Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ধস-বন্যায় বিধ্বস্ত পাহাড়, সমতল

দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে সব দল

ধসে পাহাড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই রাজ্য, কেন্দ্র ও দার্জিলিং পাহাড়ের শাসক দল দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দিল। রাতের মধ্যে একে একে বিশেষ বিমান থেকে শুরু করে শতাব্দী এক্সপ্রেসে দিল্লি, কলকাতার ‘ভিভিআইপি’রা জেলায় পৌঁছেও গেলেন।

উদ্ধার করা হচ্ছে ধসে আহত এক বাসিন্দাকে। বুধবার মিরিকের টিংলিঙে।

উদ্ধার করা হচ্ছে ধসে আহত এক বাসিন্দাকে। বুধবার মিরিকের টিংলিঙে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৮
Share: Save:

ধসে পাহাড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই রাজ্য, কেন্দ্র ও দার্জিলিং পাহাড়ের শাসক দল দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দিল। রাতের মধ্যে একে একে বিশেষ বিমান থেকে শুরু করে শতাব্দী এক্সপ্রেসে দিল্লি, কলকাতার ‘ভিভিআইপি’রা জেলায় পৌঁছেও গেলেন। তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কোথাও কী হচ্ছে, কে কী ভাবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা রাত পর্যন্ত একের পর এক ভেসে উঠল প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা জিটিএ প্রধানের ফেসবুক এবং টুইটারের স্ক্রিনে।

আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হবে ভিআইপি’দের এলাকা পরিদর্শনের পালা। কয়েকজন প্রশাসনিক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসক বোর্ড এক যোগে কাজ করায় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা তো হয়। উদ্ধারকাজ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষিত দলের সাহায্য সহজেই মেলে। তবে দুর্গতরা সাহায্য পেলেই ভাল। তা যাঁদের মাধ্যমেই হোক না কেন।’’

বুধবার ভোর রাত থেকে দার্জিলিং জেলার কালিম্পং এবং কার্শিয়াং মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভয়াবহ ধসের খবর আসতে থাকে। মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে রাস্তা বন্ধ, সেতু উড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ভোর থেকেই ‘ময়দানে’ নেমে পড়েন পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা। জিটিএ-র অফিসারেরাও তদারকি শুরু করেন। খবর পৌঁছাতে থাকে কলকাতা, দিল্লি-সহ মোর্চার সদর দফতরেও।

সোমবারই দিল্লি সফর সেরে শৈলশহরে ফিরছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। দেরি না করে এ দিন সপার্ষদ তিনি পৌঁছে যান মিরিকে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানিয়ে কিছু ক্ষণ উদ্ধার কাজের তদারকিও করেন। ব্লক, সদর প্রশাসনের সঙ্গে জিটিএ অফিসার, কর্মীরাও কাজ করছেন বলে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জানান। এর পরেই বেলা ২টো নাগাদ গুরুঙ্গ প্রথমে নিজের ‘অফিশিয়াল’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানান, জিটিএ এলাকায় রাতের ধসে বিরাট প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা মৃতদের পরিবারগুলির পাশে আছেন। জিটিএ ২৪ ঘন্টা দুর্গতদের পাশে থেকে কাজ করবে। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে টিম পাঠানো এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি লিখবেন। শেষে তিনি জানিয়ে দেন, মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ এবং গুরুতর জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মিরিকের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে যান জিএনএলএফের সভাপতি তথা সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে মন ঘিসিঙ্গ। ঘন্টা তিনেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গেও কথাও বলেন। মন ঘিসিঙ্গ জানান, বিরাট ক্ষতি হয়েছে পাহাড়ের। তাঁর কথায়, ‘‘মিরিকের সৌরানিতে আমাদের পৈতৃক বাড়ি শুধু নয়, বাবার বহু স্মৃতিও রয়েছে। দুর্গতদের কাছেই যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’

এই সময় মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদে প্রশাসনিক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি টুইট করা শুরু করেন। ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রথমেই তিনি জানিয়ে দেন, ‘স্বরাষ্ট্র সচিব উত্তরবঙ্গেই আছেন। আমি পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। মুর্শিদাবাদ থেকে ওই জেলায় পৌঁছব।’ উল্লেখ্য, বীরভূমের সফর বাতিল করে রাতেই মুখ্যমন্ত্রী শতাব্দী এক্সপ্রেসে শিলিগুড়ি চলে আসেন। পরে রাত অবধি একের পর এক টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মৃত্যুর সংখ্যা, ময়নাতদন্তের হাল হকিকৎ জানাতে থাকেন। এর এক ফাঁকেই তিনি জানিয়ে দেন, মৃতদের পরিবার পিছু রাজ্য ৪ লক্ষ টাকা করে দেবে।

বিকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এলাকায় পৌঁছচ্ছেন। এনডিআরএফের দলও কাজ করছে। মোদী জানান, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

সন্ধ্যায় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি জানান, ‘‘যাঁদের সত্যিই ক্ষতি হয়েছে, তাঁরাই যাতে সাহায্য পান তা দেখতে হবে। জেলাশাসকের মাধ্যমেই যেন ক্ষতিপূরণ সব জায়গা পৌঁছয়।’’

বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE