Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রশ্ন ফাঁস কবুল, আবার তিন পরীক্ষা নেবে রেল

রেলের গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল ২৯-৩০ নভেম্বর। সেটা স্বীকার করতে আড়াই সপ্তাহেরও বেশি লেগে গেল পূর্ব রেলের! তারা জানিয়েছে, ওই পরীক্ষা নতুন করে নেওয়া হবে ১ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি। তবে দীর্ঘদিন ধরে নেওয়া ওই পরীক্ষার পুরোটাই ফের নেওয়া হচ্ছে না। রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পুরো পরীক্ষা হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

রেলের গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল ২৯-৩০ নভেম্বর। সেটা স্বীকার করতে আড়াই সপ্তাহেরও বেশি লেগে গেল পূর্ব রেলের! তারা জানিয়েছে, ওই পরীক্ষা নতুন করে নেওয়া হবে ১ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি।

তবে দীর্ঘদিন ধরে নেওয়া ওই পরীক্ষার পুরোটাই ফের নেওয়া হচ্ছে না। রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পুরো পরীক্ষা হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে। নভেম্বরের প্রথম তিন রবিবারে যে-সব পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলির প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। চতুর্থ রবিবারের দ্বিতীয়ার্ধ এবং শেষ রবিবারের দু’বেলার পরীক্ষারই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তাই ওই তিনটি পরীক্ষা ফের নেওয়া হচ্ছে।

৩০ নভেম্বরও ওই পরীক্ষা ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তার আগের রাতে নদিয়ার ঘাগুরগাছি গ্রামে তল্লাশি চালায় ভিজিল্যান্স। সেখানে একটি বাড়িতে প্রচুর প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাওয়া যায়। আটক করা হয় ১৮ জন পরীক্ষার্থীকে। পরের দিনের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আগের রাতে আটক করা প্রশ্নের হুবহু মিল। তার পরেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে রিপোর্ট দেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স অফিসারেরা। জেরায় আটক প্রার্থীরা জানান, তাঁদের সঙ্গে মাথাপিছু তিন লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল। যারা প্রশ্ন দেবে, উত্তরপত্র তৈরি করে দেবে তারাই। গভীর রাতে সেই উত্তরপত্রই তৈরি হচ্ছিল। তখনই হানা দেয় ভিজিল্যান্স।

পূর্ব রেলের কর্তারা প্রথমে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ মানতে চাননি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্রে হইচই শুরু হওয়ার পরে রিপোর্ট তলব করে রেল বোর্ড। তার পরেই পূর্ব রেলের কর্তারা বিষয়টি রেল বোর্ডে পাঠান। সব কিছু খতিয়ে দেখে রেল বোর্ড নতুন করে পরীক্ষা নিতে বলে।

পূর্ব রেলের অফিসারদের একাংশের প্রশ্ন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ যখন মিলেছে, তা হলে সব পরীক্ষা বাতিল করা হল না কেন? পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত কোনও কোনও আধিকারিক এই দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। যাঁরা এই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের হাত দিয়ে অন্যান্য পরীক্ষারও প্রশ্ন যে ফাঁস হয়নি, তা নিশ্চিত করে বলতে পারে কে? ওই অফিসারদের দাবি, তিনটি নয়, সব পরীক্ষাই বাতিল হোক।

রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, একাংশের দাবি, যাঁদের উপরে পরীক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত, এই ধরনের দুর্নীতির জন্য তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে না কেন? রেলকর্তারা নীরব।

গত বছর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পরীক্ষাতেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। সেখানেও ভিজিল্যান্স তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটার, স্ক্যানার, জেরক্স মেশিন এবং কয়েক লক্ষ নগদ টাকা উদ্ধার করে। আটক করা হয় ৮০ জন পরীক্ষার্থীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় উত্তর বলে দেওয়ার জন্য আনা ৭১টি মোবাইল ফোনও। গ্রেফতার হন এক রেলকর্মী-সহ ছ’জন। তখনও কর্তারা মানতে চাননি যে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এবং পরীক্ষাও বাতিল করা হয়নি।

এ বার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, গ্রুপ-ডি পদে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড যে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করতে হবে, সেটা তাঁরা যথাসময়ে জানাননি। ফলে পাঁচ রবিবারে ওই রেলের পরীক্ষার্থীদের মাত্র ১১% পরীক্ষায় বসতে পেরেছেন। বাকিরা পরীক্ষা দিতে পারেননি। প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষা বাতিলের দাবিও তুলেছেন। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব রেল সিদ্ধান্ত জানায়নি। ওই রেলের অফিসারদের একাংশের দাবি, অবিলম্বে এই পরীক্ষাও বাতিল করে ফের পরীক্ষা হোক। যাতে সব প্রার্থীই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

railway exam group D paper leaked
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE