Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দূষণেরই দাপট, কাঠগড়ায় এ বার পৌষমেলা

গত কয়েক বছরে রাজ্যে মেলার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। সরকারি মেলা যেমন বেড়েছে, বেড়েছে শাসক দলের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট মেলার সংখ্যাও। মেলার এই বাড়বাড়ন্তে পরিবেশের কী দশা হচ্ছে, শুক্রবার সেই প্রশ্নটাই উঠে এল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতের কলকাতা বেঞ্চে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

গত কয়েক বছরে রাজ্যে মেলার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। সরকারি মেলা যেমন বেড়েছে, বেড়েছে শাসক দলের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট মেলার সংখ্যাও। মেলার এই বাড়বাড়ন্তে পরিবেশের কী দশা হচ্ছে, শুক্রবার সেই প্রশ্নটাই উঠে এল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালতের কলকাতা বেঞ্চে।

সাগরমেলায় জীবাণুদের জঙ্গিপনা-সহ ভয়াবহ দূষণের কথা ওই আদালতে আগেই জানিয়েছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। এ বার পৌষমেলার দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। গঙ্গাসাগরে কঠিন বর্জ্য নষ্ট করার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই পরিবেশকর্মী। বলেছিলেন, মেলার মাঠ ঝাঁট দিয়ে সাফ করানো হয়েছিল। কিন্তু সেই জঞ্জাল এক জায়গায় জড়ো করে পোড়ানোয় সংশ্লিষ্ট এলাকার বায়ুদূষণও ব্যাপক আকার নিয়েছে।

এ বার সুভাষবাবুর অভিযোগ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরের মধ্যে পৌষমেলার মাঠে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ডাঁই করা হয়েছিল। জমেছিল আরও প্রচুর কঠিন বর্জ্য। সেগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নষ্ট না-করে খোলা মাঠেই পোড়ানো হয়। অর্থাৎ সাগরমেলার মতোই ফের ছড়ানো হয়েছে বায়ুদূষণ। তা ছাড়াও মেলায় দেদার মাইক বেজেছে। নিয়ম ভেঙে চালানো হয়েছে ডিজেল জেনারেটর। ‘‘পৌষমেলার মতো বড় মেলাতেই যদি এই হাল হয়, পাড়ার মেলার অবস্থা কী, তা তো সহজেই বোঝা যাচ্ছে,’’ মন্তব্য সুভাষবাবুর।

ওই পরিবেশকর্মীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, বিশ্বভারতী-কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের পরিবেশ দফতরকে এই ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। মেলা নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছেও রিপোর্ট চেয়েছে পরিবেশ আদালত।

বাম আমলেও রাজ্যে নানান কিসিমের মেলার চল ছিল। কিন্তু ‘পরিবর্তনের জমানা’য় তা বহু গুণ বেড়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেয় সরকারি উদ্যোগে জেলায় জেলায় মেলা তো হচ্ছেই। শাসক দলের মেজো-সেজো-ছোট নেতারাও মুখ্যমন্ত্রীর অনুকরণে পাড়ায় পাড়ায় মেলায় মেতেছেন।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, মেলা হলে লোক সমাগম হবেই। ধুলো উড়বে। জমবে নানা ধরনের বর্জ্যও। তাই মেলা করতে হলে কয়েকটি বিধিনিষেধ মানতেই হবে। এ নিয়ে পরিবেশ দফতরের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে: l ৪০ মাইক্রনের থেকে পাতলা এবং নির্দিষ্ট মাপের থেকে ছোট ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ। l মাইক বাজাতে হবে শব্দসীমা মেনে। l ধুলো কমাতে জলের স্প্রিংকলার রাখতে

হবে। l গাছে আলো লাগানো যাবে না। l কঠিন বর্জ্য নষ্ট করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে। l বর্জ্য পোড়ানো চলবে না। l মেলা শেষে মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই নির্দেশিকায় জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে, মেলা করতে গেলে এই পরিবেশ বিধি মেনে চলতে হবে। বিধি না-মেনে মেলা করলে মাঝপথেও অনুমতি প্রত্যাহার করা হতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারে প্রশাসন।

কিন্তু সেই বিধি মানা হচ্ছে কি?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, মেলা হলেও যাতে দূষণটা নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে যে-ভাবে মেলার সংখ্যা বেড়েছে, তাতে নির্দেশিকা কতটা মানা হয়, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দিহান তিনি। ‘‘মেলা বাম জমানাতেও হতো। কিন্তু এই আমলে তো মেলা শিল্পের পর্যায়ে চলে গিয়েছে,’’ তির্যক মন্তব্য দূষণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তার।

একই মত পর্ষদের অনেক বর্তমান কর্তারও। তাঁদের অনুযোগ, এ আমলে প্রায় সব মেলার পিছনেই রাজনৈতিক মদত থাকে। আবার পঞ্চায়েত বা পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনও শাসক দলের হাতে। তাই মেলা করার ক্ষেত্রে পরিবেশ দফতরের ওই নির্দেশিকার বেড়ি উদ্যোক্তাদের পায়ে কার্যত পড়ে না বললেই চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE