সারদায় কুড়ি হাজার টাকা বা তার বেশি পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলেন যাঁরা, তাঁদের আমানত এখনই ফেরত দেওয়ার কথা রাজ্য সরকার ভাবছে না। কারণ সরকার মনে করছে না যে, ওঁরা ‘গরিব’ লোক।
সারদা কমিশন অবশ্য ইতিমধ্যে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আমানতকারীদের তালিকা বানিয়ে ফেলেছে। কমিশন-সূত্রের খবর: তালিকায় নাম রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। আর ওঁদের সকলকে আমানত ফেরাতে হলে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা দরকার। কিন্তু কমিশন-সূত্রের দাবি, সরকার চাইছে না বলেই ওই সব আমানতকারীকে টাকা ফেরতের ব্যাপারে তৎপর হওয়া যাচ্ছে না।
সারদা কমিশনের কর্তারা সম্প্রতি রাজ্যের স্বরাষ্ট ও অর্থ দফতরের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে কমিশনের তরফে প্রসঙ্গটি তোলা হয়। তাতে সরকারের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার ব্যাখ্যা, “সারদার আমানতকারীদের মধ্যে গরিব-নিম্নবিত্তই বেশি। তাঁরা ইতিমধ্যে টাকা ফেরতও পেয়ে গিয়েছেন। বাকি যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সংখ্যায় কম। তাঁদের ঠিক গরিবও বলা চলে না।”
তাই ওঁদের কথা পরে ভাবলেও চলবে বলে মন্তব্য করেছেন ওই কর্তা। প্রশাসনের একাংশের অবশ্য অনুমান, সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত যে গতিতে এগোচ্ছে, সরকারের এ হেন সিদ্ধান্তের পিছনে তারও ভূমিকা থেকে থাকতে পারে। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সরকারি কর্তাটি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।
সারদা-কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে, ২০১৩-র এপ্রিলে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে সারদা-কমিশন গড়েছে রাজ্য সরকার। কমিশন গঠনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, সারদায় টাকা রেখে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের মূল আমানত (সুদ নয়) সরকার ফিরিয়ে দেবে। সে জন্য পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু সম্প্রতি জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৯২৯ জনকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তার পরে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আমানতকারীদের তালিকা বানিয়ে চেক মারফত টাকা মেটানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আমানতকারীদের চেক দেওয়া হয়েছে। শ্যামলবাবুর দাবি: প্রায় পাঁচ লক্ষ আমানতকারীর টাকা ফেরানো হয়েছে। সে বাবদ লেগেছে প্রায় ২৬৭ কোটি টাকা।
কিন্তু ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত আমানত করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা কী ভাবে টাকা ফেরত পাবেন?
এমতাবস্থায় কমিশনের কর্তারা কোনও দিশা দিতে পারছেন না। ঘটনা হল, সারদায় ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের গড়া পাঁচশো কোটির তহবিল থেকে এখনও খরচ হয়েছে ২৬৭ কোটি। প্রশ্ন উঠছে, তহবিলের বাকি টাকা এই সব আমানতকারীর ক্ষতিপূরণে খরচ করা হবে না কেন?
কমিশনের কর্তারা এ সম্পর্কে মুখ খুলতে চাননি। এ দিকে বকেয়া ঘরভাড়া নিয়েও তাঁরা কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন। গত বছর শ্যামল সেন কমিশন কাজ শুরু করার পরে রাজারহাটে ফিনান্সিয়াল সেন্টারে কয়েকটা ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, আবেদনপত্র মজুত রাখার জন্য। প্রায় সাড়ে ১৭ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল। যেগুলো গত দেড় বছর যাবৎ বস্তাবন্দি হয়ে ওই সব ঘরেই রাখা আছে। আর ঘরের ভাড়া বাবদ বকেয়া হয়েছে ৫৬ লক্ষ টাকা। হিডকো-র সেই পাওনা রাজ্য সরকার এখনও মেটায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy