Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

খেত মজুরের কাজও করেছেন বাগদার এভারেস্ট জয়ী রমেশ

সংসারের অভাব দূর করতে এক সময়ে খেতমজুরের কাজ করেছেন। তখনও চোখে থাকত পাহাড় জয়ের স্বপ্ন। সব বাধাকে হারিয়ে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে এভারেস্টে উঠে সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন বাগদার প্রত্যন্ত গ্রাম আন্দুলপোতার ছেলে রমেশ রায়।

কোনও এক অভিযানে রমেশ রায়। ফাইল চিত্র।

কোনও এক অভিযানে রমেশ রায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

সংসারের অভাব দূর করতে এক সময়ে খেতমজুরের কাজ করেছেন। তখনও চোখে থাকত পাহাড় জয়ের স্বপ্ন। সব বাধাকে হারিয়ে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে এভারেস্টে উঠে সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন বাগদার প্রত্যন্ত গ্রাম আন্দুলপোতার ছেলে রমেশ রায়।

তবে এ বার দাদা ফিরলে ঝগড়ার জন্য তৈরি ভাই। তিনি জানান, নেপালের ভূমিকম্পের সময়ও দাদা বেসক্যাম্পে ছিলেন। সে সময় চিন্তায় বাড়ির সবার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এ বারও দুর্যোগ কিছু কম হয়নি। তার মধ্যেও ২১ মে রমেশ এভারেস্টের শৃঙ্গ ছুঁয়েছেন।

গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এভারেস্টের নামই শোনেননি কখনও। আজ সেই গ্রামের ছেলেই এভারেস্ট জয়ী। রমেশের জন্য আজ এই ছোট্ট গ্রামটি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।

কে রমেশ?

আন্দুলপোতার একটি ছোট্ট পরিবারের সন্তান রমেশ। বাবা পরেশবাবু খেত মজুরের কাজ করতেন। বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন রমেশ। সংসারের অভাব মেটাতে এক সময় দুই ভাইকেও খেত মজুরি করতে হয়েছে। এরপর বাজিৎপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে তিনি নদিয়ার ধানতলা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকেই তাঁর জীবনের পথ চলা শুরু হয়। পাহাড়ে যাওয়ার জন্য শুরু হয় প্রশিক্ষণ নেওয়া। চাকরি পাওয়ার পর তিনি তাঁর মা সুভদ্রাদেবী ও স্ত্রী পারমিতাকে নিয়ে বারাসতের হৃদয়পুরে চলে আসেন।

ভাই দীনেশ জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় জয় করার নেশা রমেশবাবুর অনেকদিনের। এ নিয়ে বাড়িতে অবশ্য আপত্তিও ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাহাড়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতেন রমেশবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা যখন মারা যান তখনও দাদা বাড়িতে ছিলেন না। পাহাড়েই ছিলেন। সে সময় দাদার শরীরও ভাল ছিল না। শুনেছি দাদার মৃত্যুও হতে পারত।’’

আন্দুলপোতাগ্রাম ছাড়ার পরেও রমেশবাবু বেশ কিছু বার সেখানে গিয়েছিলেন। গ্রামে তাঁদের বাড়িটি আজ আর নেই ঠিকই। কিন্তু নাড়ির টান আজও থেকে গিয়েছে। দীনেশবাবু ওই গ্রামের পাশেই বাজিৎপুরে থাকেন। তবে এ বার তিনি দাদার উপর অভিমানী। এভারেস্টে যাওয়ার আগে দাদার সঙ্গে মাত্র একবার ফোনে কথা হয়েছে। তারপর মা ও বৌদির কাছ থেকেই খবর নিয়েছেন দীনেশবাবু। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারবার পর্বত জয় করতে যাওয়া আর পছন্দ করছেন না দীনেশ। তিনি বলেন, ‘‘এই কারণে বিয়ে করতে চাইতেন না রমেশবাবু। মেয়ে দেখার কথা হলেই পালিয়ে বেড়াতেন। তাঁর কাছে পাহাড়ই সব ছিল।’’

রমেশবাবুর সঙ্গে ছোট বেলায় মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন স্থানীয় নাটাবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী। বন্ধুর এভারেস্ট ছোঁয়ার কথা মৃত্যঞ্জয়বাবু মঙ্গলবার টিভিতে দেখেছেন। যা দেখে সে দিন চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি মৃত্যুঞ্জয়বাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পাঠ্য বইতে পড়তাম এভারেস্ট জয় করেছেন তেনজিং নোরগে এডমণ্ড হিলারি। সেই এভারেস্ট এ বার জয় করল আমার ছোটবেলার বন্ধু। ভাবলেই এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE