Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দেরিতে হলেও বাংলার উপকূলে জোড়া রেডার

বারবার তোড়জোড়ের কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু উপকূলে নজরদারির জন্য রেডার পাচ্ছিল না পশ্চিমবঙ্গ। যদিও উপকূলীয় নজরদারি প্রকল্পের আওতায় বেশির ভাগ রাজ্যেই এই ধরনের রেডার কাজ শুরু করেছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

বারবার তোড়জোড়ের কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু উপকূলে নজরদারির জন্য রেডার পাচ্ছিল না পশ্চিমবঙ্গ। যদিও উপকূলীয় নজরদারি প্রকল্পের আওতায় বেশির ভাগ রাজ্যেই এই ধরনের রেডার কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেশী ওড়িশার কপালও বাংলার তুলনায় ভাল। সেখানে ইতিমধ্যেই জোড়া রেডার কাজ করছে।

গোটা দেশের তুলনায় কিছু দেরি হলেও পশ্চিমবঙ্গের সেই অভাব এত দিনে মিটতে চলেছে। সাগরদ্বীপ ও পূর্ব মেদিনীপুরের দাদনপাত্রবাড়ে রেডার বসাচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। এক দিকে বিস্তৃত উপকূল। অন্য দিকে ঘন জঙ্গল-খাঁড়িতে ঘেরা সুন্দরবন। সেনাকর্তাদের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের এই পথ বেয়ে যে-কোনও সময়েই হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা! সেটা মাথায় রেখেই আপাতত জোড়া রেডার চালু করে দেওয়া হচ্ছে।

অগস্টের গোড়াতেই কলকাতায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর কম্যান্ডারদের বার্ষিক বৈঠক রয়েছে। তাই তড়িঘড়ি রেডার চালু করার চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কলকাতা আঞ্চলিক দফতরের মুখপাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র জানান, সাগরে রেডার বসানোর কাজ প্রায় শেষ। অগস্টেই তা চালু করা হবে। তার পরে রেডার নির্মাণের কাজ শুরু হবে দাদনপাত্রবাড়ে।

প্রশ্ন উঠেছে, দেশের অন্যান্য অংশে অনেক আগে ওই রেডার চালু করা হলেও এ রাজ্যে দেরি হল কেন?

‘‘সাগর একটু প্রত্যন্ত জায়গা। তাই সেখানে রেডার বসানোর কাজে বেশি সময় লেগেছে,’’ যুক্তি দেখাচ্ছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র।

সোমবার পঞ্জাবের গুরদাসপুরে জঙ্গি হামলার পরে এই রেডারের উপযোগিতা আরও বেশি করে সামনে আসছে বলে উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর। সম্প্রতি কলকাতায় সাবসিডিয়ারি মাল্টি এজেন্সি সেন্টারের বৈঠকে বাহিনীর এক কর্তা বলেছিলেন, পুজোর আগে গুজরাত বা মুম্বইয়ে জঙ্গি হানার আশঙ্কা আছে। সেই আশঙ্কা সত্যি করে হানা দিয়েছে জঙ্গিরা। তবে মুম্বই বা গুজরাতে নয়, পঞ্জাবে।

এই পরিস্থিতিতেই বাংলার বিস্তীর্ণ উপকূলে তড়িঘড়ি ওই রেডার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, কয়েক দশক আগে বাহিনী তৈরি হলেও এ রাজ্যের উপকূলের নিরাপত্তায় সে-ভাবে জোর দেওয়া হয়নি। চেন্নাইয়ে বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর থেকেই এখানে বাহিনীর কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হত। কিন্তু মুম্বইয়ে জঙ্গি হানা এবং বঙ্গোপসাগরে চিনা জাহাজের আনাগোনা বাড়ার ফলে কার্যত অরক্ষিত বাংলা-ওড়িশা উপকূলের গুরুত্ব বুঝতে পারেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। তাই কলকাতায় বাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দফতর খোলা হয়। বাংলা-ওড়িশা উপকূল এখন তাদেরই আওতায়।

সেনা সূত্রের খবর, চিনের আগ্রাসী মনোভাবের কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বারে বারেই বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলছে। সেই জন্যই একের পর এক শক্তিশালী জাহাজ পাচ্ছে নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনী। তার উপরে বঙ্গোপসাগরে চোরাশিকার এবং চোরাচালান ঠেকাতেও জোরদার তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে উপকূলরক্ষী বাহিনীর দাবি। তারা বলছে, শীঘ্রই ‘অনমোল’ নামে একটি জাহাজ এবং আরও একটি দ্রুত গতির বোট আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সব সময় একটি হোভারক্রাফট মোতায়েন রাখা হচ্ছে ফ্রেজারগঞ্জের কাছে। পুরো কর্মকাণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে চালু করা হচ্ছে নজরদার রেডার।

কী রয়েছে ওই রেডারে?

উপকূলরক্ষী বাহিনীর অফিসারেরা জানান, ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল বা বেল)-এর তৈরি করা ওই রেডারে রয়েছে সাধারণ ও ইনফ্রারেড ক্যামেরা। তার ফলে দিন হোক বা রাত, উপকূলের জলে এবং আকাশের অনেকটা জুড়ে নজরদারি চালানো যাবে। প্রয়োজনে ওই রেডার দিয়েই জলে-আকাশের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারবে নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনী। বিভিন্ন নৌকায় যে-অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বসানো রয়েছে, তাতেও নজর রাখবে ওই রেডার। উপকূলীয় এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম তাকে কাজে লাগানো হবে। ‘‘এই রেডারের সাহায্যে সাগরে বিপন্ন নৌকা বা জাহাজকে দ্রুত উদ্ধারও করা যাবে,’’ বললেন এক উপকূলরক্ষী-কর্তা।

এক-একটি রেডার ২৫-৩০ নটিক্যাল মাইল ব্যাসার্ধ জুড়ে কাজ করবে। সেই হিসেব কষেই পশ্চিমবঙ্গে দু’টি রেডার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তা। ওড়িশার পারাদ্বীপ ও গোপালপুরে এই ধরনের রেডার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ বার পুরী আর চন্দ্রভাগায় আরও দু’টি নজরদার রেডার বসানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE