Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমাংশুর পাশেই কি ব্রাত্য, জল্পনা

বর্ধমানে মিনার্ভা রেপার্টরির কর্মশালার নাট্যপ্রশিক্ষক প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে কয়েক দিন আগে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ নাট্যকর্মীকে সরাসরি ক্লিনচিট দেননি তিনি। কিন্তু ব্রাত্য বসুর কাছের লোক তকমাটিই যে প্রেমাংশু রায়ের ‘প্রকৃত অপরাধ’, এই তত্ত্বে আস্থা গোপন করেননি। প্রেমাংশুকে যে ভাবে ‘গণশত্রু’তে পরিণত করা হয়েছে, গোপন থাকেনি তা নিয়ে ক্ষোভও। ফলে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরোক্ষে যৌন হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত নাট্যপ্রশিক্ষক প্রেমাংশুর পাশেই দাঁড়ালেন কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।

বর্ধমানে মিনার্ভা রেপার্টরির কর্মশালার নাট্যপ্রশিক্ষক প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে কয়েক দিন আগে। উঠেছে ব্রাত্য বসুর নাম করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও। ইতিমধ্যে প্রেমাংশুকে রেপার্টরির কর্মশালা থেকে সরানো হয়েছে। কলকাতার নাট্যকর্মীদের একাংশ তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে সরব।

এই ঘটনার সূত্র ধরেই এ দিন ফেসবুকে মুখ খুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য। তাতে ফেসবুকে প্রেমাংশুর স্ত্রীর প্রোফাইলে তাঁকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাত্য। প্রেমাংশুর শিশুপুত্র স্কুলে যেতে পারছেন না-বলেও আক্ষেপ রয়েছে সেই পোস্টে।

প্রেমাংশু নিজেও অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুক ও সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও মেয়েকে রাতে একা আমার ঘরে ডাকিনি। আমার বিরুদ্ধে এটা চক্রান্ত।’’ প্রেমাংশুর দাবি, একটি মেয়ের সঙ্গে তার কথোপকথনের যে ‘সাউন্ডক্লিপ’ নেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা অন্য একটি ছেলের
ফোন থেকে ঘরভর্তি লোকের উপস্থিতিতে ঘটেছিল।

আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রেমাংশুর এই দাবিগুলি ব্রাত্য তাঁর লেখাতেও উল্লেখ করেছেন। প্রেমাংশুর ব্যাখ্যার সূত্র ধরে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, এ একদম পিরানদেল্লীয় নাটকের মতো। সত্য যে বহুরৈখিক, বহুকৌণিক। অনেক রকম ভাষ্য, উল্টো দৃষ্টিকোণও থাকতে পারে— এটাই যেন প্রেমাংশু মনে করাতে চেয়েছে।

তবে কি তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রেমাংশুকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থনই করছেন ব্রাত্য? তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে একটি কথাও বলতে চাননি।

কিন্তু ব্রাত্যর ফেসবুক পোস্টে শম্ভু মিত্র থেকে শুরু করে মারিও পুজো-র লেখা উদ্ধৃত করে পরে বলা হয়েছে, ‘‘ও (প্রেমাংশু) বলতে চেয়েছে ওকে শিখণ্ডী করে আমাকেই (ব্রাত্য) মারতে চেয়েছে আমার তথাকথিত কিছু বন্ধুরা।’’ তারা কারা? সেটা খোলসা করেননি ব্রাত্য। প্রেমাংশুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি গোড়া থেকেই তুলে এসেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব, সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। এ দিন তাঁকে ব্রাত্যবাবুর পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই প্রথম থেকে বলেছি। এখনও বলছি। এর বাইরে কে কোথায় কী পোস্ট করলেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না।’’

নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনও মনে করেন, যে-ভাষায় প্রেমাংশুর পরিবারের লোককে ফেসবুকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ, তা নিন্দনীয়। কিন্তু ব্রাত্যর ঘনিষ্ঠ বলে প্রেমাংশুকে মাসুল দিতে হচ্ছে, এমন দাবি খুবই হাস্যকর বলে কৌশিকের অভিমত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওই কর্মশালার অন্য প্রশিক্ষকেরাও ব্রাত্যর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তা হলে তাঁদের কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করাল না কেউ?’’ প্রেমাংশুর বক্তব্য, কর্মশালার দায়িত্বে থাকার দরুণ শিক্ষার্থীদের বকাবকি করেই তিনি প্রথমে বিরাগভাজন হয়েছিলেন। পরে আরও কেউ কেউ সেটাই তাঁর বিরুদ্ধে কাজে লাগান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE