স্মরণসভায় সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়াদের পাশে কৃষ্ণপ্রসাদ জানার দুই দাদা (বাঁ দিকে)। তেমাথানি মোড়ে ওই সভায় ভিড় হয়েছিল ভালই (ডান দিকে)। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের ঘটনায় আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াল কংগ্রেস। সবংয়ে নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার স্মরণসভা থেকেই শুক্রবার স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া লাগাতার অবস্থানের ডাক দিলেন। খুনের ঘটনায় পুলিশি ভূমিকার প্রতিবাদে এবং কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেফতারের দাবিতে সবং সজনীকান্ত কলেজের সামনে এই অবস্থান চলবে। সভামঞ্চে মানসবাবু বলেন, “যদি সবংয়ে পুলিশি নির্যাতন চলতে থাকে তবে আমি ছাত্রদের নিয়ে সোমবার বেলা ১২টা থেকে কলেজের সামনে অবস্থান শুরু করব। পরে জেলা ও কলকাতায় আমাদের অবস্থান চলবে। আমি দেখতে চাই পুলিশ সুপার কত দূর যেতে পারেন!”
এ দিন সবংয়ের তেমাথানিতে কৃষ্ণপ্রসাদের স্মরণসভায় মানসবাবু ছাড়াও ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র, সাধারণ সম্পাদক খালেদ ইবাদুল্লা, অজয় ঘোষ, কনক দেবনাথ, মহম্মদ রফিক, জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া প্রমুখ। মঞ্চে কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গেই বসেছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা নারায়ণ জানা ও হরিপদ জানা। নারায়ণ বলেন, “আমরা চাই আমার ভাইকে কলেজের যে জায়গায় খুন করা হয়েছিল, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হোক।”
কৃষ্ণপ্রসাদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চলছে, এই অভিযোগ তুলে এর আগে সবংয়ে সভা করেছে তৃণমূল। সেখানে ডাকা হলেও যাননি নিহত ছাত্রের পরিজনেরা। ফলে, এ দিন কংগ্রেসের ডাকা স্মরণসভায় কৃষ্ণপ্রসাদের দুই দাদা আসায় কিছুটা জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও এ দিন যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ছাত্র পরিষদ কর্মীরাই কি এই খুনে জড়িত, তখন নারায়ণের জবাব, “সিসিটিভি ফুটেজ যতক্ষণ না দেখছি ততক্ষণ কাউকেই বিশ্বাস করছি না। এ দিন ভাইয়ের জন্য শোকসভায় এত লোক এসেছে তাই আমরা এসেছি।” তবে পুলিশি তদন্তে তাঁদের আস্থা নেই বলেই জানিয়েছেন কৃষ্ণপ্রসাদের দাদারা। নারায়ণের কথায়, “ভাইয়ের খুনের পরে ২১ দিন হয়ে গেল। এখনও পুলিশের তদন্ত ঠিক গতিতে এগোচ্ছে না। সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেছি।”
খুনের মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি তুলেছেন বিধায়ক মানসবাবুও। তাঁর কথায়, “যখন কৃষ্ণপ্রসাদ জানা লুটিয়ে পড়ছে, তখনকার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ সুপার দেখাচ্ছেন না। যদি সেই ফুটেজে ছাত্র পরিষদের ছেলেরা মারছে দেখা যায়, তবে আমি আপনাদের হাতে তাদের তুলে দেব।” পরে তাঁর সংযোজন, “হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছে। আগামী শুক্রবার আইনজীবীরা লড়বেন। পুলিশ ঠিক তদন্ত করছে না বলে পরিবারের লোক আলাদাভাবে হাইকোর্টে লড়বেন বলে ভাবছেন।” এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা নারায়ণ জানা বলেন, “আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টে লড়াইয়ের ব্যাপারটি ঠিক করব।”
গত ৭ অগস্ট কৃষ্ণপ্রসাদ জানার খুনের পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেছিলেন, এই ঘটনা ছাত্র পরিষদের নিজেদের অশান্তির পরিণাম। তারপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বকে মান্যতা দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। ঘটনায় ইতিমধ্যে ছাত্র পরিষদের দুই কর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন। এ দিনের সভায় সেই সূত্রেই আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রী এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান কংগ্রেস নেতারা। এ দিন মঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র বলেন, “ছাত্ররা আতঙ্কে রয়েছে। প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে বের হলে ভারতী ঘোষদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, বন্দুকের নল নয়, জাগ্রত জনগণ শেষ কথা বলবেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “শুধু কৃষ্ণপ্রসাদ জানা অমর রহে বললেই হবে না। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। মানুষের কাছে ন্যায় বিচার পৌঁছে দিতে হবে।” মানসবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর কন্যা ভারতী ঘোষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কলেজের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায় পুলিশের কাছে না যাওয়ায় তাঁর মামাকে বাড়ি থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছেন। এই পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।” কলেজের অধ্যক্ষ কানাইলাল পড়িয়াকেও গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। পড়ুয়াদের নির্ভয়ে সবং কলেজে আসার আবেদন জানান মানসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy