Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চ্যানেল-কারখানা কিনতে কত খরচ সুদীপ্তর, খুঁজছে সিবিআই

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) রুজু করা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন সোমবার। আর তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই, বুধবার সিবিআইয়ের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষ। তাঁর সংস্থা জেনাইটিসের অধীনে থাকা চ্যানেল টেন এবং গ্লোবাল অটোমোবাইলস কারখানা কিনেছিল সারদা। সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সেই সংস্থা দু’টি কেনা নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগও করেছিলেন সুদীপ্ত সেন।

সল্টলেকে সিবিআইয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন শান্তনু ঘোষ, রাজেশ বাজাজ এবং সন্ধির অগ্রবাল। বুধবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সল্টলেকে সিবিআইয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন শান্তনু ঘোষ, রাজেশ বাজাজ এবং সন্ধির অগ্রবাল। বুধবার শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) রুজু করা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছিলেন সোমবার। আর তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই, বুধবার সিবিআইয়ের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষ। তাঁর সংস্থা জেনাইটিসের অধীনে থাকা চ্যানেল টেন এবং গ্লোবাল অটোমোবাইলস কারখানা কিনেছিল সারদা। সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সেই সংস্থা দু’টি কেনা নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগও করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। সারদা-কর্তার অভিযোগ ছিল, লোকসানে চলা মোটরবাইকের কারখানা শান্তনু তাঁকে ভুল বুঝিয়ে, বেশি দামে বিক্রি করেছেন। তদন্তকারীরা জানান, ওই দু’টি সংস্থা বিক্রি করা নিয়েই এ দিন শান্তনুবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে এ দিন রাজেশ বজাজ নামে এক ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতরে হাজির হন শান্তনুবাবু। সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলার পর সন্ধ্যা সওয়া সাতটা নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরোন তিনি। তবে ঢোকা বা বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি, প্রশ্ন করলেও জবাব দেননি।

সিবিআইয়ের এ হেন তৎপরতার মধ্যে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এ দিন রাজ্যের শাসকদলকে ফের একহাত নিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এ দিন তিনি বসিরহাটে বলেন, তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ হাসপাতালের বিছানায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে দিল্লিতে রাজনাথ সিংহের কাছেও দরবার করতে ছুটছেন। তবে অধীরবাবুর বক্তব্য, “কয়েক দিনের মধ্যেই বড় বড় রাঘব বোয়াল জালে পড়বে।”

এ দিন আলিপুর আদালতে সিবিআই ফের হেফাজতে নিতে চায় ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালকে। আদালত সন্ধিরকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

সারদা তদন্তে সিবিআই বারবারই সুদীপ্তর বিভিন্ন সংস্থা কেনা নিয়ে তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করছে। সে জন্য অনেকে ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি লেখা সুদীপ্তর চিঠিটি ধরে খোঁজখবর করছে তারা। সেই চিঠিতে সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, ৩০ কোটি টাকায় শান্তনুর কাছ থেকে চ্যানেল টেন কেনেন তিনি। তার পরে কেনেন গ্লোবাল অটোমোবাইলস। জেরায় সুদীপ্ত জানান, ওই সংস্থা কেনার সময়ে তিনি শান্তনুবাবুকে পাঁচ কোটি টাকা দেন। তবে সুদীপ্তর বক্তব্য, শান্তনুর কাছে ঋণ বাবদ ব্যাঙ্কের প্রচুর টাকা পাওনা ছিল। সে জন্য ওই টাকা ছাড়াও ব্যাঙ্ক ঋণ মেটানো বাবদ তিনি আরও ২৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই সংস্থার কর্মীদের বকেয়া বেতন-সহ বিভিন্ন খরচ বাবদ আরও ২০ কোটি টাকা খরচ করেন। পরে তিনি দেখেন, কাগজে-কলমে গ্লোবাল অটোমোবাইলস-এর যে উৎপাদন ক্ষমতা দেখানো হয়েছিল, বাস্তব তার ধারকাছেও ছিল না। সিবিআই জানিয়েছে, এই তথ্যগুলি খতিয়ে দেখতেই এ দিন তারা শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এনই বাংলা চ্যানেল সংক্রান্ত লেনদেন নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে সিবিআই। সুদীপ্তর দাবি অনুযায়ী, ওই চ্যানেল কেনা নিয়ে ২৮ কোটি টাকায় সুদীপ্তর চুক্তি হয়েছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে। ওই টাকা মাতঙ্গকে দিয়েছিলেন বলেও সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন। যদিও ইডি ও শ্যামল সেন কমিশনে মাতঙ্গ জানান, চুক্তির সেই টাকা তিনি ফেরত দিয়েছিলেন। সিবিআই অফিসারেরা জেনেছেন, ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী ছিলেন রাজেশ বজাজ নামে এক ব্যক্তি। মাতঙ্গ সেই টাকা চেক মারফত রাজেশকে ফেরত দিয়েছিলেন বলে জানান। কিন্তু সেই টাকা রাজেশ সুদীপ্তকে দিয়েছিলেন কি না, তা জানার জন্য এ দিন দুপুর থেকে তাঁকে টানা কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে রাজেশ বলেন, “মাতঙ্গের সঙ্গে সুদীপ্তর চুক্তির সময় আমি এনই বাংলার সিইও ছিলাম। তাই, ওই চুক্তিতে আমার নাম রয়েছে। তবে এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আমি আগেই বিধাননগর কমিশনারেটকে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case ed cbi saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE