Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জনপথে বিদ্রোহ ডালুর, কংগ্রেসে বিভ্রান্তি চরমে

সারদা-কাণ্ডে তৃণমূল সরকারের দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন কপিল সিব্বল। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী ক্ষোভের পরোয়া না-করে এমন সিদ্ধান্তের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু প্রদেশের অন্দরের বেহাল দশাও ক্রমশ প্রকট হচ্ছে! রাজ্যে যে ভাবে কংগ্রেস চলছে, তাতে আখেরে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে বলে হাইকম্যান্ডের দ্বারস্থ হচ্ছেন একের পর এক নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে তৃণমূল সরকারের দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন কপিল সিব্বল। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী ক্ষোভের পরোয়া না-করে এমন সিদ্ধান্তের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু প্রদেশের অন্দরের বেহাল দশাও ক্রমশ প্রকট হচ্ছে! রাজ্যে যে ভাবে কংগ্রেস চলছে, তাতে আখেরে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে বলে হাইকম্যান্ডের দ্বারস্থ হচ্ছেন একের পর এক নেতা।

প্রদেশ কংগ্রেস পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিকতম বিদ্রোহটি করেছেন মালদহের সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। গত ২৪ জানুয়ারি সরাসরি সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে গিয়ে চিঠি দিয়ে এসেছেন তিনি। যেখানে ডালুবাবু লিখেছেন, ‘রাজ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা প্রতিদিন কমছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। তার ফায়দা নিতে পারছে না কংগ্রেস। নিজেদের দোষে কংগ্রেস যে সুযোগ নষ্ট করছে, তার ফায়দা তুলছে বিজেপি। বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির এমন বাড়বাড়ন্ত বিপজ্জনক’। প্রদেশ স্তরের যে সব বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, ডালুবাবু তাঁদের এক জন। প্রয়াত বরকত গনি খানের খাস তালুক মালদহে তাঁরই পরিবারের লোকজনকে গুরুত্ব না-দিয়ে অধীর নিজের মতো দল চালানোর চেষ্টা করছেন বলে ডালুবাবুর অভিযোগ। মালদহে সম্প্রতি তাঁর সময়-সুযোগকে আমল না দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কর্মিসভা আয়োজনের পরেই ক্ষুব্ধ ডালুবাবু দলের অন্দরে বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম’-এর কাছে গিয়ে তিনি এ বার হেস্তনেস্ত করে ছাড়বেন! তাঁর চিঠি সেই ক্ষোভেরই পরিণাম বলে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা।

কিন্তু শুধু প্রদেশ সভাপতি বদলালেই কি কংগ্রেসের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আনন্দবাজারের কাছে ডালুবাবুর ব্যাখ্যা, “আমি তো তেমন কথা বলিনি! আমি হাইকম্যান্ডকে বলেছি, এখন রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে কংগ্রেসকে চাঙ্গা হতেই হবে। তার জন্য যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে। সব বর্ষীয়ান নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” ডালুবাবুর দাবি, অমুকের বদলে তমুককে সভাপতি করা হোক, এমন কোনও দাবি নিয়ে তিনি ১০ জনপথে যাননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর মতামত চেয়েছিলেন বলেই তিনি তা দিয়েছেন। বিজেপির উত্থান যে দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ডেকে আনতে পারে, সেই ব্যাপারেও অবহিত করেছেন হাইকম্যান্ডকে।

হাইকম্যান্ডের ভূমিকা অবশ্য যথেষ্ট বিভ্রান্তিতেই রেখেছে রাজ্য কংগ্রেসকে! বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে যখন আন্দোলন করতে চাইছেন অধীর, তখন সিব্বল-কাণ্ড তাঁদের বিড়ম্বনায় ফেলছে। আবার রাজ্যে দলের মধ্যে ক্ষোভ-অভিমানেরও কোনও স্থায়ী নিরসন হচ্ছে না। দলের একাংশের বক্তব্য, সংসদে কট্টর বিজেপি-বিরোধিতার জন্য এখন তৃণমূলকে খুবই পছন্দ সনিয়ার। তাই ভেবেচিন্তেই তিনি সিব্বলকে ওই মামলা থেকে সরে আসার নির্দেশ দেননি। দলের এই অংশের মতে, এক দিকে তৃণমূলের মুখ চেয়েই হাইকম্যান্ডের সক্রিয় সহযোগিতা নেই। আবার অন্য দিকে প্রদেশ স্তরে প্রতিনিয়ত বিদ্রোহ এই দুইয়ের চক্রব্যূহে অধীর আটকা পড়ে যাচ্ছেন!

ডালুবাবুর অভিযোগের খবর অবশ্য অধীরের কাছে নেই। তবে এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তাঁর দাবি, তিনিও সর্ব স্তরে সম্মিলিত কাজেই বিশ্বাসী। দলের সভার অবসরে কোচবিহার থেকে বুধবার অধীর একই সঙ্গে বলেছেন, “আমার কথা খুব পরিষ্কার। আমি সবাইকেই ডাকব। কিন্তু কেউ না-এলে একাই চলব!”

প্রদেশ সভাপতির এই সবাইকে ডাকার দাবির সঙ্গে আবার একমত নন দলেরই একাধিক নেতা! প্রথমে যা ছিল অধীরের সঙ্গে আব্দুল মান্নানের বিবাদ, এখন তা ছড়িয়ে গিয়েছে ডালু, দীপা দাশমুন্সি, সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়াদের মধ্যেও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা যেমন বলছেন, “রাজ্যে প্রতিবাদের হাতিয়ারের তো অভাব নেই। কিন্তু সে সব কাজে লাগাতে গেলে যে সময়োপযোগী এবং উপযুক্ত সক্রিয়তা দরকার, তা আমাদের নেই। এর জন্য প্রয়োজন ছিল সম্মিলিত প্রয়াস। কিন্তু সেই যোগাযোগ এখন ছন্নছাড়া!” একদা অধীরের ঘনিষ্ঠ দোসর হলেও ক্ষোভে-অভিমানে এখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন শঙ্কর সিংহ। দীপা, মান্নান, ডালুবাবুদেরও ক্ষোভ রাহুল গাঁধী দিল্লিতে প্রদেশ নেতাদের ডেকে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন সম্মিলিত কাজের জন্যই। কিন্তু তার প্রতিফলন রাজ্যে দেখা যাচ্ছে কই?

দলের কাজে তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে দিল্লির কাছে নালিশ জানাতে শুরু করেছেন প্রদেশের কিছু সাধারণ সম্পাদকও। সরব একাধিক জেলা সভাপতিও। যদিও অধীরের দাবি, ডাকার পরেও কেউ না-এলে তাঁর কী করার আছে? গোটা পরিস্থিতি দেখে প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি মানসবাবু বলছেন, “বেশ কিছু নেতা ইদানীং দূরে দূরে থাকছেন। তাঁদের কাছে টানার চেষ্টা করতে হবে। আর সাধারণ সম্পাদকদের এখন থেকেই জেলার দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে।”

বলছেন বটে। কেউ শুনছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam dalu kapil sibbal congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE