Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাণ নিয়ে অসন্তোষ শাসক দলেও

বানভাসি জেলাগুলিতে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। সে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে কখনও বিডিও অফিসে কখনও বা ত্রাণ শিবিরে। গত কয়েক দিন ধরে সে রোষ সামাল দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসকেরা।

টানা বৃষ্টি ও বেহাল নিকাশির জেরে জলমগ্ন হয়েছে নন্দীগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকা। মঙ্গলবার রায়নগরে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

টানা বৃষ্টি ও বেহাল নিকাশির জেরে জলমগ্ন হয়েছে নন্দীগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকা। মঙ্গলবার রায়নগরে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

বানভাসি জেলাগুলিতে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। সে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে কখনও বিডিও অফিসে কখনও বা ত্রাণ শিবিরে।

গত কয়েক দিন ধরে সে রোষ সামাল দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসকেরা। মঙ্গলবার, শাসক দলের অন্দর থেকেই উঠে এল সেই ক্ষোভ এবং সে আঁচের সামনে পড়লেন শাসক দলেরই দুই বিধায়ক।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ককে সামনে পেয়ে শুধু গাল-মন্দই নয়, রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করলেন তাঁরই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অন্য দিকে, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষের অসন্তোষের মুখে পড়লেন নামখানার তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত মৌসুনি দ্বীপে এ দিন ত্রাণ শিবিরে গিয়ে বিপন্ন মানুষের বিক্ষোভের সামনে তিনি যখন জেরবার তখন আশপাশে জটলা করা দলীয় কর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেননি। উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

যা দেখে বিরোধীরা বলছেন, ‘‘বিপন্ন মানুষের পাশে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি যে স্থানীয় কর্মীদের মুখ পোড়াচ্ছে, এই দু’টি ঘটনা তারই প্রমাণ।’’

দলীয় বিধায়ককে হেনস্থার পাশাপাশি, ত্রাণ বণ্টনের প্রশ্নেও এ দিন শাসক দলের ‘দাদাগিরি’র সাক্ষী থাকল নদিয়া। বিলি-বণ্টন যথার্থ হচ্ছে না বলে দাবি করে এ দিন কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের বিডিও অফিসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল কর্মীরা। তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস দাবি করেছেন ওই ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁর দল নয়, সিপিএমের সমর্থকেরাই জড়িত। দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ চোখে পড়েছে ক্যানিংয়ের আঠারোবাঁকির ত্রাণ শিবিরেও। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই বলে ক্ষোভ দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার একটি শিবিরেও।

মায়াপুরে মন্দিরের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় ভাসছে নৌকা।
মঙ্গলবার সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সোমবার, হাওড়ার আমতায় গিয়েছিলেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। সঙ্গে ছিলেন উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যাকবলিত মানুষ বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিতে জটলা করছেন বলে জানতে পেরেই দলের নেতা-কর্মীরা মন্ত্রী ও বিধায়ককে অন্য পথে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে যাত্রায় ক্ষোভের সামনে থেকে নিস্তার পেলেও এ দিন নদিয়ায় গিয়ে পার্থবাবু দলের কর্মীদের ক্ষোভের সামনেই পড়ে গিয়েছেন।

বেলা এগারোটা নাগাদ কল্যাণী-চাকদহ সড়কের কাঁচড়াপা়ড়া পঞ্চায়েতের দক্ষিণ চাঁদামারি বাজারের কাছে মন্ত্রীর কনভয় পৌঁছতেই তা ঘিরে ধরেন স্থানীয় কর্মীরা। প্রথমটায় হকচকিয়ে গিয়ে পার্থবাবু ভাবেন ক্ষোভ তাঁর বিরুদ্ধেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি থেকে তাই নামতে ইতস্তত করছিলেন তিনি। কিন্তু বিক্ষোভে সামিল, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী অনিমেষ হালদার, মিনাজুল মণ্ডলেরা তাঁকে জানান, সপ্তাহখানেক ধরে এলাকা জলমগ্ন। কিন্তু দেখা নেই স্থানীয় বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের। কর্মীদের বলতে শোনা যায়, ‘‘ভোটের সময়ে প্রাণপাত করলাম আর এখন বিধায়কের দেখা নেই। আমরা কোন মুখে মানুষের কাছে যাব?’’ পার্থবাবু গাড়ি থেকে নেমে সব শোনেন। মন্ত্রীর কয়েকটা গাড়ির পিছনেই ছিলেন রমেন্দ্রনাথ। পার্থবাবুকে নামতে দেখে এ বার গাড়ি থেকে তিনিও নেমে পড়েন। আর বিপত্তি ঘটে তাতেই।

রমেন্দ্রবাবু এগিয়ে আসতেই তাঁকে দেখে হট্টগোল বেড়ে যায়। দলের একাধিক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এত দিন কোথায় ছিলেন, ভোট আসছে টের পেয়েই এসে পড়েছেন?’’ এক কর্মী আঙুল তুলে তাঁকে বলেন, ‘‘মন্ত্রীর পিছু পিছু এলাকায় ঢুকেছো, দেখাচ্ছি...।’’ শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বিধায়ককে ধাক্কাও দেন দু-এক জন। এ বার ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন খোদ মন্ত্রী। পার্থবাবু দলীয় কর্মীদের বোঝাতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘ওদের দাবি বিধায়ককে এলাকায় আরও বেশি করে আসতে হবে। আমি বিধায়ককে সকলের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’’ পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে দেখে এলাকা ছাড়ে মন্ত্রীর কনভয়। কল্যাণীর বিধায়ক রমেন্দ্রবাবু পরে বলেন, ‘‘দলের কয়েক জন যড়যন্ত্র করে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’

ছবিটা প্রায় একই রকম দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায়। এ দিন সেখানে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা পৌঁছনো মাত্র শিবিরের বাসিন্দারা হইচই শুরু করেন। দাবি, খাবার, শিশুখাদ্য, ত্রিপল কিছুই মিলছে না। বিধায়কের সঙ্গে হাজির ছিলেন দলীয় কর্মীরাও। জেলা তৃণমূলের খবর, ওই এলাকায় বিধায়ক প্রায় পা রাখেননি। ফলে মুখ পুড়ছিল দলীয় কর্মীদের। বিক্ষোভের সামনে তাই আর বিধায়ককে বাঁচাতে এগিয়ে যাননি তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই দ্বীপ থেকে বেরিয়ে এসে বঙ্কিমবাবু বলেন, ‘‘জমির মালিকানা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না বলে নদী বাঁধের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শুরু করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE