কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত সুরজিৎ পালের মা। —নিজস্ব চিত্র
কারখানা থেকে ফিরে ভরসন্ধ্যায় পানশালার আড্ডায় বসেছিলেন পাঁচ যুবক বন্ধু। ব্যারাকপুর ও কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কাছাকাছি দু’টি পানশালায়, দু’দলে ভাগ হয়ে আসর জমান তাঁরা।
সোমবার গভীর রাতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পাঁচ বন্ধুর মধ্যে দু’জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আজমগড়ে পড়ে ছিল দু’টি দেহ। ধারালো অস্ত্রে তাঁদের খুন করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। খুনের তদন্তে নেমেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের খড়দহ থানা।
পুলিশ জানায়, নিহত দুই যুবকের নাম সুরজিৎ পাল (২৭) এবং শুভ্র আইচ (২৪)। তাঁদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অন্য তিন বন্ধু সুবীর মণ্ডল, সুমিত সিংহরায় এবং বিশ্বজিৎ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুরজিতের সঙ্গে সুবীর ও বিশ্বজিৎ এক্সপ্রেসওয়ের কুণ্ডুবাগানের কাছে একটি পানশালায় ছিলেন। ব্যারাকপুরে অন্য পানশালায় শুভ্রের সঙ্গী ছিলেন সুমিত। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা-প্রধান সি সুধাকর বলেন, “কেন খুন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।”
পুলিশি সূত্রের খবর, পাঁচ যুবকের পরিচয় দীর্ঘদিনের। পাঁচ জনই সিঁথিতে গয়না তৈরির একটি কারখানায় কাজ করতেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, গয়নার টাকার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদেই দুই যুবককে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। খুন করার জন্য পরিকল্পিত ভাবেই দু’দলে ভাগ হয়ে পানশালায় আড্ডা জমানো হয়েছিল, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। পানশালা দু’টির সিসিটিভি-র ফুটেজ জানাচ্ছে, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই যুবকেরা সেখানে ছিলেন।
নিহতদের পরিবার জানায়, কাজের সূত্রে সিঁথি মোড় এলাকাতেই থাকতেন পাঁচ বন্ধু। সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ পাঁচ বন্ধুই বাড়ি ফেরেন। টিটাগড় থানার মাঠপাড়ার পূর্বাঞ্চল এলাকায় সুরজিতের বাড়ি। তাঁর মা সুন্দরী পাল মঙ্গলবার জানান, সুবীরের মোটরবাইকেই বাড়ি ফেরেন সুরজিৎ। সুবীর শান্তিপুরের ফুলিয়ার বাসিন্দা। ওই সন্ধ্যায় সুরজিতের বাড়িতেই থেকে যান তিনি। দু’জনে খেয়েদেয়ে কিছু ক্ষণ ঘুমোন। রাত ৮টা নাগাদ ‘একটু ঘুরে আসছি’ বলে তাঁরা বেরিয়ে যান।
বিশ্বজিতের মা করুণা দাস অবশ্য দাবি করছেন, তাঁর ছেলে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু সিসিটিভি-র ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখে পুলিশের দাবি, বিশ্বজিৎও পানশালায় গিয়েছিলেন। সুবীর ওই রাতে বিশ্বজিতের জেঠতুতো ভাই নিতাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। নিতাই সিঁথিতে সুবীর-সুরজিৎদের সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করতেন। বিশ্বজিতের জেঠিমা বৃন্দা দাস বলেন, “সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আমার বাড়িতে আসে সুবীর। বলে, সুরজিতের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ও দেরি করছে দেখে চলে এসেছি।” কী ভাবে কী ঘটেছে এবং সুবীর ও বিশ্বজিৎ তাতে কী ভাবে জড়িয়ে পড়লেন, তা এখনও মাথায় ঢুকছে না ওই মহিলার।
কী ঘটেছে, টিটাগড় থানার চককাঁঠালিয়া গ্রামের বাড়িতে বসে তা বুঝে উঠতে পারছেন না শুভ্রের বাবা জয়দেব আইচও। তিনি বলেন, “শুভ্র তো বিকেলে ফিরে খেয়েদেয়ে দিব্যি ঘুমোচ্ছিল। রাত ৮টা নাগাদ সুমিত এসে ডেকে নিয়ে গেল। রাত ১১টার পর থেকে ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ হল না।” এ দিন সুমিতদের বাড়িতে তাঁর মা-বোনকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy