স্থানীয় দরিয়াপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর দক্ষিণ ২৪ পরগণার আল আমিন মিশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। এরপর সবাই কে চমকে দিয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ২৬৭ র্যাঙ্ক করে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হয়েছিল অভাবী ঘরের মেধাবী জসিমুদ্দিন।
কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গিয়ে সেই ছেলে খুনের মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় ধৃত জসিমুদ্দিনের পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কোরপান শেখ খুনের মামলায় মঙ্গলবার রাতে কলকাতার এন্টালি থানার পুলিশ জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করে।
মালদহের চাঁচলের প্রত্যন্ত গ্রাম গালিমপুর-কৃষ্ণনপুরে জসিমুদ্দিনের পরিবারের কাছে রাতেই সেই খবর পৌঁছে যায়। এনআরএস কান্ডে জসিমুদ্দিন যে গ্রেফতার হয়েছেন চাঁচল থানার পুলিশ সেই বার্তা পৌঁছে দেয়। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, “কলকাতা পুলিশের তরফে পাঠানো সেই বার্তা ধৃতের পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আর এরপর শুধু জসিমুদ্দিনের পরিবার নয়, অন্ধকার নেমেছে গোটা গ্রামে। শুধু আত্মীয়রা নন উদ্বেগের প্রহর কাটাচ্ছেন পড়শিরাও। কদিন আগেই এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে বই কেনেন জসিমুদ্দিন। মঙ্গলবার ধারদেনা করে ছেলেকে সেই টাকা পাঠিয়েছিলেন তার বাবা নৈমুদ্দিন। রাতে ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনেছেন। কিন্তু, ছেলের কাছে ছুটে যেতে পারেননি। বুধবার রাতে কলকাতা রওনা হওয়ার আগে দিনভর টাকা জোগাড় করেছেন তিনি। বলছেন, “কোথা থেকে কী যে হল বুঝতে পারছি না। আমাদের জসিম এ কাজ করতেই পারে না।”
গালিমপুর বাজারে আগে একটি দোকান ছিল নৈমুদ্দিন আহমেদের। তিন ছেলের মধ্যে বড় জসিমুদ্দিন কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেতেই ছেলের পড়ার খরচ যোগাতে দোকানও বিক্রি করে দিয়েছেন। বড় মেয়ে শবনম মুস্তাফি বিএড পড়ছেন। কোনওমতে দিন চলছে এখন।
নৈমুদ্দিন বলেন, “সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে পড়াচ্ছিলাম। ধার করে বই কিনে আমাকে কয়েকদিন আগে টাকা পাঠাতে বলেছিল। মঙ্গলবার সেই টাকা পাঠানোর পর সন্ধ্যায় ছেলে ফোন করেছিল। বলেছিল, এটিএম থেকে টাকা তুলে বন্ধুকে দিয়ে দিয়েছি। তার পর রাতে ওর এক বন্ধুর ফোনে ওর গ্রেফতার হওয়ার কথা জানার পরেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।” পরিবারের দাবি, “ওই খুনের ঘটনার পর ছেলে বলেছিল যে চিত্কার শুনে হস্টেল থেকে বেরিয়ে দেখি একজনকে মারধর করা হচ্ছে। তার পাশে আমার মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে তা তুলে নিই। এর বেশি আমি আর কিছু জানি না।’’
তাঁর পরিবারতো বটেই, জসিমুদ্দিনকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল প্রত্যন্ত গ্রামটিও। আশেপাশেও কোনও চিকিত্সক নেই যে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যে এভাবে ভাঙতে বসেছে তা মানতে পারছেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy