।’’

জিএসটি চালুর পরে ওষুধের বাজারের অবস্থাটা ঠিক কী দাঁড়াবে, সে নিয়ে বিভ্রান্তি সব মহলেই। আশঙ্কায় অনেকেই বাড়তি ওষুধ কিনে রাখছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে কোথাও এগিয়ে আনা হচ্ছে অস্ত্রোপচার, কোথাও বা বাতিল হচ্ছে। বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে ওষুধের দোকান মালিকদের কথায়। এ রাজ্যে ওষুধের দোকান মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)-এর তরফে শঙ্খ রায়চৌধুরী এবং সুবোধ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা পুরো অন্ধকারে। ১ তারিখের পর ওষুধ পাওয়া যাবে কি না বুঝতে পারছি না।’’ কেন এই বিভ্রান্তি? তাঁদের বক্তব্য, ‘‘অনলাইনে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করাতে পারছি না। সোমবার কয়েক ঘণ্টার জন্য পোর্টাল খুলেছিল। কয়েকশো দোকানদার রেজিস্ট্রেশন করাতে পেরেছেন। তার পরে আর পোর্টাল খোলা যায়নি। আমাদের ৪০ হাজার দোকানদারের মাথায় হাত পড়েছে।’’

সরকারি হাসপাতালেও এক অবস্থা। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য না করলেও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বলছেন, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স বা ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, সর্বত্রই অনিশ্চয়তা। যে সব বেসরকারি হাসপাতালের নিজেদের দোকান আছে তাদেরও বক্তব্য, ওষুধের এমআরপি বদলে যেতে পারে। এখনও ‘প্রাইস লিস্ট’ ঠিক হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক ওষুধ কোম্পানিকে একটা কোড নিতে হবে। তা-ও বেশির ভাগ সংস্থা পায়নি।

মঙ্গলবারই বিসিডিএ-র চিঠি পৌঁছেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে। চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ১ জুলাই থেকে রাজ্যে ওষুধ পাওয়া অনিশ্চিত। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের বিভিন্ন অংশ থেকেই ওষুধে ঘাটতির আশঙ্কার রিপোর্ট পৌঁছেছে কেন্দ্রের কাছে। যদিও আশঙ্কার অনেকটাই অমূলক বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর পর্ষদ (সিবিইসি)-র জিএসটি কমিশনার উপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘কিছু বিভ্রান্তি ছিল। তা স্পষ্ট করে দিয়েছি। মূল বিভ্রান্তি ছিল এই নিয়ে যে, সর্বাধিক খুচরো মূল্যের ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। আসলে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তার উপরে ১২ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে।’’

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, আসলে পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতারা পুরনো মজুত করা ওষুধ শেষ করে ফেলতে চাইছেন। তাই এই আশঙ্কাটা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তার যুক্তি নেই। কারণ পুরনো মজুত করা ওষুধে ১০০ শতাংশ সেন্ট্রাল ভ্যাট ছাড় মিলবে।

ওষুধের দাম নির্ধারক সংস্থা ‘ন্যাশনাল ফার্মা প্রাইসিং অথরিটি’ আজই এইচআইভি, ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিক এবং ক্যানসার-রোধী ওষুধ-সহ ৭৬১টি ওষুধের দামের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে। ফলে ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। সর্বভারতীয় স্তরে অল ইন্ডিয়া অর্গানাইজেশন অব কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস (এআইওসিডি)-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২১ জুনের হিসেব অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে ২২ দিনের ওষুধ মজুত রয়েছে। অর্থাৎ ওষুধ সংস্থাগুলি থেকে সরবরাহ না হলেও ওই ওষুধে তত দিন ঘাটতি হবে না। কিন্তু ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, হৃদরোগের ওষুধ মজুত রয়েছে আরও কম দিনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE