যারা নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করে, সেই ভিজিল্যান্স কমিশনের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি বা ওএসডি-র পদে আছেন তিনি। এমনই এক বিশেষ অফিসারকে রাজ্যের কৃষি দফতরে নিয়োগ-দুর্নীতির একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধৃত অফিসারের নাম অশ্বিনীকুমার সামন্ত। কৃষি দফতরে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল সাত বছর আগে, বাম জমানায়। সেই সময় অশ্বিনীবাবু ছিলেন কৃষি দফতরের যুগ্মসচিব। নবান্ন সূত্রের খবর, কৃষি দফতর থেকে অবসর নেওয়ার পরে ভিজিল্যান্স কমিশনের ওএসডি হন তিনি। গত সপ্তাহে তাঁর পাটুলির বাড়ি থেকে গোয়েন্দারা তাঁকে গ্রেফতার করেন। আদালতের নির্দেশে তিনি এখন লালবাজারে পুলিশি হেফাজতে।
লালবাজার সূত্রের খবর, বাম আমলে কৃষি দফতরের ওই দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকার সিআইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দেয় গত বছরের শেষ দিকে। সিআইডি-র এক ডিএসপি তদন্তের পরে চলতি বছরের এপ্রিলে রিপোর্ট পেশ করেন নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের কাছে। রিপোর্টে নিয়োগে দুর্নীতির কথা আছে। রিপোর্টে অশ্বিনীবাবু ও অন্য তিন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তদন্তদল জানায়। ওই দুর্নীতির রিপোর্ট হাতে আসার পরে রাজ্যের কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস গত ২৬ মে হেয়ার স্ট্রিট থানায় একটি অভিযোগ করেন। তাতে অশ্বিনীবাবু-সহ কৃষি দফতরের প্রাক্তন চার কর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা ও অন্যান্য অভিযোগ আনা হয় বলে পুলিশি জানায়। অশ্বিনীবাবু ছাড়া অন্য তিন প্রাক্তন কৃষিকর্তা আগাম জামিনে আছেন।
২০০৭-এ কৃষি অধিকর্তার অফিসে ৩৩১টি পদে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। তার ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই পরীক্ষায় প্রায় ৩১ হাজার প্রার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড পাঠানোই হয়নি। নিয়ম ভেঙে তড়িঘড়ি পরীক্ষা কেন্দ্র বদল করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, প্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ ছিল, তাঁরা যাতে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে না-পারেন, সেই জন্য এ ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র বদল করা হয়েছে। এই ধরনের বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে ওই পরীক্ষা বাতিল করে দেয় তৎকালীন বাম সরকার। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এক পরীক্ষার্থী প্রথমে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, পরে কলকাতা হাইকোর্ট এবং শেষে সুপ্রিম কোর্টে যান।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, সেই মামলায় ২০১২ সালে হাইকোর্টে ও পরে ’১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে হেরে যায় রাজ্য। উচ্চ আদালত এবং শীর্ষ আদালতে মামলা চলাকালীন কৃষি দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা ওই নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলপত্র খুঁজে পাননি। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ফাইল লোপাটের পিছনে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রকের কিছু শীর্ষ কর্তার বড় ভূমিকা ছিল। ফাইল লোপাট এবং ওই নিয়োগে কৃষি দফতরের এক শ্রেণির অফিসার-কর্মীর স্বার্থসিদ্ধির অভিসন্ধি নিয়ে যে-অভিযোগ উঠেছিল, ’১৩ সালে রাজ্যের নতুন সরকার তার তদন্ত করতে বলে সিআইডি-কে।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, ওই নিয়োগ সংক্রান্ত প্যানেলে ছিলেন অশ্বিনীবাবু এবং অন্য তিন কৃষি অফিসার। এবং অশ্বিনীবাবুই ফাইলটি সরিয়েছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ৩১ হাজার প্রার্থী যে অ্যাডমিট কার্ড পাননি, তার পিছনেও ওই কৃষিকর্তার কারসাজি ছিল বলে তদন্তে জেনেছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy