Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধরা পড়ল ধূপগুড়ির মূল অভিযুক্ত

খবর আসতে স্বস্তি ফিরল পাড়ায়

ধূপগুড়ি কাণ্ডে বাকি চার অভিযুক্ত গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তে স্বস্তি ফিরল মধ্যপাড়ায়। পুজোর আগে থেকে এলাকায় সেই যে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে, আর থামেনি। এদিন এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায় এবং তৃণমূল ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ভৌমিকের গ্রেফতারের খবর পৌঁছতে অনেকে হাঁফ ছেড়ে জানান, এবার অন্তত শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন, রাতবিরেতে পুলিশের তলবে উঠতে হবে না।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে চন্দ্রকান্ত রায়। ছবি: সন্দীপ পাল।

জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে চন্দ্রকান্ত রায়। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

ধূপগুড়ি কাণ্ডে বাকি চার অভিযুক্ত গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তে স্বস্তি ফিরল মধ্যপাড়ায়। পুজোর আগে থেকে এলাকায় সেই যে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে, আর থামেনি। এদিন এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায় এবং তৃণমূল ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ভৌমিকের গ্রেফতারের খবর পৌঁছতে অনেকে হাঁফ ছেড়ে জানান, এবার অন্তত শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন, রাতবিরেতে পুলিশের তলবে উঠতে হবে না।

গত ১ সেপ্টেম্বর সালিশি সভা থেকে নিখোঁজ হয় এলাকার প্রতিবাদী মেয়ে বলে পরিচিত দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। পরের দিন ভোরে তাঁর নগ্ন দেহ রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনার পরে ধূপগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে শোক ও আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে। যন্ত্রণা হলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। এমনকী মৃত ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানাবেন, সেই সাহসও হয়নি অনেকের।

দেহ উদ্ধারের পরে ছাত্রীর বাবা ১৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। শুরু হয় ফিসফিসানিমৃত ছাত্রীর দিনমজুর পরিবার কতটা লড়াই করতে পারবে? অভিযুক্তেরা শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ কি অভিযুক্তদের ধরতে পারবে? ধন্দ আরও বাড়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর তহিদুল রহমান এবং হামিদার আলি নামে দুই নির্দোষ ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে। এলাকাবাসীরা তো বটেই, মৃত ছাত্রীর পরিবার থেকে অভিযোগ ওঠে, পুলিশ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে এবং এলাকায় অশান্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

ওই ছাত্রীর বাবা এদিনও বলেন, “পুলিশ রাতে এসে জানতে চেয়েছে, কেমন আছি? মেয়ে হারানোর পরে কেমন থাকব বলুন! অথচ অভিযুক্তরা এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের ধরার চেষ্টা হয়নি।” রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এরপরেও এলাকা আশার আলো দেখেনি কেন? রমেশ সরকার, অবিনাশ দাস নামে স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানান, সালিশি সভা যাঁরা ডাকলেন, তাঁরা শাসক দলের নেতা। অভিযুক্ত হওয়ার পরেও তাঁরা বাইরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

হতাশ হয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা নিজেও। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সুবিচার চেয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। প্রধান চার অভিযুক্ত চন্দ্রকান্তবাবু, গোবিন্দবাবু, সহিদুল ইসলাম এবং বিনোদ মণ্ডল গ্রেফতার হয়েছেন বলে রবিবার সকালে খবর পেয়ে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি তাঁর। দিন গড়াতে স্পষ্ট হয়ে যায় অবশেষে পুলিশ চন্দ্রকান্তবাবু ও গোবিন্দবাবুকে ধরেছে। ছাত্রীর বাবা বলেন, “খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে নিশ্চিত হয়ে ভাল লাগছে। তবে লড়াই চালিয়ে যাব। শেষ দেখব।”

শাসক দলের নেতাদের গ্রেফতারের পরে এলাকা ছিল থমথমে। এদিনও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে একই আলোচনা। স্থানীয় এক দোকান মালিকের কথায়, দোষীদের শাস্তি না হলে মেয়েটার আত্মা শান্তি পাবে না। চরম অস্বস্তিতে পড়লেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা গুড্ডু সিংহ বলেন, “আমরা একজনকেও যে আড়াল করার চেষ্টা করিনি, সেটা এলাকার বাসিন্দারা নিশ্চয়ই এবার বুঝবেন। বিচারে যা হবে সেটাই মেনে নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE