Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
এনআরএস-তদন্ত

দু’ঘণ্টা বাঁশপেটা কোরপানকে, পুলিশও থ

নিছক ক্ষণিকের রাগের বশে পিটুনি নয়। এনআরএসের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহের উপরে অন্তত দু’ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালানো হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। লালবাজার-সূত্রের দাবি: ধৃতেরাই জেরার মুখে এ কথা বলেছেন। তাঁদেরই মুখে শোনা গিয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর ভোরে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ হস্টেলে কোরপানকে দু’দফায় অমানুষিক ভাবে পেটানো হয়। যার ধরন ও নৃশংসতা আঁচ করে পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারেরাও হতবাক। মারধরে ‘নেতৃত্ব’ দিয়েছিলেন যে তিন সিনিয়র ছাত্র, তাঁদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। লালবাজারের বক্তব্য: অভিযুক্তদের পরীক্ষা চলছে, তাই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। প্রয়োজনে এনআরএস-কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে পুলিশ।

কোরপান শাহ

কোরপান শাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

নিছক ক্ষণিকের রাগের বশে পিটুনি নয়। এনআরএসের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহের উপরে অন্তত দু’ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালানো হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

লালবাজার-সূত্রের দাবি: ধৃতেরাই জেরার মুখে এ কথা বলেছেন। তাঁদেরই মুখে শোনা গিয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর ভোরে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ হস্টেলে কোরপানকে দু’দফায় অমানুষিক ভাবে পেটানো হয়। যার ধরন ও নৃশংসতা আঁচ করে পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারেরাও হতবাক। মারধরে ‘নেতৃত্ব’ দিয়েছিলেন যে তিন সিনিয়র ছাত্র, তাঁদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। লালবাজারের বক্তব্য: অভিযুক্তদের পরীক্ষা চলছে, তাই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। প্রয়োজনে এনআরএস-কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে পুলিশ।

লালবাজারের খবর: ১৬ নভেম্বর ভোর পাঁচটা নাগাদ কোরপানকে প্রথম দফায় পেটানো হয়ে গেলে বেশ কিছু আবাসিক ওঁকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু সিনিয়র কিছু ছাত্র তাতে কান দেননি। তাঁরা ঘোষণা করে দেন, হস্টেলে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’-দু’টো মোবাইল চুরি গিয়েছে, তাই ‘চোর’কে ছাড়া যাবে না। উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকটিকে চারতলায় থামের সঙ্গে বেঁধে ফের মারধর শুরু হয়। সেই সকালে মোট অন্তত দু’ঘণ্টা ধরে ওঁর উপরে পীড়ন চলেছিল।

বস্তুত হবু ডাক্তারেরা যে রকম নৃশংস ভাবে কোরপানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারণ আঘাত করেছেন, তার নমুনা দেখে গোয়েন্দারা বিস্মিত। এক তদন্তকারীর কথায়, “হস্টেলে মেরামতি চলছিল। তাই বাঁশ বা কাঠের টুকরো হাতের কাছে পেতে অসুবিধে হয়নি। উপরন্তু নির্বিচারে লাথি-ঘুঁষি-কিল-চড় মারা হয়েছে। শেষে কোরপান সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে নিগ্রহকারীরা ক্ষান্ত দেন।” তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সিনিয়র ছাত্রেরা তখন একটা ঘরে বসে চটজলদি ঠিক করে নেন, পুলিশকে ফোনে খবর দেওয়া হবে। এবং পুলিশ এলে সকলে এক সুরে বলবেন, কেউ কিছু জানি না।

ক্যান্টিন-কর্মীদের কাছেও বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া হয়। সকাল সাতটায় এন্টালি থানায় ফোন করে এক জন খবর দেন, এনআরএস হস্টেলের চারতলায় এক যুবক অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে। সাড়ে সাতটা নাগাদ পুলিশ পৌঁছে যায়। কোরপানকে তুলে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। “কিছুক্ষণ আগে নিয়ে গেলে হয়তো ওঁকে বাঁচানো যেত।” মন্তব্য এক তদন্তকারীর। আর এক গোয়েন্দার প্রশ্ন, “যাঁদের দায়িত্ব মানুষের প্রাণ বাঁচানোর, মরণাপন্ন যুবকটিকে তাঁরা ও ভাবে ফেলে রাখতে পারলেন কী ভাবে?”

লালবাজারের খবর, পুলিশ ১৬ নভেম্বর সকালে হস্টেলের চারতলায় উঠে দেখেছিল, সব আবাসিক ঘরের ভিতরে। পরে সকলেই পুলিশকে বলেন, কেউ কিছু দেখেননি, জানেনও না।” এ প্রসঙ্গে এনআরএস-কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তুলেছে পুলিশ। অভিযোগ হাসপাতালের কর্তারা সব জেনেও পুরো ব্যাপারটা চেপে গিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে লালবাজার ইঙ্গিত দিয়েছে। এনআরএস-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, কোরপান-কাণ্ড সম্পর্কে তাঁদের কাছে যত তথ্য আছে, সব পুলিশকে দিয়েছেন। লালবাজার যদিও এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। পুলিশ-কর্তাদের মতে, হস্টেলের আবাসিকদের নাম ও ফোন নম্বর দিতে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ যে ভাবে দেরি করেছেন, আর পরে ফোন নম্বর দিলেও ছবি দিতে যে ভাবে টালবাহানা করেছেন, তা তদন্তে অসহযোগিতারই সামিল।

এ দিকে এনআরএস-কাণ্ডের তদন্তভার সোমবার পুরোপুরি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতেই ন্যস্ত হয়েছে। লালবাজারের গোয়েন্দারা গত এক মাস যাবৎ এন্টালি থানার সঙ্গে যৌথ ভাবে তদন্ত চালাচ্ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

korpan shah murder nrs junior doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE