Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছ’দিন কাজের দাবিতে কর্মবিরতি নফরচাঁদ জুটমিলে

সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিলের পরে পুজোর মুখে এ বার কাজ বন্ধ হয়ে গেল কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিলে। তবে, নফরচাঁদে শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। সপ্তাহে চার দিনের পরিবর্তে অন্তত ছ’দিন কাজের দাবিতে রবিবার বিক্ষোভ দেখিয়ে কর্মবিরতি শুরু করলেন শ্রমিকেরাই। মিলের শ্রমিক সংগঠনগুলিও এই কর্মবিরতিকে সমর্থন করেছে।

নফরচাঁদ জুটমিলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। রবিবার সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি

নফরচাঁদ জুটমিলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। রবিবার সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকিনাড়া শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিলের পরে পুজোর মুখে এ বার কাজ বন্ধ হয়ে গেল কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিলে। তবে, নফরচাঁদে শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। সপ্তাহে চার দিনের পরিবর্তে অন্তত ছ’দিন কাজের দাবিতে রবিবার বিক্ষোভ দেখিয়ে কর্মবিরতি শুরু করলেন শ্রমিকেরাই। মিলের শ্রমিক সংগঠনগুলিও এই কর্মবিরতিকে সমর্থন করেছে।

ওই মিলে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, বেতন বৃদ্ধি বা পুজোর বোনাস নিয়ে দাবি-দাওয়া থাকলেও চটশিল্পে মন্দার কথা মাথায় রেখে তাঁরা আন্দোলনে যাননি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কাজের দিন কমিয়ে দেওয়ায় কাজের ভিত্তিতে টাকার (নো-ওয়ার্ক, নো-পে) হিসেবে থাকা অধিকাংশ শ্রমিকের মাথায় হাত পড়েছে। কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য করছেন না।

মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, মন্দার জন্যই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ মিলে তিনটে শিফ্ট বন্ধ করে দু’টি শিফ্টে উৎপাদন চালু রয়েছে। সেখানে নফরচাঁদে এখনও তিন শিফ্টে কাজ চলছে। সাপ্তাহিক সময়ের হিসেবেও অন্য মিলগুলির মতেই এই মিলও খোলা থাকছে। জুটমিলের পার্সোনাল ম্যানেজার বলেন, “বরাত কম থাকায় ফেব্রুয়ারি থেকেই মিলে সপ্তাহে চার দিন কাজ হচ্ছে। এত দিন পরে কেন শ্রমিকেরা নতুন দাবি তুলছেন বুঝতে পারছি না।”

উৎপাদন বাজারজাত করা নিয়ে এমনিতেই রাজ্যের জুটমিলগুলির বেহাল দশা। গত ছ’মাস ধরে বরাতও যে সে ভাবে মিলছে না, মেনে নিয়েছে চটকলগুলির সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠন থেকে মালিক সব পক্ষই। সরকারের কাছে আর্জিও জানিয়েছেন বারবার। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। উৎপাদন-সহ আনুষঙ্গিক খরচ বাঁচাতে গঙ্গার দু’পাড়ের শতাব্দীপ্রাচীন জুটমিলগুলির মধ্যে অনেকগুলিতেই তাই কাজের দিন কমিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে শ্রমিক অসন্তোষও মাথাচাড়া দেয়।

কাজের দিন কমানো হচ্ছে, এমনই এক রটনার জেরে গত জুনে ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক জুটমিলের সিইও-কে মিলের মধ্যেই পাথর-রড দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধে। বেশ কিছু দিনের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে যায় ওই মিলে। তার পরেও শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কখনও কাজ বন্ধ হয়েছে ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া জুটমিলে, কখনও শ্যামনগরের গৌরীশঙ্কর জুটমিলে বা জগদ্দলের অকল্যান্ড বা হাওড়ার হনুমান জুটমিলে। পরে সেই সব মিল খুললেও সঙ্কট কাটেনি। দিন কয়েক আগে শ্রমিক অসন্তোষ ও লোকসানকে কারণ দেখিয়ে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিল কর্তৃপক্ষ। সেই মিল এখনও খোলেনি।

অনেক বার নানা কারণে বন্ধ হলেও চলতি বছরে নফরচাঁদে কাজ বন্ধ হয়ে গেল এই প্রথম। কর্মবিরতির ফলে সমস্যা হবে বলে মেনে নিয়েছেন শ্রমিকেরা। তা সত্ত্বেও অবস্থানে অনড় থাকছেন তাঁরা। মিলের বয়ন বিভাগের এক শ্রমিক বলেন, “বোনাস, বেতন আটকে যেতে পারে জানি। তবু কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। রুটিরুজিতে টান পড়ছিল।” ‘ফিনিশিং’ বিভাগের শ্রমিক পাপ্পু সাউও বলেন, “এক শ্রমিক কাজ পাবেন, অন্য জন বসে থাকবেন, এটা চলতে পারে না।”

বিজেপি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-এর নেতা মহেশ চৌরাশিয়া বলেন, “সপ্তাহে চার দিন কাজ হওয়ায় বহু শ্রমিক নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। কর্মদিবস বাড়ানোর জন্য শ্রমিকেরা ন্যায্য দাবিই তুলেছেন।” এআইটিউসি নেতা রবীন্দ্রনাথ কুণ্ডুও বলেন, “কর্মবিরতিকে সমর্থন করছি। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলেই কিছু কর্মী ও শ্রমিক ফাঁকি দিচ্ছেন, কেউ বা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nafarchand jutemill lockout kakinara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE