Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়শির পাশে দাঁড়ানোয় হামলা, নেতার ‘মার’ প্রতিবাদীর বাবাকে

দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের প্রতিবাদ করে খুন হয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছির প্রতিবাদী কলেজ-ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। সে ঘটনার এখনও বছর ঘোরেনি। মঙ্গলবার রাতে এলাকায় শাসক দলের নেতা বলে পরিচিত এক পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে ‘আক্রান্তের’ পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মার খেলেন সৌরভের দাদা সন্দীপ ও বাবা সরোজ চৌধুরীও। মারধর করার অভিযোগে তুষার মজুমদার ওরফে বিশু নামে ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের ওই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনায় ধৃত তুষার মজুমদার। ডান দিকে, সৌরভের বাবা। —নিজস্ব চিত্র।

ঘটনায় ধৃত তুষার মজুমদার। ডান দিকে, সৌরভের বাবা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের প্রতিবাদ করে খুন হয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছির প্রতিবাদী কলেজ-ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। সে ঘটনার এখনও বছর ঘোরেনি। মঙ্গলবার রাতে এলাকায় শাসক দলের নেতা বলে পরিচিত এক পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে ‘আক্রান্তের’ পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মার খেলেন সৌরভের দাদা সন্দীপ ও বাবা সরোজ চৌধুরীও। মারধর করার অভিযোগে তুষার মজুমদার ওরফে বিশু নামে ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের ওই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সৌরভ-হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত শ্যামলকান্তি কর্মকারের পৃষ্ঠপোষক বলে এলাকায় পরিচিত বিশু ভোটে জেতেন তৃণমূলের প্রতীকে। এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের দাবি, তৃণমূলের বিজয়-মিছিলে হামলার অভিযোগেই ঝামেলা জোড়েন বিশু। যদিও তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুধবার জানিয়েছেন, তদন্ত করে নানা রকম অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বিশুকে অনেক দিন আগেই দল বহিষ্কার করেছে। এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরোজবাবুদের বিরুদ্ধে থানায় মারধরের পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিশুও।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ বামনগাছির কুলবেড়িয়ার একটি ক্লাবে বসে আইপিএলের খেলা দেখছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। সেই সময় কাশিমপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের টিকিটে জেতা নিখিল দাসের নেতৃত্বে শাসক দলের একটি বিজয়-মিছিল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল।

ক্লাবের সদস্য জগন্নাথ দে এলাকায় বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ক্লাবের সামনে পটকা ফাটিয়ে চিৎকার করছিল কয়েকজন। তাতে নিষেধ করায় নিখিল দাসের লোকেরা আমাদের মারধর করে।’’ জগন্নাথবাবুর দাবি, এর পরে তিনি কাছেই নিজের দোকানে চলে যান। মোটরবাইকে চেপে সেখানে এসে আচমকা তাঁকে দোকান থেকে টেনে বার করে মারতে শুরু করেন বিশু। বলতে থাকেন, ‘‘বিজয় মিছিলে হামলা করেছিস, বড় দাদা হয়েছিস!’’ রাতের মধ্যে বামনগাছি ছাড়তে হবে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।

বেগতিক বুঝে স্থানীয় বিজেপি নেতা শম্ভু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে খবর দেন জগন্নাথ। শম্ভুবাবু পড়শি সৌরভদের বাড়িতে খবর দেন। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সরোজবাবু, সৌরভ আর এলাকার কয়েকজন এক সঙ্গে জগন্নাথের বাড়ি যান। অভিযোগ, সেখানে যেতেই তাঁদের উপরে চড়াও হন বিশু। এ দিন বারাসত হাসপাতালে শুয়ে সরোজবাবু বলেন, ‘‘কারণ ছাড়াই আমাকে মারল বিশু। আমার বাঁ চোখে, মাথার পিছনে লেগেছে।’’

চৌধুরীদের বাড়ির সামনেই রয়েছে পুলিশ-ক্যাম্প। ঘটনার কথা তাদের না জানিয়ে কেন সন্দীপরা রাতে বাড়ি থেকে বেরনোর ঝুঁকি নিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জেলা পুলিশের একাংশ। সন্দীপ অবশ্য বলছেন, ‘‘এলাকায় গণ্ডগোলের কথা তো আমাদের আগে পুলিশের জানার কথা! পাড়ার এক জনকে দু’দফায় মারধর করা হয়েছে, এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে শুনেই আমরা ছুটে গিয়েছিলাম।’’

নিখিল দাসের সঙ্গে এ দিন বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বিশুর মতো নিখিলও এখন তৃণমূলের কেউ নন বলে দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, বিশু ও নিখিল—দু’জনের বিরুদ্ধেই তোলাবাজি, মারধরের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের আগে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

সরোজবাবুকে দেখতে এ দিন হাসপাতালে যান সুজন চক্রবর্তী, রেখা গোস্বামীর মতো সিপিএম এবং শমীক ভট্টাচার্যের মতো বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চলে গিয়েছেন সৌরভ। সেই অন্যায়েরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁর বাবা-দাদার আক্রান্ত হওয়াটা অমানবিক ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE