Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ পেটানো সুদীপ্ত আছেন বোলপুরেই: অনুব্রত

তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী শহরেই আছেন বলে জানাচ্ছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অথচ পুলিশ নাকি তাঁকে খুজেই পাচ্ছে না! তিনি সুদীপ্ত ঘোষ। তিন সপ্তাহ আগে বোলপুর থানায় হামলার অভিযোগে বীরভূমের যুব তৃণমূলের সভাপতি সুদীপ্তর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার পরেও পুলিশের খাতায় তিনি ‘নিখোঁজ’। জেলার পুলিশ কর্তাদের এই দাবি যে অভিযুক্তকে আড়াল করতেই বলা হচ্ছে, সোমবার পরোক্ষে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি ও বোলপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী শহরেই আছেন বলে জানাচ্ছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অথচ পুলিশ নাকি তাঁকে খুজেই পাচ্ছে না!

তিনি সুদীপ্ত ঘোষ। তিন সপ্তাহ আগে বোলপুর থানায় হামলার অভিযোগে বীরভূমের যুব তৃণমূলের সভাপতি সুদীপ্তর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার পরেও পুলিশের খাতায় তিনি ‘নিখোঁজ’। জেলার পুলিশ কর্তাদের এই দাবি যে অভিযুক্তকে আড়াল করতেই বলা হচ্ছে, সোমবার পরোক্ষে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “সুদীপ্ত পালিয়ে বেড়াচ্ছে না। ও শহরেই রয়েছে। পুলিশ কেন ধরছে না, সেটা সম্পূর্ণ ওদের ব্যাপার! প্রশ্নটা ওদেরই করুন।” শহরে আছেন জেনেও পুলিশ যাকে খুঁজে পাচ্ছে না, সেই সুদীপ্ত ঘোষ তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কেন হঠাৎ অনুব্রত তাঁর হয়ে ব্যাট ধরছেন না, তা নিয়ে কিন্তু দলেই গুঞ্জন উঠেছে।

বোলপুর পুরসভার স্যনিটেশন অফিসার সুদীপ্তর বাড়ি থানা থেকে কার্যত মিনিট খানেকের পথ। আর পুরসভা তো থানা লাগোয়াই! থানায় হামলা চালানো অভিযুক্ত অন্য ৯ জনের বাড়িও কাছেপিঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্তেরা বহাল তবিয়তেই এলাকায় রয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ সুদীপ্ত তো দূর অস্ত, এক জনকেও ধরল না। কেন এই অবস্থা, তা নিয়ে মুখে কুলুপ জেলা পুলিশের। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকে ফোন এবং এসএমএস করা হলেও জবাব আসেনি। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব অবশ্য বলছেন, “তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে। তবে,সুদীপ্ত ঘোষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

এরই মধ্যে সুদীপ্তর আগাম জামিনের আবেদন সোমবার হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গিয়েছে। এ জন্য পুলিশকেই দুষছেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা সুদীপ্তর আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “আগেই বলেছি, পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার মক্কেলকে ফাঁসিয়েছে। আজই ওঁর জামিন হয়ে যেত। পুলিশের গাফিলতিতেই তা হল না।” সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, বোলপুর থানা থেকে কেস ডায়েরি দেরিতে আসায় শুনানি পিছিয়েছে। দু’পক্ষের কথা শুনে তাই বিচারক গৌতম সেনগুপ্ত ২৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে মদ্যপ অবস্থায় দলবল নিয়ে বোলপুর থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল সুব্রত-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে। পুলিশের সেই দাবিকে প্রথম থেকেই উড়িয়ে দেন শাসক দলের নেতারা। খোদ জেলার এসপি মন্তব্য করেন, এখন ‘কঠিন সময়ে’র মধ্যে যেতে হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলেও শাসক দলের ‘চাপেই’ অভিযুক্তদের কাউকে ধরতে পারছে না পুলিশ। যেমন পারেনি অনুব্রত মণ্ডলকেও। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে একাধিক বার উস্কানিমূলক বক্তৃতা (পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ-সহ), এমনকী পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হলেও পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি।

এই অবস্থায় বীরভূমে মনোবল হারানো পুলিশের উপরে হামলা আরও হতে পারে, এমনই দাবি বিরোধীদের। এ বছর জুনেই দুবরাজপুরে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। বোমার আঘাতে গুরুতর জখম, দুবরাজপুরের তরুণ সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী পরে হাসপাতালে মারা যান। বোলপুর থানায় হামলার মতোই এসআই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের শেখ আলিমকেও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। তার পরের মাসেই আবার এক ব্লক তৃণমূলে নেতার নেতৃত্বে খয়রাশোলের লোকপুর ফাঁড়িতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছিল। ফাঁড়ি ইন-চার্জকে মারধর-সহ পুলিশ একাধিক ধারায় শাসক দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছিল। এ ক্ষেত্রেও মূল অভিযুক্তেরাই অধরা।

যেমন অধরা সুদীপ্ত। তৃণমূল সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকে বোলপুরে থাকলেও বাইরে চলাফেরার ব্যাপারে একটু সতর্ক হয়েছেন ওই যুব তৃণমূল নেতা। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে বাইরে না আসার পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ সময় বাড়িতে কাটালেও বোলপুরের পার্টি অফিসে তাঁর আসা বন্ধ হয়নি। এ কারণেই ঘটনার পরে থেকে তৃণমূলের ওই অফিসে সাংবাদিকদের ঢোকার ব্যাপারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। নেতাদের অনুমতি ছাড়া কেউ-ই সেখানে ঢুকতে পারছেন না।

এ দিনও পুরসভায় তাঁর নির্দিষ্ট ঘরে সুদীপ্তর দেখা মেলেনি। বোলপুরের হরগৌরী তলায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। বারবার ডাকলেও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেননি। সুদীপ্ত এ দিন ফোনও ধরেননি। বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “এখন বাইরে আছি। তবে, কিছু দিন ধরে ও (সুদীপ্ত) আসছে না। আজও আসেনি বলে শুনেছি। সুদীপ্ত ঘোষ ছুটি নিয়েছেন কি না, দফতরে না গিয়ে বলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anubrata mondal sudipto ghosh tmc leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE