রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে সাহায্য করার জন্য দফতরে চার জন অফিসার থাকার কথা। সচিব, সহকারী কমিশনার, যুগ্মসচিব এবং উপসচিব।
রয়েছেন এক জন— শুধুই সচিব।
অথচ গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ও এঁরা সবাই ছিলেন। সহকারী কমিশনার তখন অবসর নিলেও তাঁকে ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ পদ দিয়ে রেখে দিয়েছিলেন তৎকালীন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার তাঁর কার্যকালের মেয়াদ আর বাড়াতে পারেননি। ওই পদে নতুন কোনও লোকও আনতে পারেননি তিনি। এবং এই সময়ের মধ্যে কমিশনের যুগ্মসচিব ও উপসচিব অবসর নিলেও সেখানে নতুন লোক নিয়োগ করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনে রয়েছে ৩০টি পদ। তার মধ্যে ১৩টি পদ শূন্য। সদ্য অনুষ্ঠিত ৯২টি পুরসভার ভোটের সময়ে নিজের দফতরের এই দিশেহারা অবস্থা দেখে বিরক্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘কর্মী নেই। সরকারকে বার বার বলেও লাভ হচ্ছে না। কমিশনের কাজ চালানোই বড় দায়।’’ পরিস্থিতি সামাল দিতে কমিশনে এক জন ‘পরামর্শদাতা’ নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। পুরভোটের সময়ে দেখা গিয়েছে, তাঁর কার্যত কোনও কাজই নেই! সপ্তাহ খানেক আগে ওই পরামর্শদাতাকেও সরিয়ে দিয়েছে নবান্ন।
এই ডামাডোলের মধ্যেই সাতটি পুরসভার ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু মামলার প্রথম দিন কমিশনের কোনও আইনজীবী কোর্টে হাজির ছিলেন না। কাল, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য হলেও রাজ্য সরকারের দুই দুঁদে আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং সলমন খুরশিদের বিপক্ষে সওয়াল করার জন্য কাকে নিয়োগ করা হবে— সেই সিদ্ধান্ত শনিবার পর্যন্ত নিতে পারেননি কমিশনার। মামলার তদারকি করতে দিল্লি যাননি সুশান্তরঞ্জন নিজে কিংবা কমিশনের সচিব। গিয়েছেন এক বড়বাবু। এই অবস্থায় স্বাবাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মামলায় কমিশন কি রাজ্য সরকারকে ওয়াকওভার দিতে চাইছে?
কমিশনারের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র অবশ্য বলছেন— নির্বাচনের কাজ জানা লোক বলতে কমিশনে এখন সবেধন নীলমণি ওই বড়বাবু। তাঁকে দিল্লি না পাঠিয়ে উপায় ছিল না কমিশনের। ওই সূত্রটি বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে মীরা পাণ্ডের সঙ্গে চার জন শীর্ষ অফিসার ছিলেন। তাঁদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে মামলার কাজে দিল্লি যেতে পেরেছিলেন মীরাদেবী এবং তৎকালীন সচিব তাপস রায়। এ বার আস্থাভাজন এমন কাউকে কমিশনার পাননি, যাঁর উপরে দায়িত্ব দিয়ে তিনি এবং সচিব দিল্লি যেতে পারেন।’’
বিরোধীরা অবশ্য বিষয়টিকে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, যে ভাবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পরিকল্পনা মাফিক ঠুঁটো করে দিয়েছে, একই ভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও পঙ্গু করে রাখাটাই তাদের উদ্দেশ্য।
কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমশ ক্ষমতাহীন, অকেজো করে রাখার জন্য যা-যা করা দরকার, সেটাই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
একই বক্তব্য সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিংহের আবার কটাক্ষ— এটা এখন আর রাজ্য নির্বাচন কমিশন নেই, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কমিশন’-এ পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের কোনও নেতা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা কমিশনের লোকাভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তিনি তার
দায় চাপিয়েছেন সুশান্তরঞ্জনের উপরেই। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শূন্য পদ পূরণের জন্য মীরা পাণ্ডে যে ভাবে দরবার করতেন, সেই উদ্যোগ সুশান্তরঞ্জন কখনও দেখাননি।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে অবসর নেওয়া সহ-কমিশনারকে ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ পদে নিয়োগ করা নিয়ে মীরাদেবী যে তৎপরতা দেখিয়েছিলেন, সুশান্তবাবু তার সিকি ভাগ দেখালেও পরিস্থিতি এমন হতো না, বলছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy