Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুরভোটের পর দিনই সম্ভব কি টেট, বৈঠক কাল

প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের অন্ধকারে রেখে একতরফা ভাবে টেট পরীক্ষার নতুন দিন ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু রাজ্যের কয়েকটি পুরসভায় ভোটের পরের দিনই ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ‘টেট’ নেওয়ার মতো সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখতে কাল, সোমবার বৈঠক ডেকেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।

টেট-এ দুর্নীতির অভিযোগে মৌলালিতে বাম ছাত্র সংগঠনের পথ অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র।

টেট-এ দুর্নীতির অভিযোগে মৌলালিতে বাম ছাত্র সংগঠনের পথ অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের অন্ধকারে রেখে একতরফা ভাবে টেট পরীক্ষার নতুন দিন ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু রাজ্যের কয়েকটি পুরসভায় ভোটের পরের দিনই ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ‘টেট’ নেওয়ার মতো সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখতে কাল, সোমবার বৈঠক ডেকেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে এই নিয়ে তাঁদের মতামত জানতে চাইবেন নবান্নের কর্তা। পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল আজ, রবিবার। বৃহস্পতিবার প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জানিয়ে দেন, স্থগিত পরীক্ষা হবে ৪ অক্টোবর। বিরোধীরা এতে প্রশ্ন তোলেন, ৩ অক্টোবর কয়েকটি পুরসভার ভোট রয়েছে। পরের দিনই টেটের মতো বড় মাপের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি?

নবান্নের কর্তারা কার্যত সেই প্রশ্নই তুলেছেন শনিবার। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, শুধু ৩ অক্টোবরের ভোট নয়, টেট পরীক্ষার দিনেই অন্তত ১০টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা রয়েছে। সব মিলিয়ে পরপর দু’দিন পুলিশি ব্যবস্থা ও অন্যান্য বন্দোবস্ত করা কঠিন কাজ। তাঁর কথায়, ‘‘একটু এ দিক-ও দিক হলেই সব গোলমাল হয়ে যাবে।’’ পাশাপাশি, ‘‘টেটের এক জন পরীক্ষার্থীর অন্য পরীক্ষায় বসার থাকলে, তিনি সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন,’’ এটাও ভাবা দরকার বলে মনে করছেন ওই কর্তা।

নবান্নের কর্তাদের একটি অংশ মনে করেন, নতুন দিন ঘোষণা করার আগে শিক্ষা দফতরের সাত-পাঁচ ভাবা উচিত ছিল। এই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি রয়েছে। শিক্ষা দফতর তা-ও মানেনি।

বস্তুত, নবান্নের সঙ্গে কথা না বলে পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে দেওয়ায় প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, ৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে হলে বিরাট পুলিশি ব্যবস্থা করতে হবে। এটা জেনেও প্রশাসনের সঙ্গে কথা না বলে কী করে দিন ঘোষণা করতে পারে একটি দফতর?

নবান্নের খবর, এ দিন সরকারি ভাবে প্রশ্নপত্র হারানো ও নতুন পরীক্ষার দিন জানিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব অর্ণব রায় মুখ্যসচিবের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠান। এর পরেই শীর্ষ মহলে নড়াচড়া শুরু হয়ে যায়। শিক্ষাসচিবের রিপোর্টের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান কর্তারা। সেই সঙ্গে পরপর দু’দিন ভোট ও এত বড় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা নিয়ে তাঁদের সংশয়ের কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান তাঁরা। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি নিয়েই সোমবার ভিডিও কনফারেন্স ডেকেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তাঁর সঙ্গে থাকবেন শিক্ষাসচিবও। ভোটের পর দিন টেট নিতে সংশ্লিষ্ট সব জেলা প্রশাসন প্রস্তুত কি না— জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাছে মূলত সেটাই জানতে চাওয়া হবে। শিক্ষা দফতরের খবর, ওই দিনই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিদেরও আলাদা বৈঠকে ডেকেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁদেরও মতামত নেওয়া হবে।

স্কুল শিক্ষা দফতর অবশ্য এখনও মনে করে, ভোটের পরের দিন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। দফতরের এক কর্তার যুক্তি, ৪ অক্টোবর বেলা ২টো থেকে টেট শুরু হবে। তার আগের দিন ভোট হলেও মাঝে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে ব্যবস্থা করার জন্য। তা ছাড়া, ভোট হবে রাজ্যের অল্প কয়েকটি কেন্দ্রে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রকে ব্যালট বাক্স রাখার ‘স্ট্রংরুম’ করা হলে সেটা পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েও দেওয়া হবে। আর কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য যে সব স্কুল বা কেন্দ্র নেওয়া হয়েছে, সেগুলি বাদ দিয়ে টেট পরীক্ষার কেন্দ্র করলেই সমস্যা থাকবে না।

কিন্তু একই ব্যক্তি দু’টি পরীক্ষায় বসতে চাইলে তাঁর কী হবে?

স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তাদের ব্যাখ্যা, এ রকম হামেশাই হয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কোন পরীক্ষায় বসতে চান। অনেক টেট পরীক্ষার্থীর ক্ষোভ, রাজ্য ঠিক সময়ে পরীক্ষা নিতে পারলে কাউকেই এই সমস্যায় পড়তে হতো না।

৪ অক্টোবর যে পরীক্ষাগুলি হওয়ার কথা তার মধ্যে রয়েছে: কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংস্থান, বিএসএফ, এনআইএ, আইবিপিএস, এসএসবি, সিআইএসএফ, এসএসসি (কনস্টেবল), ডব্লুউবিএসএসসি সিজিএল (মেন)। রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পরীক্ষা। ওই দিন পিএসসি-এর মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE