Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিদর্শকদের উপহার দিয়ে বিতর্কে যাদবপুর

দিল্লি থেকে পরিদর্শকেরা এসেছেন শুনেই তাঁদের হোটেলে দামি উপহার পাঠানো হয়েছিল। আর সেই উপহারকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরিদর্শকদলের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। যদিও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁদের জানা নেই।

সাবেরী প্রামাণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

দিল্লি থেকে পরিদর্শকেরা এসেছেন শুনেই তাঁদের হোটেলে দামি উপহার পাঠানো হয়েছিল। আর সেই উপহারকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরিদর্শকদলের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। যদিও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁদের জানা নেই।

ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (নাক)-এর প্রতিনিধিদল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে আসে গত মঙ্গলবার। সল্টলেকে ঢোকার মুখে বাইপাসের ধারে একটি নামী হোটেলে ওঠেন ওই দলের সদস্যেরা। একটি সূত্রের খবর, ওই দিনই হোটেলে তাঁদের জন্য উপহার পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।

কী দেওয়া হয় পরিদর্শকদের?

নামী সংস্থার ব্যাগে ফাইল, পেন ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে একটি ট্যাবলেটও দেওয়া হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, ট্যাবলেটটি অত দামি নয়। তার পরের দু’দিন ছাত্র, গবেষক, শিক্ষক-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেন পরিদর্শকেরা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে শুক্রবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। এ দিনই উপহারের ট্যাবলেট উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর কাছে ফেরত দেন দলের চেয়ারম্যান।

নাক সারা দেশেরই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পরিদর্শন চালিয়ে পঠনপাঠন, গবেষণা, পরিকাঠামো ইত্যাদির নিরিখে নম্বর দেয়। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন করাই তাদের কাজ। নাক-এর আচরণবিধি অনুযায়ী পরিদর্শকেরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উপহার নিতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে নগদ দিতে চাইলেও তা নেওয়ার নিয়ম নেই। কেন উপহার নেওয়া হয় না, তা ব্যাখ্যা করেন নাক-এর এক সদস্য। তিনি বলেন, “উপহার দেওয়াটা অনেকটা উপঢৌকনের মতো মনে হয়। কাজকর্মের নিরিখেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন হবে। সেখানে উপহারের জায়গা কোথায়!” যাদবপুরেরই এক প্রাক্তন কর্তা জানান, উপহার দেওয়ার জন্য মূল্যায়নের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, এমন নজিরও আছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই নাক-এর বিচারে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এসেছে। এক সময় নাক-এর মূল্যায়নে পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমাও পেয়েছিল তারা। ২০০৮-এ সর্বোচ্চ গ্রেড ‘এ’ পায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়। তা হলে এ বার আলাদা ভাবে দামি উপহার দেওয়ার দরকার হল কেন?

রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমি ক্যাম্পাস দেখার দায়িত্বে ছিলাম।” একই প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ কর্তাকে। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমার মুখ খোলা ঠিক হবে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্তা বলেন, “ঘটনাটার কথা শুনেছি। তবে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে পারব না।” এই বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য উপাচার্য অভিজিৎবাবুকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি।

আচরণবিধিতে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নাক-এর পরিদর্শকেরাই বা উপহার নিয়েছিলেন কেন?

পরিদর্শকদলের সদস্য, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলার এক্তিয়ার আমাদের নেই।”

উপহার দেওয়ার সমালোচনা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। ওই সংগঠনের এক প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের এক প্রাক্তন সদস্য বলেন, “এমন জিনিসপত্র দেওয়া যাদবপুরের ঐতিহ্যের পক্ষে একেবারে বেমানান। অতীতে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। আশা করি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur university saberi pramanik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE