Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঝর্নার বিরুদ্ধে গ্রামে পোস্টার, আত্মঘাতী যুবকের মা ধৃত

এলাকার এক যুবককে মারধর, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ছাড়াও তোলাবাজির অভিযোগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা ঝর্ণা সিংহের বিরুদ্ধে দু’দিন ধরেই ফুঁসছে আরামবাগের মইগ্রাম। এ বার ঝর্না এবং তাঁর স্বামী রঞ্জিতের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল গোটা গ্রাম জুড়ে। ‘পলাতক’ ওই দম্পতির নাগাল না পেলেও কার্তিক বাগ নামে আত্মঘাতী ওই যুবকের মা ষষ্ঠীদেবীকে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ধরেছে। তাঁর বিরুদ্ধেও ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

এলাকার এক যুবককে মারধর, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ছাড়াও তোলাবাজির অভিযোগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা ঝর্ণা সিংহের বিরুদ্ধে দু’দিন ধরেই ফুঁসছে আরামবাগের মইগ্রাম। এ বার ঝর্না এবং তাঁর স্বামী রঞ্জিতের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল গোটা গ্রাম জুড়ে। ‘পলাতক’ ওই দম্পতির নাগাল না পেলেও কার্তিক বাগ নামে আত্মঘাতী ওই যুবকের মা ষষ্ঠীদেবীকে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ধরেছে। তাঁর বিরুদ্ধেও ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের দাবি, কার্তিকের সঙ্গে যে জমি নিয়ে ষষ্ঠীদেবীর বিবাদ চলছিল, এ দিন সেই জমি সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে মহিলা দুপুর আড়াইটে নাগাদ আরামবাগ রেজিস্ট্রি অফিসে যাচ্ছিলেন। সূত্র মারফত খবর পেয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ ওই অফিসের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, “রঞ্জিতবাবু বারণ করায় ছেলের মৃত্যুর পরেও আমি ওর বাড়ি যাইনি।”

গত শুক্রবার ওই মা-ছেলের বিবাদে ষষ্ঠীদেবীর পক্ষ নিয়ে কার্তিককে হুমকি, মারধর এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঝর্ণা-রঞ্জিত এবং তাঁদের কয়েক জন অনুগামীর বিরুদ্ধে। সে দিনই কীটনাশক খান কার্তিক। পরদিন মারা যান। এর পরেই তিরোল পঞ্চায়েতের সদস্যা ঝর্ণার বিরুদ্ধে পথে নামে গোটা গ্রাম। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে তোলাবাজির অভিযোগও।

এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় ঝর্ণা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। কোনও পোস্টারে ঝর্নাকে ‘কার্তিক বাগের খুনি’ বলে অভিযুক্ত হয়েছে। কোনও পোস্টারে আবার ‘ইন্দিরা আবাসের টাকা চোর’ বা ‘১০০ দিনের কাজের টাকা আত্মসাৎকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই পঞ্চায়েত সদস্যাকে। প্রতিটি পোস্টারের নীচে লেখা, ‘মইগ্রামের জনসাধারণ’।

গ্রামবাসী এবং স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের তরফে গ্রামের যে কোনও কাজে টাকা আত্মসাৎ করতেন ঝর্ণা। গ্রামের পশ্চিমপাড়া-কালীতলায় একটি কালভার্ট তৈরির জন্য ৮০ হাজার টাকা আসে। কিন্তু সেই কাজ শুরু হয়নি। এলাকার একাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের অভিযোগ, “কালভার্টের টাকা ঝর্ণা সিংহের পকেটে চলে গিয়েছে। যত বার এ নিয়ে বলতে গিয়েছি, উনি হুমকি দিয়েছেন।” একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্নাঘর এবং উনুন তৈরিতেও ঝর্ণার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একই ভাবে উত্তরপাড়ার খাগড়া পুকুরে যাওয়ার জন্য একটি কংক্রিটের কালভার্ট তৈরির কাজ শুধু ইট দিয়ে করা, ব্রাহ্মণপাড়ায় পুকুরের পাড় বাঁধানো নিয়েও ঝর্ণার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঝর্ণা বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি। এ দিনও তাঁদের বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। ঝর্র্ণার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের কাজি নিজামুদ্দিন।

তবে আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার আগেই জানিয়েছেন, পুলিশের পাশাপাশি ঝর্ণার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে দলীয় স্তরেও। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, দল ব্যবস্থা নেবে।

ঝর্ণা গ্রেফতার না হলেও শাশুড়ি ষষ্ঠীদেবী ধরা পড়ায় খুশি কার্তিকের স্ত্রী ঝুমা। তিনি বলেন, “শাশুড়িমার কঠোর সাজা হোক। পুলিশ সব ক’জনকেই ধরুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE