Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দমদমের কাউন্সিলর কৈখালিতে মার খান, তা-ও নন বহিরাগত!

পুরনির্বাচনে বহিরাগতদের উপস্থিতি আগেই ধরা পড়েছিল সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। এক কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে থানায় নালিশ ঠুকতে গিয়ে সেই অভিযোগই কার্যত স্বীকার করে নিল তৃণমূল।

আশীর্বাদের হাত। পুরভোটের পরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে সত্যব্রত সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র

আশীর্বাদের হাত। পুরভোটের পরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে সত্যব্রত সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

পুরনির্বাচনে বহিরাগতদের উপস্থিতি আগেই ধরা পড়েছিল সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। এক কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে থানায় নালিশ ঠুকতে গিয়ে সেই অভিযোগই কার্যত স্বীকার করে নিল তৃণমূল।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যব্রত সাঁতরার অভিযোগ, শনিবার বিধাননগরের পুরভোটের দিন তিনি কৈখালি এলাকার একটি দলীয় অফিসে বসে ছিলেন। সে সময় কংগ্রেস প্রার্থী দেবরাজ চক্রবর্তী দলবল নিয়ে ওই দলীয় অফিসে হামলা করেন। তাতে সত্যব্রতবাবু-সহ ১৮ জন গুরুতর আহত হন। কাউন্সিলরের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে দেবরাজকে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানা। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে। সোমবার বারাসত আদালতে হাজির করানো হলে ধৃতকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। সত্যব্রতবাবু আহত হয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর নিজের এলাকার বাইরের ভোটে কী করতে গিয়েছিলেন?

এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। তাঁদের জোড়াতালি দেওয়া ব্যাখ্যা, সত্যব্রতবাবুর বাড়ি দক্ষিণ দমদমের শ্যামনগর এলাকায়। সেটি রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভার অধীনে। তাই রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা হিসেবে কৈখালিতে ছিলেন। ওই বিধানসভার বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু এ দিন বলেন, ‘‘সত্যব্রত বুথ এজেন্ট ছিলেন না। কিংবা তিনি বুথের আশপাশেও ছিলেন না। পার্টি অফিসে বসে ছিলেন। সেখানে ওঁর ওপরে হামলা হয়। সত্যব্রত বহিরাগত নন।’’

কিন্তু তিনি কোন কাজে এত দূর উজিয়ে কৈখালিতে ‘মার খেতে’ এসেছিলেন, সে প্রশ্ন করতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তৃণমূল নেতারা।

কংগ্রেস অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তৃণমূলের ব্যাখ্যা উড়িয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদার কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন, ‘‘এর পরে তো ওঁরা বলবেন বিধানসভা ভিন্ন হলেও রাজ্য তো এক! সেই হিসেবে এক জেলার লোক অন্য জেলায় যাবে। এর পরে বলবেন, দেশটাও তো এক। তা হলে এ রাজ্যের ভোটে ভিন্ রাজ্যের লোক আসবে না! এ ভাবে তো নির্বাচন বিধি বলে কিছু থাকবে না।’’

সত্যব্রতবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ দিন আদালতেও সরব হন দেবরাজের আইনজীবীরা। বারাসতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তাঁদের বক্তব্য ছিল, ভোটে বহিরাগতদের ঢোকা নিয়মবিরুদ্ধ। এক জন বহিরাগত কাউন্সিলর ঢুকে বসে রইলেন, ঝামেলা করলেন। তাঁকে গ্রেফতার না করে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ওই ওয়ার্ডের প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হল, এ কেমন ব্যবস্থা!

বিধাননগরের বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, শুধু ওই এক জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বলে কী হবে! ভোটের দিন অর্জুন সিংহ, সুজিত বসু, পরেশ পালের মতো বিধায়করা গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছেন। দমদমের রিঙ্কু দত্ত দে, উত্তর দমদমের সুজাতা লস্করের মতো কাউন্সিলররা ভোটে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। দেখা গিয়েছে, টালিগঞ্জ, বেলেঘাটা এলাকার দাগি দুষ্কৃতীদের। ‘‘প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়ালেও বিধাননগরের পুলিশকর্তারা ভোটের সময় ঠুঁটো জগন্নাথ হয়েই ছিলেন। তাঁরা বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, এটা শুনেই তো হাসি পাচ্ছে,’’ মন্তব্য এক বাসিন্দার।

তবু প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তার কাছে, সত্যব্রতবাবু লিখিত ভাবে নিজেকে বহিরাগত হিসেবে মেনে নিলেও কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? জবাবে ওই পুলিশ-কর্তা বলেন, ‘‘বহিরাগত হলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সেটাও করা হয়নি। কারণটা কি আর খোলসা করে বলতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE