Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র-শিক্ষক বিমুখ, নিজের তালুকে একঘরে অভিজিৎ

শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু যেটা তাঁর কর্মক্ষেত্র, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আগাপাশতলাই সরে গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। এলে দেখতেন, তিনি যে-প্রতিষ্ঠানের প্রধান, একটি রাতের ঘটনা সেখানেই তাঁকে কার্যত একঘরে করে দিয়েছে।

প্রতিবাদ। পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

প্রতিবাদ। পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৭
Share: Save:

শিক্ষামন্ত্রীকে তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু যেটা তাঁর কর্মক্ষেত্র, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আগাপাশতলাই সরে গিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। এলে দেখতেন, তিনি যে-প্রতিষ্ঠানের প্রধান, একটি রাতের ঘটনা সেখানেই তাঁকে কার্যত একঘরে করে দিয়েছে।

ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা আর শিক্ষাকর্মী-গবেষকদের নিয়েই কাজ উপাচার্যের। অভিজিৎবাবুর প্রতি বিমুখ হয়ে উঠেছে তিনটি শিবিরই।

• উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা এ দিন দফায় দফায় মিছিল-মিটিংয়ের সঙ্গে ক্লাস বয়কটও শুরু করেছেন। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনোয়ার শাহ রোড পর্যন্ত মিছিল করেন পড়ুয়ারা।

• বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (জুটা) জানায়, উপাচার্য দায়িত্ব থেকে সরে না-দাঁড়ালে পঠনপাঠন বা প্রশাসনিক কোনও কাজেই যুক্ত হবে না তারা। আজ, শুক্রবার জুটা-র প্রতিনিধিরা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন।

• একই দাবিতে পা মিলিয়েছে শিক্ষাকর্মী এবং গবেষকদের একাধিক সংগঠনও।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। পরীক্ষা ছিল অ্যাডাল্ট অ্যান্ড কন্টিনিউয়িং এডুকেশন বিভাগের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১০৫ জনের মধ্যে ওই পরীক্ষা দেন মাত্র পাঁচ জন। ফলে ওই পরীক্ষা বৈধ বলে ধরা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পড়ুয়াদের ঘেরাও-অবস্থান তুলতে উপাচার্যের পুলিশ ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্তের প্রতিক্রিয়ায়। সিদ্ধার্থবাবুর মতে মঙ্গলবার রাতের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। শুধু তা-ই নয়, সহ-উপাচার্য স্পষ্টই বলেছেন, “পুলিশ ডাকার ব্যাপারে মঙ্গলবার এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে কথা হয়নি।” এ ব্যাপারে উপাচার্য নিজেও কখনও অস্পষ্টতা রাখেননি। তিনি আগেই জানিয়েছেন, প্রাণ বিপন্ন হওয়ায় তিনিই পুলিশ ডেকেছিলেন। এবং পুলিশ তাঁকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।

পুলিশ-প্রসঙ্গ টেনে সহ-উপাচার্য এ দিন বলেন, “যাদবপুরে দীর্ঘ শিক্ষক-জীবনে এমন অনেক আন্দোলনের সম্মুখীন হয়েছি। প্রতি বারেই সমাধান হয়েছে কথা মাধ্যমে। আমার বিশ্বাস, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায়।” কিন্তু তার বদলে যা হল, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হল বলে সিদ্ধার্থবাবু

মনে করেন। ‘উপাচার্যের পদত্যাগ চাই’ স্লোগান লিখে যাদবপুরের শিক্ষাকর্মী-গবেষকদের কিছু সংগঠনও বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলান। মঙ্গলবার রাতের পুলিশি নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকুরিয়া থেকে মিছিল করে এসএফআই।

যোগ দেন বামপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এমনকী ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্যও ছিলেন এই মিছিলে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি-খড়্গপুরের মতো প্রতিষ্ঠানেও প্রতিবাদ হয়েছে।

সকালে যাদবপুরের গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও, এবিভিপি এবং বিজেপি-র মহিলা শাখা। ঘটনার যাবতীয় দায় উপাচার্যকে স্বীকার করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠন আবুটা। বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেছে এই সংগঠন। একই দাবি জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। যাদবপুরের উপাচার্যের ভূমিকার নিন্দা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “যাদবপুরের ঘটনা নারকীয় এবং বর্বরোচিত। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, এ রাজ্যে শিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।” সিপিআই নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক প্রবীর দেব এ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রদের দেখতে যান। পরে তাঁরা মিছিলে যোগ দেন।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এমন অশান্তির আবহে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন কাদের নিয়ে? তিনি শাসক দলের যত ঘনিষ্ঠই হোন না কেন, এত বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে তাঁর যে সব স্তরের সহযোগিতা যে দরকার, সেই বিষয়ে কারও মনে সংশয় নেই। সুকান্ত চৌধুরীর মতো বিশিষ্ট অধ্যাপকও এ দিন বলেন, “দেখা যাচ্ছে, সহ-উপাচার্য থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, সকলেই ওঁর (উপাচার্যের) প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। এখন উনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন কী ভাবে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।”

অভিজিৎবাবু অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, পদত্যাগের কথা তিনি ভাবছেন না। এ দিনও তিনি অনড়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE