প্রথা ভেঙে এ বার কেন্দ্রীয় বাজেটের আগেই রাজ্য বাজেট হতে চলেছে। মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ হবে। তার আগে, ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন।
আইনত কোনও বাধা না-থাকলেও সাধারণত কেন্দ্রীয় বাজেট হয়ে যাওয়ার পরেই রাজ্য বাজেট হওয়ার রীতি চালু রয়েছে। ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, কেন্দ্রে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট পেশ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার এক দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিধানসভায় রাজ্যের বাজেট পেশ করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানানোয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পরে গিয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য: সাধারণত কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার পরেই রাজ্যের বাজেট পেশ হয়ে থাকে। এ বিষয়ে সাংবিধানিক কোনও বিধি-নিষেধ না থাকলেও সেটাই দস্তুর। কেন?
অর্থ-কর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলি থেকে কর বাবদ যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে, তার একটা ভাগ পায় রাজ্যগুলি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র যেমন অনুদান দিয়ে থাকে, তেমন অনেক প্রকল্পে খরচের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অংশীদারি থাকে। কেন্দ্রীয় বাজেটে এ সব পরিষ্কার জানানো থাকে। তার ভিত্তিতেই রাজ্য অর্থ দফতর নিজেদের বাজেট তৈরি করে। কারণ, কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রসঙ্গটি পরিষ্কার হয়ে গেলে রাজ্য সরকারও পরিকল্পনা খাতে কত টাকা খরচ করবে, তার খসড়া তৈরি করে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে ঠিক করে ফেলতে পারে নিজেদের রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি।
এমতাবস্থায় মমতার সরকার আচমকা উল্টো পথে হাঁটায় বিস্মিত প্রায় সকলেই। নবান্নের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেছেন জেনে প্রশাসনের কর্তারা কার্যত চোখ কপালে তুলেছেন। অর্থ দফতরের আধিকারিকদের অধিকাংশই জানতেন না, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বাজেট পেশ হতে চলেছে। এ দিনও বাজেট প্রসঙ্গে তাঁদের ঘরোয়া বৈঠক ছিল। আধিকারিকেরা মার্চের ৬-৭ তারিখে বাজেট ধরে নিয়ে কাজ এগোচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জানার পরে তাঁরা এখন বুঝে উঠতে পারছেন না, কী করা উচিত।
কেন মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ঘোষণা?
এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এই প্রশ্নটাই নবান্নে ঘোরাফেরা করেছে। বস্তুত রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রায় অধিকাংশ সদস্যেরই এ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। মমতা-ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রীর দাবি, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ছাড়া কেউ কারণটা জানেন না। তাঁকে ফোন করা হলে অবশ্য কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএসের জবাব মেলেনি।
অন্য দিকে সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের জন্য কত বরাদ্দ হবে, তা ঠিক হয় কেন্দ্রীয় বাজেটে। বর্তমান শাসকদল এ সবের তোয়াক্কা করেন না, অথবা তাঁদের সঙ্গে কেন্দ্রের এতটাই ভাল সম্পর্ক যে, আগেই সে সব তারা জেনে যাবেন!” তাঁর কটাক্ষ, “এই সরকার আসার পরে আমরা কত কিছুই প্রথম দেখলাম! এটাও না হয় দেখব!” কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, “কেন সরকার এটা করবে, তার উত্তর ওরাই দিতে পারে। আমাদের রাজ্যে অতীতে এমন নজির নেই। সাধারণত কোনও রাজ্যের নির্বাচন থাকলে তখনই ভোট অন অ্যাকাউন্ট করা হয়, কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে।” তাঁর প্রশ্ন, “তবে কি ধরে নেব, রাজ্য সরকার নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে?”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেও নানা ব্যাখ্যা। রাজ্যের অর্থ দফতরের কয়েক জন অফিসারের ধারণা, বিধানসভায় বাজেট-বিতর্ক এড়াতেই অর্থমন্ত্রী আগে বাজেট পেশ করতে চাইছেন। অনেকের মনে হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেননি। তাই অর্থবর্ষ (২০১৪-’১৫) শেষ হওয়ার এক মাস আগেই বাজেট পেশ করে দিতে চাইছেন। যাতে বাজেট পেশের পরে রাজস্ব আদায় নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে তিনি বলতে পারবেন, হাতে এক মাস সময় রয়েছে। ঘাটতি মেটাতে সে ক্ষেত্রে তিনি রাজস্ব আদায়বৃদ্ধির নতুন পরিকল্পনাও ছকতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy