Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দেহ আনতে এসে দলের লড়াইকেই দুষলেন মাখড়াবাসী

ঘটনার তিন দিন পার। তবু ঘরের ছেলেদের মৃত্যুর ক্ষোভ যায়নি পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। একদিকে ঘটনার জন্য ‘রাজনীতি’কে দুষছেন তাঁরা। আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সিউড়ি হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। একদিকে রাজনীতির তিক্ততা, দলের রং ভুলে একসঙ্গে তৃণমূল সমর্থক মোজাম্মেল হক ও বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফের দেহ নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তো করছিলেন শতাধিক গ্রামবাসী, কেউ কেউ আবার বারবার বলছিলেন সিউড়ি হাসপাতালে ময়না-তদন্ত করাতে গিয়ে হয়রানির ঘটনা।

মর্গের সামনে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

মর্গের সামনে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

ঘটনার তিন দিন পার। তবু ঘরের ছেলেদের মৃত্যুর ক্ষোভ যায়নি পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। একদিকে ঘটনার জন্য ‘রাজনীতি’কে দুষছেন তাঁরা। আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সিউড়ি হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। একদিকে রাজনীতির তিক্ততা, দলের রং ভুলে একসঙ্গে তৃণমূল সমর্থক মোজাম্মেল হক ও বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফের দেহ নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তো করছিলেন শতাধিক গ্রামবাসী, কেউ কেউ আবার বারবার বলছিলেন সিউড়ি হাসপাতালে ময়না-তদন্ত করাতে গিয়ে হয়রানির ঘটনা। এ দিন দেহ তিনটি নিতে গ্রাম থেকে ম্যাটাডর, ভ্যান, গাড়িতে করে শতাধিক লোক এসেছিলেন। দু’জনের দেহ একই ম্যাটাডরে তুলে নিয়েও যাওয়া হয়। নিহত শেখ মোজাম্মেলের এক আত্মীয় শেখ মুসারফ বলেন, “গ্রামের ওই দু’জন পরস্পরের আত্মীয়ও ছিলেন। দু’জনের মৃত্যুর পরে গ্রামে আসা আত্মীয়স্বজনের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে একসঙ্গে। দু’জনকে কবর দেওয়াও হবে পাশাপাশি।” আর এক নিহত শেখ সুলেমান অবশ্য পাশের গ্রাম দুবরাজদিঘি থানার সালুঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দেহেও এ দিন তাঁর গ্রামের মানুষের পাশাপাশি ফুল দিয়েছেন পাড়ুই থানার মাকরা গ্রামের লোকেরা। দেহ তোলার সময়েও দুই গ্রামের বাসিন্দারাই হাত লাগিয়েছেন। দিনভর দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের নিজেদের মধ্যে হা-হুতাশ করতে দেখা গিয়েছে। পরস্পরকে সান্তনাও দিয়েছেন তাঁরা। যেমন, তৌসিফের কাকা আব্দুস সাত্তার পাশে বসে থাকা সালুঞ্চির মুস্তাককে বলছিলেন, “কী যে হল? তোমাদের গ্রামের ছেলেটা কী করে মারা গেল? কার দোষে যে এমনটা ঘটল?” মুস্তাক বলেন, “কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সবই কপালের দোষ। নইলে আমাদের সঙ্গে তোমাদেরই বা এত গোলমাল বেধে গেল কেন? রাজনীতিই আমাদের শেষ করে দিল।”

এ দিন সিউড়ি মর্গের বিরুদ্ধেও হয়রানির অভিযোগ তোলেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। মাকড়ার বাসিন্দা শেখ আনোয়ার ও সালুঞ্চির দুলু শেখের দাবি, “মঙ্গলবার আমরা দিনভর সিউড়ি মর্গে পড়েছিলাম। শেষে মর্গের ডাক্তারেরা জানালেন, যেহেতু নিহতদের শরীরে গুলি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দেহগুলি বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হবে। আপনারা সেখানেই চলে যান।” তাঁদের অভিযোগ, “বর্ধমানের যদি পাঠানো হবে সে কথা আগে জানানো হল না কেন? তাহলে সারাদিন নষ্ট হত না।” পাড়ুই থানার এক পুলিশ অফিসারও বুধবার ময়না-তদন্তের পরে বলেন, “সিউড়ির মর্গে সামান্য জটিল ময়না-তদন্তও করা হয় না। কারণ ওখানে অটোপসি সার্জেন নেই। এমনকী জলে ডোবা কেসের ময়না-তদন্তও বর্ধমানে করাতে হয় আমাদের।” ওই পুলিশ কর্মী আরও জানান, ময়না-তদন্তে পাওয়া গিয়েছে যে শেখ মোজাম্মেলকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তাঁর সারা শরীরেই চোট-আঘাত রয়েছে। প্রত্যেকের শরীরে গুলির আঘাতও রয়েছে। তবে কারও শরীরের ভেতরে গুলি পাওয়া যায়নি। গুলি শরীর ফুঁড়ে বের হয়ে গিয়েছে।

এ দিন মর্গে প্রচুর পুলিশ ছিল বীরভূমের ওই দুটি গ্রামের মানুষের মধ্যে গোলমাল ঠেকাতে। তবে কোনও গোলমাল হয়নি, ফলে পুলিশের বিশেষ কিছু করার ছিল না। বর্ধমান থানার এক পুলিশ কর্মীও বলেন, “দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব দেখতে পাব, ভাবিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE