Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
হাইকোর্ট

কর্মবিরতির প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে ভোটাভুটির ভাবনা

সভা মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় কোনও সিদ্ধান্ত হল না। ফলে শোকপ্রকাশের কর্মবিরতিতে দাঁড়ি টানার প্রস্তাব সম্পর্কে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সংগঠনের কী অবস্থান, তা সরকারি ভাবে জানা গেল না। তবে অবস্থান স্থির করতে বার অ্যাসোসিয়েশনে গোপন ব্যালটে মতামত নেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। কিন্তু ‘কথায় কথায়’ কর্মবিরতির অভ্যাসের বিরুদ্ধে আইনজীবী মহলের একাংশের প্রতিবাদ ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠায় কর্মবিরতি-পন্থীরা কিছুটা হলেও চাপে পড়েছেন বলে আদালত-সূত্রের ইঙ্গিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:১০
Share: Save:

সভা মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় কোনও সিদ্ধান্ত হল না। ফলে শোকপ্রকাশের কর্মবিরতিতে দাঁড়ি টানার প্রস্তাব সম্পর্কে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সংগঠনের কী অবস্থান, তা সরকারি ভাবে জানা গেল না। তবে অবস্থান স্থির করতে বার অ্যাসোসিয়েশনে গোপন ব্যালটে মতামত নেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।

কিন্তু ‘কথায় কথায়’ কর্মবিরতির অভ্যাসের বিরুদ্ধে আইনজীবী মহলের একাংশের প্রতিবাদ ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠায় কর্মবিরতি-পন্থীরা কিছুটা হলেও চাপে পড়েছেন বলে আদালত-সূত্রের ইঙ্গিত। কোনও আইনজীবীর মৃত্যুতে শোকপালনের অঙ্গ হিসেবে কর্মবিরতি পালনের যে প্রথা কলকাতা হাইকোর্টে দীর্ঘ দিন চালু রয়েছে, তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। এ জন্য চার বিচারপতিকে নিয়ে তিনি একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। উদ্যোগটি কার্যকর করতে কমিটির যে প্রস্তাব, তার পক্ষে আইনজীবীদের একাংশের সমর্থনও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারি। এক আইনজীবীর মৃত্যুতে সে দিন আইনজীবীদের একটি বড় অংশ কর্মবিরতি পালন করলেও একটি মহল তাতে সামিল হয়নি।

এমতাবস্থায় এক দিকে হাইকোর্ট-কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাব, অন্য দিকে সতীর্থদের একাংশের বিরোধিতা দুইয়ে মিলে কর্মবিরতি সংস্কৃতির সমর্থন-ভিত্তি খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে। চার দিন হাইকোর্ট বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার কোর্ট খোলে। কথা ছিল, বিচারপতি-কমিটির দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে আজ, বুধবার কমিটির কাছে মতামত জানাবে হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন। সিদ্ধান্ত নিতে অ্যাসোসিয়েশন এ দিন সদস্যদের সাধারণ সভা ডেকেছিল। সংগঠনের সভাপতি সময় মতো হাজির হতে না-পারায় সভা মুলতুবি হয়ে যায়। পরে সভাপতি ও সম্পাদকের উপস্থিতিতে ঠিক হয়, প্রয়োজন হলে অ্যাসোসিয়েশনের যে কোনও সদস্য গোপন ব্যালটে মতামত জানাতে পারবেন। সেগুলি নিয়ে পরবর্তী সাধারণ সভায় আলোচনা হবে। তার ভিত্তিতে অ্যসোসিয়েশন যে সিদ্ধান্ত নেবে, বিচারপতি-কমিটিকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

পরবর্তী সাধারণ সভার দিন ঠিক হয়নি। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বিচারপতির কমিটি কী প্রস্তাব দিয়েছে? কমিটি বলেছে, বিশেষ কারণে হাইকোর্টের কাজ পূর্ণ দিবস বন্ধ রাখা হলে কাজের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শনিবার আদালত খোলা রাখতে হবে। কাজের দিন বিকেলে হাইকোর্ট বন্ধ হওয়ার অল্প সময় আগেও শোকপালন করা যেতে পারে। কমিটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বছরে অন্তত ২১০ দিন হাইকোর্ট খোলা থাকতেই হবে।

বকেয়া মামলা জমতে জমতে যেখানে পাহাড় প্রমাণ, দিনের পর দিন বহু মামলা ঝুলে থাকায় বহু লোকের যেখানে দুর্গতির অন্ত নেই, সেখানে শোকপালনের নামে তামাম কাজের দিন নষ্টের এ হেন প্রবণতা যে বিচারপতিরা মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না, গত বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে দিন আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলাকালীন বিভিন্ন এজলাসে বিচারপতিদের কড়া মন্তব্যসমূহ বার অ্যাসোসিয়েশনের নজর এড়ায়নি। “অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন, যে, অধিকাংশ বিচারপতিই কর্মবিরতির বিপক্ষে।” মন্তব্য এক আদালত-সূত্রের।

বস্তুত বিচারপতিদের কঠোর অবস্থানের সুবাদে ২২ তারিখে কর্মবিরতির হাইকোর্টও সচল ছিল। ওই দিন সকালে সব বিচারপতি নির্দিষ্ট সময়ে এজলাসে বসেছিলেন। আইনজীবীদের বড় অংশ না-থাকলেও বেশ কয়েক জন আইনজীবী নিজেদের মামলা নিয়ে নির্দিষ্ট এজলাসে হাজির হন। নিজেদের সংগঠনের কর্মবিরতির ডাক উপেক্ষা করে তাঁরা যে ভাবে হাইকোর্ট-কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার মধ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিতই দেখা যাচ্ছে বলে আদালত-সূত্রের অভিমত। সূত্রটির পর্যবেক্ষণ, “এই পরিস্থিতিতে বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা একবাক্যে কর্মবিরতি বন্ধের প্রস্তাব উড়িয়ে দিতে পারছেন না। সব সদস্যের মতামত না-জেনে কমিটির সামনে হাজির হওয়াটা তাঁদের পক্ষে মুশকিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata highcourt strike bar association
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE