মুর্শিদাবাদকে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলা হয়। বলা হয় অধীর চৌধুরীর দুর্গ। সেই দুর্গে হানা দিয়েছে তৃণমূল। এ বার জেলার যে ৮টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ভোট হয়, দু’বছর আগে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। একটি পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের হাতে ছিল না। এ বার কিন্তু চিত্রটা বদলে গিয়েছে। ওই ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৪টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেস ৩টি এবং সিপিএম ১টি করে পেয়েছে। আর ২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ছিল হয় কংগ্রেস, নয় বামেদের হাতে। এ বার উপনির্বাচনে তৃণমূল সেখানে আসন পেয়েছে ১২টি, কংগ্রেস ৮টি, সিপিএম ৪টি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি করে আসন। মামলা হওয়ায় একটিতে ভোট হয়নি।
কংগ্রেসের এই বির্পযয় কেন?
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বুধবার দুপুরে দিল্লি থেকে বলেন, ‘‘প্রথম কথা উপনির্বাচনে শাসক দল বাড়তি একটা সুযোগ পায়। তবে মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ সারা রাজ্যের যেখানে যেখানে উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানেই সামগ্রিক ভাবে শাসক দলের সন্ত্রাসই বিরোধীদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’’ মুশির্দাবাদে দলের বির্পযয় নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অধীর বলেন, ‘‘শাসক দল পেশীবল, অর্থবলের মোকাবিলা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রথমত, প্রার্থী মনোনয়নের সময় থেকে যে সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল তা ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত চলেছে। আমাদের প্রার্থীরা বিডিও-র কাছে মনোনয়ন দিতে যেতে পারছে না। সন্ত্রাস করে তাদের আটকানো হয়েছে। তখন এসডিও-র কাছে গিয়ে মনোনয়ন দিতে হয়েছে। হরিহরপাড়ায় তো ভোট করতে দেয়নি শাসক দলের লোকজন।’’
মুর্শিদাবাদের কান্দিতে শাসক দলের লোকজন যে পিস্তল হাতে মিছিল করেছে তার উল্লেখ করে অধীর বলেন,‘‘ভোটের আগে এবং পরে কংগ্রেস প্রার্থী থেকে শুরু করে নেতা-কর্মীদের হেনস্থা করতে পুলিশ প্রশাসনকে তো কাজে লাগানো হয়েছে। তার সঙ্গে শাসক দলের ‘ছত্রছায়ায়’ থাকা মস্তান বাহিনীর সন্ত্রাস তো আছেই। এমনকী, ভোটের আগে শাসক দলের লোকজন দেদার টাকাও ছড়িয়েছে। এত রকম আক্রমণ হলে তো ভোটে লড়াই করা মুশকিল।’’
মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুধু সন্ত্রাস বলে তো নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা যাবে না। কংগ্রেস তো ক্রমশ রাজনৈতিক ভাবে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। তারই ফলে এই হাল!’’ অধীর অবশ্যে নিজেই তাঁর দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা স্বীকার করেছেন। গত কয়েক বছরে দলে ভাঙনও হয়েছে। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন ও তাঁর পুত্র সৌমিক হোসেন দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অধীর বলেন, ‘‘কোথাও আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও শৈথিল্যের কারণেও দলকে আসন হারাতে হয়েছে।’’ কোথায় কোথায় এমন হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি অধীর। তবে তাঁর অভিযোগ, ‘‘ডোমকলের ঘোড়ামারায় গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএম এবং তৃণমূল জোট করে আমাদের হারিয়েছে।’’
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কী করবে? অধীর জানান, ভোটের সম্পূর্ণ ফলাফল দেখে এবং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কংগ্রেস।
অন্য দিকে রাঢ়বঙ্গের তিনটি জেলায় সিপিএমকে কার্যত ধুয়েমুছে দিয়েছে তৃণমূল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে একটি করে আসন পেয়েছে বামেরা। একই অবস্থা পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy