Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গানটাই ভাল করে গাইতে পারব তো, চিন্তায় বাবুল

ফুলের পথ নয়, তা আগেই বুঝেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির পথে যে কত কাঁটা, ক’দিনের অভিজ্ঞতায় তা হাড়েহাড়ে বুঝে গিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। একের পর এক অভিযোগ, পরের পর হেনস্থা। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী এখন সংশয়ে, যা নিয়ে তাঁর জীবন, সেই গান আর ভাল করে গাইতে পারবেন তো!

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

ফুলের পথ নয়, তা আগেই বুঝেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির পথে যে কত কাঁটা, ক’দিনের অভিজ্ঞতায় তা হাড়েহাড়ে বুঝে গিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। একের পর এক অভিযোগ, পরের পর হেনস্থা। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী এখন সংশয়ে, যা নিয়ে তাঁর জীবন, সেই গান আর ভাল করে গাইতে পারবেন তো!

“আমি তো গান গাই। মানুষকে আনন্দ দিই, দুঃখ নয়। অথচ, আমার সঙ্গে এ কী রকম আচরণ করা হচ্ছে! বুঝতে পারছি না এত নোংরামি কেন! এখন মনে হচ্ছে, এর পর গানটাই ভাল করে গাইতে পারব তো?”রবিবার মুম্বইয়ে ফোনে ধরা হলে আক্ষেপ ঝরে পড়ল গায়ক-প্রার্থীর গলায়।

তবে রাজনীতিতে নেমেছেন যখন, তখন ব্যথা পেলেও ঝড়ঝাপ্টার মোকাবিলা তো করতেই হবে। তাই গ্রেফতারি এড়াতে মুম্বই থেকে ফিরেই আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বাবুল। ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে বিজেপি জানায়। ১২ এপ্রিল রানিগঞ্জে বাবুলের প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বাবুল রানিগঞ্জের তৃণমূল নেতা সেনাপতি মণ্ডল ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। তৃণমূল বাবুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করে, তার ভিত্তিতে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। এ ছাড়াও সে দিন রানিগঞ্জ থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আধ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধের জন্য বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬, ১৪৩, ২৮৩ ধারা ও ১৯৫৬-এর জাতীয় সড়ক আইনের ৮ (বি) (২) ধারায় মামলা হয়।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, “আত্মসমর্পণের পরে কী হয় দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। যা করার আইনি পথেই করা হবে।” তিন দিন মুম্বইয়ে কাটিয়ে আজ, সোমবার আসানসোলে ফেরার কথা বাবুলের। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, “আইনি বিষয়ে আমার নিজস্ব কোনও মতামত নেই। দল যা পরামর্শ দেবে, সেই অনুযায়ী চলব।”

আইনজীবীরা জানান, পুলিশের দায়ের করা মামলায় বাবুলের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা, বেআইনি ভাবে জমায়েত, জনসাধারণের যাতায়াতের পথ অবরোধ ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসানসোল আদালতের আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সব ক’টি ধারাই জামিনযোগ্য। অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করে জামিন পেতে পারেন। তা না করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে।” পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, আত্মসমর্পণ না করলে বাবুলের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অস্ত্র আইনের মামলায় জেরার নামে গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তাঁকে কার্যত হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বাবুল। এখন পুলিশের দায়ের করা মামলাতেও সুযোগ পেলে তাঁকে হেনস্থা করা হতে পারে বলে বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা। তা এড়াতেই এই আত্মসমর্পণ করানোর সিদ্ধান্ত বলে বর্ধমান জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের মতো এটিও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বাবুল। তাঁর দাবি, সে দিন তৃণমূলের লোকজন বিজেপি কর্মীদের মারধর করায় আশপাশের লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। লোক জড়ো হয়ে যাওয়ায় যানজট হয়। তখন তিনিই সকলকে রাস্তা থেকে সরতে অনুরোধ করেন।

প্রথমে মদ্যপ অবস্থায় প্রচারের অভিযোগ, যা খারিজ হয়েছে। তার পরে তৃণমূলের অভিযোগে অস্ত্র আইনে মামলা। এর সঙ্গে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা। প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এ ভাবে একের পর এক অভিযোগে জড়ানো হয়েছে বাবুলকে। অন্য দলের নেতারাও মনে করছেন, বিজেপি-র এই তারকা প্রার্থীকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আসানসোলে বাবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর কথায়, “কাউকে পছন্দ না হলেই মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে। এটা এখন প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” এই কেন্দ্রের আর এক প্রার্থী কংগ্রেসের ইন্দ্রাণী মিশ্র বলেছেন, “তাঁর (বাবুল) সঙ্গে মতাদর্শে বিভেদ থাকতেই পারে। তবে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো সমর্থন করি না।”

আসানসোলের তৃণমূল নেতা ভি শিবদাসনের অবশ্য দাবি, “উনি অন্যায় করেছেন বলেই পুলিশ মামলা করেছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশকর্তারা মুখ খুলতে চাননি। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “এ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। পুলিশ নিয়ম মেনে কাজ করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sushanta banik babul supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE