আখতার খান
পাক চর সন্দেহে কলকাতায় ধৃত আখতার খান বছর পাঁচেক আগে পাকিস্তানে করাচি পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছিল। তাকে সেখানে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে রেখে কড়া জেরা করা হয়। এক-দু’দিন নয়, বেশ কয়েক দিন। তাকে জেরা করেই এই তথ্য পেয়েছেন লালবাজারের তদন্তকারী অফিসাররা।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তত দিনে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের খপ্পরে পড়ে গিয়েছে আখতার, পাকিস্তানি পাসপোর্টও জোগাড় করে ফেলেছে। তাই আখতার ভেবেছিল, ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় এবং পরিচয় ভাঁড়িয়ে পাকিস্তানে থাকার কারণেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে, ওই গ্রেফতারি আসলে চরবৃত্তির প্রশিক্ষণেরই অঙ্গ ছিল।
আখতারকে মধ্য কলকাতার কলুটোলা থেকে গত ১৪ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ২০১১ থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটি ও সেনা ছাউনি সম্পর্কে গোপন তথ্য ও নথি পাকিস্তানে পাচার করত আখতার। কিন্তু করাচিতে আখতারের ওই তথাকথিত গ্রেফতারির তথ্য জেনে তাজ্জব লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অফিসারেরা।
তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, আইএসআই যে আখতারকে কতটা পাকা চর হিসেবে তৈরি করেছে, করাচিতে ওই গ্রেফতারি-গ্রেফতারি খেলাই তার বড় প্রমাণ। গোয়েন্দাদের মতে, ভারতে চরবৃত্তি করতে পাঠানোর আগে আখতারকে পুরোদস্তুর তৈরি করে পাঠাতে চেয়েছিল আইএসআই। এ দেশে কোনও ভাবে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, কী ভাবে প্রবল চাপেও মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে— হাতেকলমে তার প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছিল ওই সাজানো গ্রেফতারির মধ্যেই। যে কারণেই ওই গ্রেফতারির আগে আখতারকে কিছুই জানানো হয়নি।
করাচিতে বেশ কিছু দিন পুলিশি হেফাজতে থেকে দফায় দফায় জেরা ও প্রবল মানসিক চাপ সহ্য করার পর আইএসআইয়ে আখতারের নিয়োগকর্তাদের মনে হয়, প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তার পর তারাই গিয়ে পুলিশি হেফাজত থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এসটিএফের দাবি, চরবৃত্তিতে এমন ভাবে প্রশিক্ষিত হওয়ার কারণেই লাগাতার জেরা করেও আখতারের পেট থেকে সে ভাবে কথা বার করা যাচ্ছে না। ফলে এ রাজ্যে আইএসআইয়ের নেটওয়ার্ক কতটা শিকড় ছড়িয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। এসটিএফ সূত্রে বলা হচ্ছে, কী ভাবে লুকিয়ে তথ্য জোগাড় করতে হবে, কী ভাবে সাব-এজেন্ট ও প্রয়োজনে মোটা টাকা দিয়ে সর্ষের মধ্যে ভূত ঢুকিয়ে চরবৃত্তির জাল ছড়াতে হবে এবং ধরা পড়লে কী ভাবে পুলিশি জেরায় মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে— চরবৃত্তির এই তিনটি ধাপই শেখানো হয়েছিল আখতারকে। অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল আখতারকে।
তবে আখতার মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে, এসটিএফের একাংশের এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় ও সেনা গোয়েন্দাদের একাংশ। এমনকী, কলকাতা পুলিশেরও একাংশ বলছেন, তদন্তে না-এগোতে পেরেই চরবৃত্তির কড়া প্রশিক্ষণের কাহিনি বলা হচ্ছে। সেনা গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছেন, পৃথিবীর যে কোনও গুপ্তচরের পেট থেকেই কথা বার করা শক্ত। তা সত্ত্বেও ঠিকঠাক জেরায় তথ্য পাওয়া যায়।
আখতারকে গ্রেফতার করার দু’দিন পর তার ভাই জাফরকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, দু’ভাই দীর্ঘদিন পাকিস্তানে ছিল। আখতার সে দেশে বিয়ে করে সংসারও পেতেছিল। কাল, রবিবার তাদের আদালতে হাজির করানোর কথা। অথচ দু’জনের কাছ থেকেই তেমন তথ্য মেলেনি।
এসটিএফের এক কর্তার দাবি, আখতার কী কী তথ্য এ যাবৎ পাচার করেছে, তার ভিত্তিতে কোনও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে কি না, তা জানতে আখতারকে মুখ খোলানোটা জরুরি। ‘‘তা না-করতে পারলে আগামী দিনে বিপদ আঁচ করা মুস্কিল হবে,’’ বলছেন ওই এসটিএফ কর্তা। তবে আখতার মুখ না-খেলায় তদন্তের সে ভাবে অগ্রগতি হয়নি। সে জন্যই আখতারের আইনজীবী ফজলে আহমেদ খান দাবি করছেন, ‘‘আখতার পাকিস্তানের এজেন্ট, এই অভিযোগটাই মিথ্যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy