Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের তিন টোপ, ফিরিয়ে দিলেন রেজ্জাক

তাগিদ সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন আটকানোর। তাই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী থেকে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সম্ভাব্য সব মাছকেই জালে জড়াতে চাইছে তৃণমূল! দীর্ঘ দিনের অনীহা সরিয়ে কাল, বৃহস্পতিবারই সিদ্দিকুল্লার সমাবেশে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

তাগিদ সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন আটকানোর। তাই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী থেকে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সম্ভাব্য সব মাছকেই জালে জড়াতে চাইছে তৃণমূল!

দীর্ঘ দিনের অনীহা সরিয়ে কাল, বৃহস্পতিবারই সিদ্দিকুল্লার সমাবেশে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার অন্য দিকে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক তথা বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাকের কাছেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে শাসক দলের সঙ্গে বন্ধনে জড়ানোর জন্য। এ যাত্রায় রেজ্জাক অবশ্য জাল কেটে বেরিয়ে গিয়েছেন! দূত মারফত তৃণমূলের প্রস্তাব ফিরিয়েই দিয়েছেন তিনি।

সিপিএম থেকে বহিষ্কারের পরে এখন ‘ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি’ (বিএনপি) নামে নতুন দল চালাচ্ছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক। ভাঙড় থানা এলাকার বাসিন্দা, এক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক (যাঁর সঙ্গে সংগঠনগত ভাবে রেজ্জাকের যোগাযোগ বেশ কিছু দিনের) রেজ্জাকের সঙ্গে দেখা করে জানান, স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর বার্তা নিয়েই তিনি এসেছেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, ভবিষ্যতে আরও বেশি রাজনৈতিক গুরুত্ব দিয়ে দিল্লিতে কাজ করার সুযোগ রেজ্জাককে দেওয়া হতে পারে। তেমন প্রস্তাবে রেজ্জাক আগ্রহী না হলে আগামী বিধানসভা ভোটে নিজের কেন্দ্র থেকে প্রাক্তন মন্ত্রীকে জিতিয়ে আনতে ‘উৎসাহী’ তৃণমূল। জিতে আসার পরে রাজ্য মন্ত্রিসভায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁকে জায়গা দেওয়া হবে। এবং সেই সঙ্গেই রেজ্জাকের বিএনপি-কে তিনটি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। বিধানসভা ভোটের আগে এই ত্রিমুখী প্রস্তাবের চুম্বকে রেজ্জাককে দলে টানাই শাসক দলের লক্ষ্য ছিল।

প্রস্তাব পাওয়ার কথা অস্বীকার করেননি রেজ্জাক। প্রস্তাবে যে তিনি রাজি হননি, মেনে নিচ্ছেন সে কথাও। রেজ্জাকের কথায়, ‘‘আমার দল সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়ন নিয়ে লড়াই করছে। সে ক্ষেত্রে শাসক দলের সঙ্গে জোট করার কোনও প্রয়োজন নেই। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে যে বন্ধুরা আমার সঙ্গে রয়েছেন, আমি তাঁদেরও মতামত নিয়েছি। সকলেই আমার সঙ্গে একমত। সেই কারণেই ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।’’ সিপিএমে থাকাকালীন শাসক তৃণমূলের হাতে ভাঙড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন রেজ্জাক। সেই ঘটনার প্রতিবাদে সিপিএম পথেও নেমেছিল। এখন পরিস্থিতির ফেরে সেই রেজ্জাক আর যা-ই করুন, তৃণমূলে চলে যাবেন, এমনটা তাঁর ঘনিষ্ঠ জনেরাও কেউ চাননি।

এমন বার্তা চালাচালি নিয়ে শাসক দলের তরফে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি। তবে তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘যে কোনও ব্যক্তিরই যে কোনও দল বেছে নেওয়ার অধিকার গণতন্ত্রে আছে। আর সংখ্যালঘুদের প্রকৃত বন্ধু এ রাজ্যে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই, এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তৃণমূলের বাইরে থেকেও অনেকে তাই যোগাযোগ করছেন।’’

রাজনীতির কারবারিদের মতে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংখ্যালঘু উন্নয়ন না হওয়ায় ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু সংগঠন। সাম্প্রতিক পুরভোটে শাসক দলের বিপুল সাফল্যের মধ্যেও তাদের সংখ্যালঘু ভোটে কিছু চিড় ধরা পড়েছে। তার উপরে, বাম-কংগ্রেস কাছাকাছি হলে সংখ্যালঘু ভোটে তার প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা আছে শাসক শিবিরে। সে সব ভাবনা থেকেই রেজ্জাককে কাছে টানার চেষ্টা বলে রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা। রেজ্জাক ঘনিষ্ঠ এক নেতারও বক্তব্য, ‘‘নিজেদের সভা থেকে উনি সংখ্যালঘু উন্নয়নে বাম সরকারের ভূমিকার নিয়মিতই সমালোচনা করে এসেছেন। এই রকম এক জনকে দলে টানতে পারলে সিপিএমের এক কালের ঘরের লোকের মুখ দিয়েই বামেদের সমালোচনা করানো যাবে। আবার অনগ্রসরদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের মুখ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রেজ্জাককে কাছে রাখতে পারলে সমাজের ওই অংশের কাছেও বার্তা পাঠানো যাবে।’’ এই ভাবনা থেকেই রেজ্জাককে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বলে ওই নেতার মত। তৃণমূল শিবিরের একাংশের আরও যুক্তি, রেজ্জাক যাতে বাম-কংগ্রেসের কাছাকাছি না যান, তা আটকানোর আগাম চেষ্টা থেকেই প্রবীণ বিধায়ককে কাছে টানার প্রয়াস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE