Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পলাতক পাকড়াতে পুরস্কার

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত পলাতকদের হদিস পেতে এ বার পুরস্কার ঘোষণা করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, পলাতক ১২ জনের মধ্যে পাঁচ জনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা, তিন জনের জন্য পাঁচ লক্ষ ও বাকি চার জনের প্রত্যেকের জন্য তিন লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আদালতের কাছে পলাতকদের অনেকের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নেওয়ার আর্জিও জানাতে চলেছে এনআইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত পলাতকদের হদিস পেতে এ বার পুরস্কার ঘোষণা করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, পলাতক ১২ জনের মধ্যে পাঁচ জনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা, তিন জনের জন্য পাঁচ লক্ষ ও বাকি চার জনের প্রত্যেকের জন্য তিন লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আদালতের কাছে পলাতকদের অনেকের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নেওয়ার আর্জিও জানাতে চলেছে এনআইএ।

এ দিনই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) খাগড়াগড়-কাণ্ডে তাদের তরফে প্রথম এই একটি আলাদা মামলা রুজু করেছে। এই মামলায় বিস্ফোরণে জখম আব্দুল হাকিম অন্যতম অভিযুক্ত। খাগড়াগড়ে ঘাঁটি গাড়া সন্ত্রাসবাদীদের কারা টাকা দিত, সেটাই ইডি তদন্ত করে দেখছে।

এনআইএ জানিয়েছে, পলাতক সাজিদ, নাসিরুল্লা, ইউসুফ শেখ, কওসর ও তালহা শেখএই পাঁচ জনের হদিস দিতে পারলে বা তাদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সহায়ক তথ্য দিতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আবার হবিবুর রহমান শেখ, আমজাদ আলি শেখ ও হাতুড়ে শাহ নূর আলম এই তিন জনের প্রত্যেকের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার। আর তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে বোরহান শেখ, রেজাউল করিম, আবুল কালাম ও জহিরুল শেখের উপরে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই ১২ জনের মধ্যে শাহ নূর আলম অসমের বরপেটা থেকে ফেরার, বাকি ১১ জন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানএই চার জেলা এবং কলকাতা থেকে পলাতক।

গত ২৪ অক্টোবর এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে তদন্তকারী অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পলাতকদের ধরতে উঠেপড়ে লাগতে হবে। তখনই পুরস্কার ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। এই ১২ জনের মধ্যে সাজিদ-নাসিরুল্লা-কওসর-তালহা আদতে বাংলাদেশি বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে নদিয়ার দেবগ্রাম ও বীরভূমের কীর্ণাহারে ঘরভাড়া নিয়েছিল তালহা। ভারতীয় প্যান-কার্ড ও রেশন কার্ড জোগাড় করে নিয়েছিল। সাজিদ জঙ্গিদের বর্ধমান মডিউলের মাথা বলে ধারণা এনআইএ-র। আইইডি পাচারে অভিযুক্ত বছর চল্লিশের এই যুবক মুর্শিদাবাদের লালগোলায় সীমান্ত ঘেঁষা মকিমনগরের মাদ্রাসায় ডেরা গেড়েছিল। মুর্শিদাবাদেরই বেলডাঙায় ঘাঁটি গাড়া নাসিরুল্লা অভিযুক্ত আইইডি তৈরি ও পাচারে। আইইডি ফেটে ডান কব্জি উড়ে যাওয়ায় সে হাত-কাটা নাসিরুল্লা নামেও পরিচিত। ইউসুফ বর্ধমানের মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা। গোটা চক্রটির মধ্যে সে সমন্বয়ের কাজ করত বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। আর কওসর (স্কেচ আঁকানো হয়েছে) বীরভূমের বোলপুর এবং বর্ধমানের বাবুরবাগে ডেরা বেঁধেছিল। সে-ও বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদের তৈরি আইইডি অন্যত্র পাচার করায় অভিযুক্ত।

আবার আমজাদ শেখ নামে যার উপরে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, সে কাজ করত কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণির একটি সংস্থায়, যেটি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করে। গোয়েন্দাদের দাবি, বিস্ফোরক তৈরিতে সহায়ক প্রচুর রাসায়নিক বাগুইআটির কয়েক জন পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে খাগড়াগড়ের কুশীলবদের কাছে সরবরাহ করেছিল এই আমজাদ। যার বাড়ি বীরভূমের কীর্ণাহারে।

এনআইএ যাদের উপরে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে, তাদের অন্যতম ইউসুফ শেখ। তার স্ত্রী আয়েষাও কিন্তু পলাতক। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে হদিস পাওয়া সন্ত্রাসবাদীরা একটি প্রমীলা বাহিনী তৈরি করেছিল ও আয়েষাই তাদের প্রধান প্রশিক্ষক ছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। যদিও আয়েষা বা সন্দেহভাজন অন্য কোনও মহিলার জন্য এনআইএ এ দিন পুরস্কার ঘোষণা করেনি।

পুরস্কারের সঙ্গে পলাতকদের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নিতে চাওয়ার যে আবেদন এনআইএ জানাতে চলেছে, তাতেও অনেকটা কাজ হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি হাতছাড়া হতে বসেছে বুঝলে পলাতকদের অনেকের উপরে চাপ তৈরি হবে। সেই চাপের কাছে কেউ মাথা নোয়াতেই পারে। এ দিন এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “অভিযুক্তদের জমি সংক্রান্ত কাগজ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিপত্র হাতে পেয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে অভিযুক্তদের বাড়িতে নোটিস দিয়ে জানানো হবে, তাদের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।” এই সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য গত সোমবার থেকে তাদের এক সিনিয়র ইনস্পেক্টর এবং এক ইনস্পেক্টরকে মঙ্গলকোটে রাখা হয়েছে বলে এনআইএ সূত্রে খবর।

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটে শিমুলিয়ার মাদ্রাসাটি বোরহানের জমিতে তৈরি হয়। বোরহান সেই জমি পেয়েছিল তার এক কাকার কাছ থেকে। সেই কাকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। ওই মাদ্রাসার স্কেচ ম্যাপ তৈরি করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে জমিটির নথিপত্র জোগাড় করেছেন গোয়েন্দারা। মঙ্গলকোটেরই নিগনে একটি ২৫ কাঠা জমি কিনেছিল ইউসুফ, বোরহান ও পূর্বস্থলীর হাসেম মোল্লা (ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে)। মাস তিনেক আগে আলাদা আলাদা ভাবে প্রায় আট কাঠা করে এই জমি কেনে তারা। জমিটির আগের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। ভাতারেও কয়েক বিঘা জমি কিনেছিল ইউসুফরা। সেটির মালিককেও ডাকা হয়েছে।

এনআইএ কর্তারা মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটী গ্রামে ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, পাশেই আর একটি বড় বাড়ি তৈরি করছিল ইউসুফ। যে পরিবারের সম্বল ১২ বিঘা জমি, তারা জমি কেনা ও বড় বাড়ি তৈরির টাকা কোথায় পেল, তা নিয়ে সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের। টাকার উৎস জানতে ইতিমধ্যে ইউসুফের দুই ভাই, কুলসুনো গ্রামের আবুল কালামের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। ডাকা হয়েছে বোরহানের বাড়ি ও ইউসুফের শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই সব পলাতকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নানা তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। মঙ্গলকোটের নিগনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ইউসুফ ও তার স্ত্রী আয়েষার অ্যাকাউন্ট ছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। সেই সংক্রান্ত তদন্তের জন্য দিল্লি থেকে ব্যাঙ্কের একটি অডিটর-দল নিগনে এসেছে।

খাগড়াগড়-কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নদিয়ার মির্জাপুরের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন মুন্সিকে এ দিন জেরা করে এনআইএ। বুধবার থেকে নিখোঁজ থাকার পর এ দিন বাড়ি ফেরেন গিয়াসউদ্দিন। গা ঢাকা দেওয়ার সময় তিনি দাড়িগোঁফ কামিয়ে ফেলেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় এক মাদ্রাসার শিক্ষাকর্মী গিয়াসউদ্দিনের বোরখার দোকানও রয়েছে। বেলডাঙায় শাকিলের (বিস্ফোরণে হত) ‘বোরখা ঘর’ থেকে বোরখা কিনতেন তিনি। সেই সূত্রেই এই জেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NIA khagragarh blast bardwan terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE