Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলে ডুবে জেলায় ক্ষতি ছ’শো কোটির

বন্যা পরিস্থিতির জেরে এ বার বড় বিপর্যয়ের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুর। এখনও পর্যন্ত সার্বিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে প্রায় ৬০০ কোটি ছুঁইছুঁই। বন্যাপ্রবণ জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও গত কয়েক বছরে এত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরকে। এখনও বহু এলাকা ডুবে রয়েছে। জল নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে, দিন কয়েকের মধ্যে ক্ষতির পরিমান ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।

বৃষ্টি কমলেও নামেনি জল। এখনও ভাসছে ঘাটালে নারাজোলের কাছে সামাট (বাঁ দিকে) ও কেশপুরের বাঁশগেড়িয়া গ্রাম (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ।

বৃষ্টি কমলেও নামেনি জল। এখনও ভাসছে ঘাটালে নারাজোলের কাছে সামাট (বাঁ দিকে) ও কেশপুরের বাঁশগেড়িয়া গ্রাম (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

বন্যা পরিস্থিতির জেরে এ বার বড় বিপর্যয়ের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুর। এখনও পর্যন্ত সার্বিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে প্রায় ৬০০ কোটি ছুঁইছুঁই। বন্যাপ্রবণ জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও গত কয়েক বছরে এত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরকে। এখনও বহু এলাকা ডুবে রয়েছে। জল নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে, দিন কয়েকের মধ্যে ক্ষতির পরিমান ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
শেষ ২০১৩ সালেও জেলায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে তার ভয়াবহতা এতটা ছিল না। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “অন্য বারের থেকে এ বার একটু বেশি এলাকাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। ফলে, ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। তবে চন্দ্রকোনা, দাসপুরের মতো এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে। ভারী বৃষ্টি না হলে আর হয়তো বড় ক্ষয়ক্ষতি হবে না। ত্রাণ বিলির সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।” কিছু এলাকায় নৌকোয় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক। ত্রাণ পৌঁছতে জেলা প্রশাসন তত্‌পর রয়েছে বলে দাবি জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষেরও। ভারতীদেবীর বক্তব্য, “দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে।” জল নামলে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য সড়ক, অঙ্গনওয়াড়ি, প্রাথমিক স্কুল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।
জলাধারের ছাড়া জল আর একটানা অতি ভারী বৃষ্টির জেরে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি সঙ্কটজনক তৈরি হতে শুরু করেছে ২৮ জুলাই থেকে। ওই দিন থেকে বিক্ষিপ্ত এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়। অন্য দিকে, জলাধারের ছাড়া জলও নদীতে এসে মিশতে থাকে। ফলে, জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে। একের পর এক এলাকা বানভাসি হয়।
জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৮টি ব্লকেই কমবেশি বন্যার প্রভাব পড়েছে। ৮টি পুরসভার মধ্যে ৬টি দুর্যোগের কবলে। বিদ্যুতের বেশ কিছু খুঁটি উপড়ে লাইন ছিঁড়ে গিয়েছে। ঘাটালের একটি সাব-স্টেশন এখনও জলের তলায়। কিছু এলাকায় বিদ্যুত্‌বাহী তার জলস্তরের ঠিক উপরে থাকায় রাতে বিদ্যুত্‌ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জেলার বিদ্যুত্‌ কর্মাধ্যক্ষ অমূল মাইতি বলেন, “সার্বিক ভাবে জেলায় বিদ্যুত্‌ পরিষেবা সচলই রয়েছে। কিছু এলাকায় খুঁটি পড়ে গিয়েছিল, লাইন ছিঁড়ে গিয়েছিল। যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় এই সব মেরামত করা হয়েছে। সার্বিক ভাবে জেলায় বিদ্যুত্‌ পরিষেবা ব্যাহত হয়নি।”

এখনও পর্যন্ত বন্যায় জেলার ৭,৯৮৫টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১৯,৩৩,০৭৩। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পরিস্থিতির মোকাবিলায় জেলায় সব মিলিয়ে ১৯৮টি নৌকা এবং ৭টি স্পিড বোট নামানো হয়। ১১৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়। শিবিরে রাখা হয় সব মিলিয়ে ২১,০২৩ জন দুর্গতকে। ২০,৫১১ জন দুর্গতকে জলবন্দি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। জলবন্দি এলাকার মানুষদের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয় ৮৬টি। পশুদের জন্য ৩৫টি মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে।

এই দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত জেলায় ন’ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জলে ভেসে মারা গিয়েছে ৩ জন, বজ্রপাতে মারা গিয়েছে ৪ জন, দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছে এক জন এবং সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাষের। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণটা টাকার অঙ্কে প্রায় প্রায় ৪৮২ কোটি।

পরিসংখ্যান বলছে, এ বার ধান চাষ হয়েছিল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৪১ হাজার হেক্টরে চাষ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ৭৮ হাজার হেক্টর জমির চাষ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭০ কোটি টাকা। সব্জি চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফুল চাষ হয়েছিল ১ হাজার হেক্টর জমিতে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০০ হেক্টর জমিতে। এই দুই ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১১২ কোটি টাকা। জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “বিস্তীর্ণ এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গিয়েছিল। ভারী বৃষ্টি না হলে হয়তো এতটা ক্ষয়ক্ষতি হত না। রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব ধরণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।”

দিন কয়েক পরে জল হয়তো নেমে যাবে। তবে আগামী এক বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত সব কিছু পুনর্গঠন করা যাবে কি না, সংশয় থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE