Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধূপগুড়িতে সাক্ষী খুনে ধৃত ছাত্রীর বাবা-মামা

ধূপগুড়িতে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় প্রধান সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে দোষীরা সাজা পাবেন বলে ভেবেছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু সেই সাক্ষী খুনের মামলায় মেয়েটির বাবা এবং মামাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শাসক দলের একাংশের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই এই কাণ্ড বলে অভিযোগ উঠেছে।

ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর বাবাকে জলপাইগুড়ি আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। শনিবার রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ধূপগুড়ির নিহত ছাত্রীর বাবাকে জলপাইগুড়ি আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। শনিবার রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

ধূপগুড়িতে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় প্রধান সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে দোষীরা সাজা পাবেন বলে ভেবেছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু সেই সাক্ষী খুনের মামলায় মেয়েটির বাবা এবং মামাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শাসক দলের একাংশের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই এই কাণ্ড বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শনিবার ধৃতদের পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ঘটনার প্রতিবাদে ‘ধূপগুড়ি নাগরিক সমিতি’ এ দিন দুপুরে মিছিলের ডাক দিলেও তাতে তেমন ভিড় হয়নি। যাঁরা মিছিলে গিয়েছিলেন, তাঁরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। কারণ, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও সে অভিযোগও মানেনি শাসক দল।

দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী গত বছর ১ সেপ্টেম্বর এক সালিশিসভায় ‘নিগৃহীত’ হওয়ার পরে নিখোঁজ হয়। পরদিন ভোরে কাছের এক রেললাইনে তার বিবস্ত্র দেহ মেলে। তাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। ধূপগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা রায়ের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায়, দলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ভৌমিক, কমিটির সম্পাদক তহিদুল ইসলাম-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। ওই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন নিতাই সিংহ রায়, যিনি ছাত্রীটির উপরে সালিশিসভায় অত্যাচার হতে দেখার কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন।

গত ২ নভেম্বর সেই নিতাইবাবুর রক্তাক্ত দেহ ধূপগুড়ির একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার হয়। তাঁর স্ত্রী নিহত ছাত্রীর বাবা ও মামা-সহ মোট পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কেন মেয়ের মামলার প্রধান সাক্ষীকে তাঁরা খুন করবেন, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা অভিযোগকারিণী তাদের দিতে পারেননি বলে পুলিশের একাংশই সে সময়ে দাবি করেছিল।

নিহত ছাত্রীর বাবা-মামাকে এ দিন সকালে ধূপগুড়ি থানায় ডেকেছিল পুলিশ। সেখানে যেতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “নিতাই সিংহ রায় খুনের তদন্তে কিছু সূত্র মিলেছে। তাই ওই দু’জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।”

আদালতে হাজির করানোর আগে নাবালিকার বাবা বলেন, “পুলিশ যখন ডেকেছে, দেখা করেছি। পালিয়ে যাইনি। তার পরেও গ্রেফতার হতে হল!’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি তৃণমূল নেতা গোবিন্দ ভৌমিক গত মাসে মেয়ের খুনের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের ৫ লক্ষ টাকা এবং একটি ঘর দিতে চেয়েছিলেন। রাজি হইনি। তাই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ওঁরা প্রতিশোধ নিলেন।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে গোবিন্দবাবু দাবি করেছেন, “ওঁদের সঙ্গে দেখাই হয়নি, কথা তো দূরস্থান!”

জলপাইগুড়ি আদালতে (থার্ড কোর্ট) এ দিন ধৃতদের পক্ষের আইনজীবী শঙ্কর দে এবং সমীর সরকার বিচারককে জানান, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই মেয়েটির পরিবারের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা কার্যকরী না হওয়ায় নিতাইবাবুর স্ত্রী-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধৃতদের ফাঁসানো হয়েছে। জামিনের আবেদনও করেন তাঁরা। তবে সে আবেদনের বিরোধিতা করেন সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ সরকার।

গ্রেফতার-পর্বের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় ধূপগুড়ি-সহ জেলার সাতটি ব্লকেই বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। দলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের অভিযোগ, ‘‘নাবালিকার অপমৃত্যুর মামলা প্রত্যাহারের জন্য মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে লাভ হয়নি বলেই তার বাবা-মামাকে
ফাঁসিয়েছে শাসক দল।’’ যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। পুলিশ নিজেদের মতো কাজ করছে। আমরাও চাই, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক।”

ঘটনাপরম্পরায় প্রায় হতবাক নিহত ছাত্রীর মা। কোনও মতে বলেছেন, ‘‘যিনি (নিতাই) বেঁচে থাকলে আমার মেয়ের উপরে অত্যাচার করা লোকগুলোর শাস্তি হওয়ার আশা ছিল, তাঁর খুনের মামলায় আমার স্বামী-ভাইকেই ধরল পুলিশ! এর পরে কী বলব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE