মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকের পরে ইঙ্গিত মিলেছিল আপাতত পিছু হটার। বিরোধী আসনে বসার প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শহর ছাড়তেই ভোল বদলাল তৃণমূলের! দলের মেয়র পদপ্রত্যাশী নান্টু পাল স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, শিলিগুড়ি পুরবোর্ড দখলের লড়াই থেকে তাঁরা মোটেই সরে দাঁড়াচ্ছেন না। বরং দিন যত গড়াবে, বোর্ড দখলের লড়াইয়ে তাঁরা ততই চালিয়ে খেলবেন! বোর্ড দখলে নান্টু পালের এই মরিয়া চেষ্টা অবশ্য ভাল চোখে দেখছেন না দলের একটা অংশ। তৃণমূল সূত্রেই ইঙ্গিত, তেমনটা হলে তাঁরা বেঁকে বসবেন।
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সোমবার নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের বৈঠকে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা বিরোধী আসনে বসার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি ছাড়ার পরেই নান্টুবাবু জানিয়ে দিলেন, ‘‘এখনই বিরোধী আসনে বসার প্রশ্ন কেন উঠবে? দ্বিতীয় রাউন্ডে অর্থাৎ মেয়র নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়া হবে না। লড়াই চলবে।’’
বসে নেই বামেরাও। তারাও পাল্টা বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রায় মুঠোয় চলে আসা পুরসভাকে হাতছাড়া হতে দেবে না। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭টি আসনের মধ্যে বামেদের হাতে ২৩টি। বোর্ড গড়ে তাদের দরকার আর মাত্র এক জন কাউন্সিলরের সমর্থন। এবং নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ তাঁদের দিকেই ঝুঁকে বলে দাবি বামেদের। এই অবস্থায় মাত্র ১৭টি আসন নিয়ে পুরসভা দখল করা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেকে। তার পরেও দলের একটা অংশ বোর্ড ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে অন্য দলের কাউন্সিলরদের ভয় বা লোভ দেখিয়ে ভাঙিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এত কিছু করেও মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক শিলিগুড়িতে সফরের সময় বিপক্ষ শিবিরের একজন কাউন্সিলরকেও তাঁর সামনে হাজির করতে পারেননি দলের স্থানীয় নেতারা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কাউন্সিলরদের বৈঠকে বিরোধী আসনে বসার পক্ষেই মত দেন জেলা নেতাদের একটি বড় অংশ। ওই বৈঠকেই পুরসভার দলনেতা হিসেবে মনোনীত হন নান্টুবাবু। তিনি অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। নান্টুবাবু জানান, মেয়র নির্বাচনে ‘ওয়াক-ওভার’ দেওয়া যাবে না। যে ভাবে হোক, বোর্ড গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান তাঁরা! দলের একটি বড় অংশ আছে তাঁর পাশেই।
কিন্তু ভোটে তৃণমূল বিরোধীদের পক্ষেই শিলিগুড়ির মানুষ রায় দেওয়ার পরেও কিছু নেতা কেন এমন মরিয়া চেষ্টা করছেন? তৃণমূলের একাংশের দাবি, বোর্ড গঠনের স্বপ্ন পূরণ হবে ভেবেই অনেকে বহু শ্রম-অর্থ খরচ করেছেন। অনেকে ধারদেনাও করেছেন। কাজেই বোর্ড গড়তে না পারলে সব ‘বিনিয়োগ’ জলে যাওয়ার আশঙ্কা! আবার, শিলিগুড়ি পুরসভার একাধিক ঠিকাদার তাঁদের লাইসেন্স জমা দিয়ে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। তাঁরা এখন ঠিকাদারিও করতে পারবেন না। বোর্ড গঠন করে মেয়র পারিষদ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলে প্রতি পদে নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে তাঁদের। সে জন্য তাঁরাও নান্টুবাবুর ‘উদ্যোগে’ সামিল হয়েছেন বলে দলের অন্দরেই আলোচনা হচ্ছে।
বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এসজেডিএ নিয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। যথেষ্ট টাকাপয়সা লুঠের প্রমাণ মিলেছে। তবু উপার্জনের জন্য পুরসভা দখলের চেষ্টাটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
নান্টুবাবু এই সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, টাকা-পয়সার বিষয়টি ছাড়াও রয়েছে দলনেত্রীর কাছে নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা। যে কারণে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমানে নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দবাবুকেও (অমু) দলে টানার মরিয়া চেষ্টা এখনও করে যাচ্ছেন তাঁরা। নান্টুবাবু বলেন, ‘‘অমুদা সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। ওঁর ক্ষোভ-অভিযোগ থাকলে তা আমরা শুনব। প্রয়োজনে শুধরে নেব। ওঁর সঙ্গে সব কিছু নিয়েই কথা বলব।’’
কিন্তু অরবিন্দবাবু নিজে কী বলছেন? তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সততা-স্বচ্ছতার স্বার্থে তৃণমূল ছেড়েছিলাম। এখন সেখানে ফিরে গেলে আমার ভাবমূর্তি বলে কিছু থাকবে না।’’ ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে পা দেওয়ার মুখেই বামেদের অধিকাংশ কাউন্সিলরের মতো শহর ছেড়ে চলে যান অমুবাবুও। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দুপুরে শহর ছাড়ার পরে বাম কাউন্সিলরদের নিয়ে ফিরেছেন অশোকবাবু। তার কিছু ক্ষণ বাদেই ফেরেন অমুবাবুও। বামেদের দাবি, অমুবাবু যে তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন, এটাই তার সব থেকে বড় প্রমাণ। তৃণমূলের সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তিনি শহর ছাড়তেন না। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘যে ভাবে ঘোড়া কেনাবেচার চেষ্টা হচ্ছে, তা শিলিগুড়ির মানুষ মানতে পারছেন না। যত চেষ্টাই হোক আমরা বোর্ড গড়ব। একজন দৃষ্টান্তযোগ্য মানুষ অমুবাবু আমাদের সঙ্গে আছেন। যিনি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে ডাকা হলেও সাড়া দিতে পারবেন না বলে প্রকাশ্যে বলেছেন।’’
এত সবের পরেও নান্টুবাবু কী ভাবে বোর্ড গঠনের স্বপ্ন দেখছেন? নান্টুবাবু হাসছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে লড়াই শেষ হয় না। রাউন্ডের পরে রাউন্ড চলতে থাকে।’’
শিলিগুড়ি নিয়ে ম্যাচ জমে গিয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy