Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুষ্কৃতীদের মারে মারা গেলেন প্রতিবাদীর বাবা

ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীদের বন্দুকের নিশানা হয়েছিল ছেলে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু আওয়াজ শুনে বাবা বাইরে বেরিয়ে আসায় তাঁকেই পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার বুনিয়াদপুর শহরের পিরতলা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় বৃদ্ধ রমেশ তিওয়ারিকে (৬৮) এ দিন গভীর রাতে মালদহ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীদের বন্দুকের নিশানা হয়েছিল ছেলে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু আওয়াজ শুনে বাবা বাইরে বেরিয়ে আসায় তাঁকেই পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার বুনিয়াদপুর শহরের পিরতলা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় বৃদ্ধ রমেশ তিওয়ারিকে (৬৮) এ দিন গভীর রাতে মালদহ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। অভিযুক্তরা মোটরবাইক নিয়ে পালানোর সময় রাস্তায় পড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সুমন সরকার ও পাবন মুখোপাধ্যায়। তারা এলাকায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ধৃত সুমনের সঙ্গে মৃতের পরিবারের আত্মীয়তা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

নিহতের পরিবার সূত্রের খবর, গত বছর পুজোর সময় পাড়ার মণ্ডপে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করতে দেখে প্রতিবাদ করেছিল রমেশবাবুর ছোট ছেলে প্রদীপ্ত ওরফে বাবুন। সে সময় বাবুনকে শাসিয়ে ছিল সুমন ও পাবন। মাস দু’য়েক আগে পাড়ার বাসস্ট্যান্ডে বাবুনের বোনকে কটূক্তি করা নিয়ে ফের বিবাদে জড়ায় তারা। কিন্তু সুমন বাবুনের এক খুড়তুতো বোনের স্বামী। তাই বাবুনের পরিবার এই ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ জানায়নি।

অভিযোগ, পুরোনো বিবাদের জেরে বাবুনকে শিক্ষা দিতে এ দিন রাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় সুমন ও পাবন। বাড়ির সামনেই বাবুনকে খুন করতে গুলি চালায় তারা। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আওয়াজ শুনে বাবুনের বাবা বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রমেশবাবু বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলে তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। জেলা এসপি শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের ধরা হয়েছে। তবে মৃতের বাড়ির লোকের তরফে এখনও অভিযোগ মেলেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মঙ্গলবার মালদহে রমেশবাবুর দেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পরিবারের লোকজন। রমেশবাবুর বড় ছেলে প্রশান্তবাবু জানান, তাঁরা বুনিয়াদপুরে ফিরে থানায় অভিযোগ করবেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ওরা ভাইকে গুলি করে মারতে এসেছিল। ভাই কপাল জোরে বাঁচলেও ওরা বাবার মাথায় লাঠি মেরে খুন করল।’’

ধৃত সুমন ও পাবনের দাবি, ‘‘গুলি চালানোর অভিযোগ মিথ্যা। বরং বাবুনরা আমাদের উপর চড়াও হয়েছিল। পালানোর সময় বাইকের ধাক্কায় ওই বৃদ্ধ পড়ে গিয়ে জখম হন। আমরা তাকে খুন করিনি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুনিয়াদপুরের তৃণমূল সমর্থক এক আইনজীবীর মদতপুষ্ট ওই দুই যুবক নানা অসামাজিক কাজ করলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই তারা এ বার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলারও সাহস পেয়েছে বলে অভিযোগ। ওই আইনজীবীর মোবাইল বেজে গেলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ওই আইনজীবীর সঙ্গে দীর্ঘদিন তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ গৌতম সেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জেনেছি। ওদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। ঘটনাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE