Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমিকার টানেই ফের পুলিশের জালে শামিম

প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে আসাই কাল হল তার। পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল জেল-পালানো খুনের আসামি শামিম হাওলাদার। সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি দল হানা দেয় ভাঙড় থানার তালদিঘি এলাকার একটি বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে পুলিশ দেখে, খাটে শুয়ে রয়েছে খুন ও একাধিক ডাকাতি ও লুঠপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত শামিম। কানে মোবাইলের হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। পাশে বসে বছর তিরিশের এক মহিলা।

শামিম হাওলাদার। —নিজস্ব চিত্র

শামিম হাওলাদার। —নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে আসাই কাল হল তার। পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল জেল-পালানো খুনের আসামি শামিম হাওলাদার।

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি দল হানা দেয় ভাঙড় থানার তালদিঘি এলাকার একটি বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে পুলিশ দেখে, খাটে শুয়ে রয়েছে খুন ও একাধিক ডাকাতি ও লুঠপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত শামিম। কানে মোবাইলের হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। পাশে বসে বছর তিরিশের এক মহিলা। গান শোনার ফাঁকে দু’জনে গল্পও চলছে। বিছানায় শোওয়া ব্যক্তিই যে শামিম, তা নিশ্চিত হওয়ার পরই সটান ঘরে ঢুকে কিছু বোঝার আগেই তাকে খাট থেকে টেনে তোলেন পুলিশকর্মীরা।

পুলিশ জানায়, ওই মহিলাই শামিমের প্রেমিকা ফিরোজা। ভাঙড়ের ওই বাড়িটি ফিরোজার সম্পর্কিত দাদা আখতার আলির।

৮ অগস্ট আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে পালিয়েছিল কুতুবউদ্দিন লস্কর, আজিম মিস্ত্রি এবং শামিম হাওলাদার। তার এক দিন পরেই বারুইপুর থেকে গ্রেফতার হয় আজিম। তার পর সোমবার রাতে শামিম ধরা পড়ার পর বাকি রইল শুধু কুতুবউদ্দিন। এখন কুতুবউদ্দিনকে ধরার ব্যাপারেও আশাবাদী পুলিশ।

শামিমকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, জেল থেকে বেরোনোর পরে তারা ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে এক পরিচিতের বাড়িতে যায়। সেখান থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে। ট্রেন ধরে আজিম রওনা দেয় বারুইপুরের দিকে। আর কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে শামিম যায় ক্যানিং থানার ঘুটিয়ারিশরিফে।

জেরায় ক্যানিংয়ের নলিয়াখালির বাসিন্দা শামিম জানিয়েছে, সে এবং কুতুবউদ্দিন ঘুটিয়ারিশরিফ মাজারের পাশে এক ব্যক্তির বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিল। ঠিক ছিল, আজিম বাড়ি থেকে টাকা আনবে। তার পরে তিন জন বাংলাদেশে গা ঢাকা দেবে। কারণ, শামিম গত সাত বছর ধরে ক্যানিংয়ে থাকলেও তার বাড়ি বাংলাদেশে। কিন্তু আজিম ধরা পড়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এর পরেই কুতুবউদ্দিন অন্যত্র পালায়। ১২ অগস্ট তালদিঘিতে আখতার আলির বাড়িতে গা-ঢাকা দেয় শামিম।

পুলিশকে শামিম জানিয়েছে, নলিয়াখালিতে তার প্রতিবেশী ছিলেন ফিরোজা। তাঁর সঙ্গে শামিমের ঘনিষ্ঠতা বহু দিনের। বছর চারেক আগে ফিরোজার অন্য জায়গায় বিয়ে হলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি শামিমের। বছর দুয়েক আগে ফিরোজার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার পরেই তাঁর সম্পর্কিত দাদা আখতারের বাড়িতে এসে উঠেছিলেন ফিরোজা। সে কথা জানত শামিম।

পুলিশকে সে জানিয়েছে, গা-ঢাকা দেওয়ার আগে ফিরোজার সঙ্গে দেখা করতে সে ভাঙড়ে এসেছিল। তার পর ফিরোজা তাকে ছাড়তে চাননি। সেটাই কাল হল শামিমের।

পুলিশ জানিয়েছে, শামিমের ধরা পড়ার জন্য পরোক্ষে দায়ী ফিরোজার সম্পর্কিত দাদা আখতারই। তাঁর বাড়িতে শামিমের গা-ঢাকা দিয়ে থাকার বিষয়টি মানতে পারছিলেন না আখতার। তা নিয়ে কয়েক জন বন্ধুর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আখতারের এক বন্ধু ভাঙড় থানার ওসি আশিস দাসকে বিষয়টি জানান। তার পরেই আখতারের বাড়ির উপরে নজরদারি শুরু হয়। সোমবার দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ফিরোজা ও শামিম। রাতে তারা ফিরে আসে। এর পরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ এবং ভাঙড় থানার পুলিশকে নিয়ে গড়া একটি দল আখতারের বাড়ি ঘিরে ফেলে।

এ দিন শামিমকে আলিপুর কোর্টে তোলা হলে বিচারক তাকে চার দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারীরা জানান, জেল থেকে পালিয়ে ফের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও এতটুকু ভেঙে পড়েনি শামিম। পুলিশ সূত্রে খবর, সে বলেছে, “আমাকে জেলে আটকে রাখা যাবে না। ফের আমি জেল থেকে পালাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE