তদন্ত-রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল ৩১ জুলাই। তার এক সপ্তাহ আগেই নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগ বিষয়ে নিজস্ব তদন্ত কমিটি ভেঙে দিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু মঙ্গলবার এক নোটিস জারি করে ওই তদন্ত কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, “ওঁরা কমিটি ভাঙলেন, না রাখলেনতা আমার দেখার ব্যাপার নয়।”
চাপড়ার ওই কলেজটিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে পড়ুয়া ভর্তি করানোর অভিযোগ পেয়ে প্রথমে কিন্তু কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করেছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ই। সে সময় শিক্ষা দফতর কোনও তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি তদন্ত শুরু করতেই নতুন তত্ত্ব খাড়া করে টিএমসিপি। কল্যাণী বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানায় তারা। সেই অভিযোগ উঠতেই শিক্ষামন্ত্রী কমিটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সেই এক সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে রিপোর্টও জমা দিয়েছে শিক্ষা দফতরে।
সেই সূত্র টেনেই এ দিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “একই বিষয় নিয়ে তদন্ত করছিল রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাই আমরা তদন্ত বন্ধ করলাম। এটাকে নেগেটিভ ভাবে দেখার কিছু নেই।” কিন্তু আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা, সেখানে তদন্ত বন্ধ করাটা কতটা সঙ্গত? উপাচার্যের জবাব, “আমাদের পরে তদন্ত করলেও রাজ্য সরকার দায়িত্বশীল ভাবেই তদন্ত করেছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আলাদা তদন্ত চালানোর কোনও যুক্তি নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা সুজাতা চৌধুরীর নেতৃত্বে জুন মাসের মাঝামাঝি গড়া হয়েছিল তদন্ত কমিটি। প্রথমে চার এবং শেষ পর্যন্ত ছ’জন সদস্য ছিলেন কমিটিতে। কমিটি ইতিমধ্যে দু’টি বৈঠক করেছে। দ্বিতীয় বৈঠকে ভক্তবালা বিএড কলেজ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ভক্তবালার ‘ভুক্তভোগী’ ১৭ জন পড়ুয়া অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীদের অনেকেই তদন্ত কমিটির কাছে দাবি করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপি নেতা তন্ময় আর্চাযের মাধ্যমে মোটা টাকার বিনিময়ে তারা ওই কলেজে ভর্তি হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একাধিক সদস্যের বক্তব্য, “তন্ময় আচার্য-সহ বিএড কলেজ কাণ্ডে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, আগামী সোম বা মঙ্গলবার তাঁদের ডাকা হবে বলে ভাবা হয়েছিল। তার আগেই কমিটি ভেঙে গেল।” ওই সদস্যেরা জানিয়েছেন, তদন্ত-রিপোর্ট তৈরির কাজও পুরোদমে চলছিল।
কমিটি কেন ভাঙা হল তা নিয়ে উপাচার্যের ‘তত্ত্ব’ সবাই মানছেন না কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। প্রশ্ন উঠছে, তদন্ত করতে গিয়ে অভিজিৎ চক্রবর্তী যেখানে মূল অভিযুক্ত তন্ময় আচার্যকে না ডাকায় বিতর্ক বেধেছিল, সেখানে ‘দায়িত্বশীল’ ভাবে তদন্ত করা হয়েছে, বলার আদৌ প্রয়োজনীয়তা ছিল কি না? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তাদের লিগ্যাল অফিসার পদে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য অলোক ঘোষের থাকা নিয়ে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা প্রশ্ন তোলার পর থেকে কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ওই পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয় অলোকবাবুকে। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের মন্তব্য, “টিএমসিপি তথা শাসক দলের চাপের মুখেই তদন্ত কমিটি ভাঙা হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। ঘটনাটা আখেরে উচ্চশিক্ষারই ক্ষতি করবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। তবে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব বলেন, “উপাচার্যই তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন। তিনিই ভেঙেছেন। আমরা ওখানে আদৌ হস্তক্ষেপ করিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy