Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঝুঁকি নিয়েই সঙ্ঘ চায় রাজ্যে রাহুল-বিদায়

দলের মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে। বহাল মত, পাল্টা মতও। তবু তার মধ্যেই বিধানসভা ভোটের আগে রাহুল সিংহের পরিবর্তে দিলীপ ঘোষকে বিজেপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি হিসাবে চাইছে আরএসএস। সঙ্ঘ থেকে অল্প দিন আগেই তিনি রাজ্য বিজেপি-র সংগঠনে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘের ইচ্ছাই মান্যতা পেলে বিদায়ী রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবুকে অন্য কোনও রাজ্যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

দলের মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে। বহাল মত, পাল্টা মতও। তবু তার মধ্যেই বিধানসভা ভোটের আগে রাহুল সিংহের পরিবর্তে দিলীপ ঘোষকে বিজেপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি হিসাবে চাইছে আরএসএস। সঙ্ঘ থেকে অল্প দিন আগেই তিনি রাজ্য বিজেপি-র সংগঠনে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘের ইচ্ছাই মান্যতা পেলে বিদায়ী রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবুকে অন্য কোনও রাজ্যে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহই।

দিলীপবাবু ও রাহুলবাবু, দু’জনকেই দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বিজেপি-র একটি সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার দিলীপবাবুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত। তবে দিলীপবাবুর দিকে সঙ্ঘের পাল্লাভারী থাকলেও দলে এই নিয়ে মতানৈক্য তুঙ্গে। একাংশের বক্তব্য, সভাপতি পদে রদবদল জরুরি। দিলীপবাবু সেই পদে এলে বিজেপি-র উপরে সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হবে। আবার দলের অন্য একাংশের বক্তব্য, সাংগঠনিক দিক থেকে যা-ই হোক, ভোটের আগে আম জনতার কাছে দিলীপবাবুর মুখ চেনাতেই অনেক সময় দিতে হবে! তার চেয়ে শমীক ভট্টাচার্যের মতো কোনও নেতাকে দায়িত্ব দিলে একসঙ্গে সব উদ্দেশ্যই পূরণ হতো!

বেশ কিছু দিন ধরেই আরএসএসের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র সংঘাত চলছে সভাপতি নিয়ে। এর আগে রাহুলবাবুকে সরিয়ে আরএসএস ঘনিষ্ঠ নেতারা সুভাষ সরকারকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য ছিল, চিকিৎসক সুভাষবাবু সবে দলে এসেছেন। ভোটের ঠিক মুখে দলকে বুঝে উঠতেই তাঁর অনেকটা সময় চলে যাবে। এখন রাহুল-ঘনিষ্ঠ শিবির দিলীপবাবু প্রসঙ্গেও একই যুক্তি দিচ্ছে! তাঁদের বক্তব্য, ভোটের মুখে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ কোনও নেতাকে সভাপতি করলে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভাঙবে। তবে তাঁকে সরানো হলেও রাহুলবাবু অন্যদের মতো বিদ্রোহী হয়ে উঠবেন না। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, রাহুলের জমানায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যে ভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, তা অন্য কোনও নেতার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এখন বিজেপি-র হাওয়া যদি রাজ্যে ফিকে হতে শুরু করে, তার দায়ও শুধুমাত্র রাহুলবাবুর নয়। দায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও।

মাসখানেক আগে রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও অমিতের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, রাহুলবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু তাঁর বিকল্প কোনও নেতা নেই, যাঁকে মুখ করে বিজেপি এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে নামতে পারে। কিন্তু গত ১০-১৫ দিন ধরে দলের মধ্যে থেকে রাহুলবাবুর অপসারণের দাবি আরও প্রবল হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে ফের ভাবতে বাধ্য হয়েছেন। রাহুলবাবুকে সভাপতি পদ থেকে সরানো না হলে কাল, শুক্রবার থেকে রাজ্য দফতরের সামনে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। দলের কিষাণ মোর্চার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার এ দিন জানান, নেতৃত্ব বদলের আশ্বাস পেয়েই তাঁরা অনশন স্থগিত রাখছেন। তবে তার আগেই এ দিন রাজ্য বিজেপি কড়া অবস্থান নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, সাসপেন্ডেড সুভাষবাবু এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) জেলার প্রাক্তন সভাপতি জয়ন্ত বসুদের কোনও কর্মসূচি দল গ্রাহ্য করে না। বিজেপি-র কোনও কর্মী সুভাষবাবুদের সঙ্গে হাত মেলালে তাঁর বিরুদ্ধেও দলের গঠনতন্ত্র মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধানসভা ভোটের আগে দল যখন আন্দোলনমুখী হতে চাইছে, তখন সুভাষবাবুরা অন্য দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি-র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছেন বলে রাজ্য নেতৃত্বের অভিযোগ। সভাপতি বদলই আপাতত বিজেপি-র সামনে এই বিবাদ থেকে বেরোনোর পথ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE