পশ্চিমী ঝঞ্ঝার খরায় উত্তর ভারতের তাপমাত্রা নামছে না। ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের প্রাচুর্যে দক্ষিণ ভারতের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। এবং এই জোড়া ফলায় এ বার শীতের চলার পথে ছড়িয়ে পড়ছে কাঁটা! যার জেরে এ বার দক্ষিণবঙ্গে শীত কবে হাজির হবে, তা নিয়ে জোরালো পূর্বাভাসও দিতে পারছে না হাওয়া অফিস।
শনিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, তামিলনাড়ু উপকূলে ফের একটি ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধছে। সেটি আরও শক্তি বাড়াবে। অর্থাৎ ঘূর্ণাবর্ত থেকে নিম্নচাপে পরিণত হবে সেটি। সাগরের সেই ‘অতিথি’র প্রভাবেই অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল পর্যন্ত মেঘের আস্তরণ তৈরি হবে। তার প্রভাবে আকাশ মেঘলা হবে দক্ষিণবঙ্গেরও। উধাও হতে পারে ভরা অঘ্রাণের হিম-হিম ভাবটাও।
আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, মেঘলা আকাশের জেরে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। গুমোট আবহাওয়ার ফলে শীত-শীত ভাবটাও কম মালুম হবে। বাধা পাবে উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়াও। ‘‘আপাতত তিন-চার দিন মেঘলা আকাশের জেরে রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দিন কয়েক লাগবে,’’ বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এই শীর্ষ-কর্তা।
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা ও ভারী হাওয়া বয়ে আসে (পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) উত্তর-পশ্চিম ভারতে। এর ফলেই কাশ্মীরে তুষারপাত হয়। তুষারপাতের সূচনা শীতেরও সূচনা। এ বছর অক্টোবরের প্রথম দিকেই কাশ্মীরে তুষারপাত শুরু হয়েছিল। যার জেরে হিমেল হাওয়া বয়ে আসছিল দক্ষিণবঙ্গের দিকে। নভেম্বরে ঝঞ্ঝার খরা দেখা দিতেই হিমেল হাওয়ার জোর কমেছে। তবু যেটুকু মিলছিল, তাতেই অঘ্রাণের হিম-হিম ভাবটা অনুভূত হচ্ছিল। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘এ বার বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ সেটুকুও কেড়ে নিতে পারে।’’
শীত আসার পথে আচমকা এই কাঁটা বিছিয়ে যাওয়া কি জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে? আবহবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুতে যে বদল আসছে, সে কথা আগেও বলা হয়েছে। এ বার বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থাও সেই আশঙ্কার আঁচ উস্কে দিয়ে ঘোষণা করেছে, ২০১৫ সাল হতে চলেছে উষ্ণতম বছর। এ বছর গ্রীষ্মেই তা টের পাওয়া গিয়েছিল। বর্ষাতেও খরার মুখ দেখতে হয়েছে এই দেশকে। এ বার শীতের ভোলবদলও সেই রীতি মেনে চলছে। এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, এ বছর প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি রয়েছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি বলে। এই তাপমাত্রা বেশি থাকার প্রভাবে ঘনঘন নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। ‘‘বঙ্গোপসাগরের ঘন ঘন ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার
পিছনেও এল নিনো দায়ী,’’ দাবি করেছেন তিনি।
যদিও এ বার শীতের পরিস্থিতি যে জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনটা মেনে নিতে নারাজ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর তথা মৌসম ভবনের কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোনও এক বছরের নিরিখে জলবায়ু বদল হচ্ছে কি না, সেটা বলা সম্ভব নয়। যদি শীতের আগমনের পথে লাগাতার পরিবর্তন দেখা যায়, তবেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। মৌসম ভবনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, এই সময়ে উত্তর-পূর্ব থেকে আসা মৌসুমি বায়ুর জেরে তামিলনাড়ুতে বর্ষা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে তামিলনাড়ু উপকূলে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ তৈরি হওয়াটাও স্বাভাবিক। কোনও কোনও বছর ঘন ঘন ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ তৈরি হয়। কোনও বছর আবার কম হয়। ‘‘এ বছর বঙ্গোপসাগরের জলের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকায় ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ ঘন ঘন তৈরি হচ্ছে,’’ বলছেন তিনি।
জলবায়ুর বদল হোক বা না-হোক, এ বছর শীতের মতিগতি যে অন্য রকম, তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীদের বড় একটা অংশ। তাঁরা বলছেন, ঝঞ্ঝার খরা আর নিম্নচাপের বাধা কাটিয়ে শেষমেষ শীত এলেও তার দাপট কতটা মিলবে, তা নিয়েও কিন্তু সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy