গঙ্গারামপুর থানায় পুড়ে যাওয়া মোটরবাইক। ছবি: অমিত মোহান্ত
তৃণমূলের জেলা সভাপতির কাছে খবর— কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই দলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছেন পুলিশকে। কিন্তু শাসক দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের খবর জানেন না বলে দাবি করেছেন খোদ জেলার পুলিশ সুপার। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে এই ঘটনার পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন অনেকে।
শুক্রবার রাতে গঙ্গারামপুরের বড়বাজার এলাকায় মোটরবাইক নিয়ে একটি মণ্ডপে কালীপ্রতিমা দেখতে গিয়েছিলেন এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ওমপ্রকাশ চৌধুরী ও তাঁর ভগ্নিপতি বাবু চৌধুরী। গঙ্গারামপুর সদরের দুর্গাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এই দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে গঙ্গারামপুর থানায় একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। এমনকী, তাঁরা জেলও খেটেছেন।
যেখানে মোটরবাইক রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে মণ্ডপ খানিকটা দূরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের জানিয়েছেন, মোটরবাইক রাখা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে ওই দুই তৃণমূল কর্মীর কথা কাটাকাটি হয়। ওমপ্রকাশ এবং বাবু চৌধুরী প্রতিমা দেখতে চলে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়, তাঁদের মোটরবাইকটি জ্বলছে। খবর পেয়ে ওমপ্রকাশরা যতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে দমকল। গঙ্গারামপুর থানার এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরও (এএসআই) সেখানে হাজির।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কারা মোটরবাইকে আগুন লাগিয়েছে তা জানতে ওমপ্রকাশরা হম্বিতম্বি শুরু করেন। থামাতে গেলে ওই দু’জন থানার সাব-ইনস্পেক্টরকে হুমকি দেন এবং ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ। দমকলের এক অফিসারকেও গালিগালাজ করা হয়।
ওমপ্রকাশ এবং বাবু চৌধুরী অবশ্য হুমকি দেওয়া, ধাক্কা মারা বা গালিগালাজ করার অভিযোগ মানেননি। শুধু বলেছেন, “মোটরবাইকটা পুড়ছে দেখে সামান্য মাথা গরম হয়েছিল।”
তবে ঘটনাটা আদৌ ‘সামান্য’ ঠেকছে না জেলার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের কাছে। গঙ্গারামপুরের এই ঘটনায় বীরভূমের ছায়া দেখছেন তাঁদের অনেকে। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে ‘বোম মারার’ হুমকি দিয়ে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অনুব্রতরই দক্ষিণ হস্ত হিসেবে পরিচিত সুদীপ্ত ঘোষ বোলপুর থানায় ঢুকে পুলিশ পেটালেও এখনও ধরা পড়েননি (তবে তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে)। সেই সূত্র ধরেই বিজেপি-র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন মণ্ডলের বক্তব্য, “পুলিশ তৃণমূলের নাম শুনলেই সমস্ত ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটাই এখন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের টিপ্পনী, “গঙ্গারামপুরে আইনের শাসন নেই। এখানে জনতাই বিচার পায় না। পুলিশ কোন ছার!”
বিধানসভার পরিষদীয় সচিব তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “গঙ্গারামপুর থানা সূত্রে পুলিশ অফিসারকে হেনস্থা করার অভিযোগটা কানে এসেছে। শুনেছি, আমাদের দলের দু’জন অভিযুক্ত। এ সব ক্ষেত্রে কাউকে খাতির করার প্রশ্ন নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছি থানার আইসি-কে।” গঙ্গারামপুর থানার আইসি বা ‘আক্রান্ত’ এএসআই এ ব্যাপারে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া দাবি করেছেন, “এএসআইকে হেনস্থার কোনও খবর নেই। দমকলের এক কর্মীকে অপমান করা হয়েছে বলে শুনেছি। দমকল থেকে অভিযোগ করা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy