Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাড়ুই হত্যা মামলা সুপ্রিম কোর্টের পথেই

বীরভূমের পাড়ুই হত্যা মামলা শুক্রবার কলকাতা থেকে দিল্লিতে পৌঁছল। নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ এবং তাঁর আইনজীবীরা এ দিন সকালে দিল্লি রওনা হন। সন্ধ্যা থেকে তাঁরা দফায় দফায় এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনাও করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৯
Share: Save:

বীরভূমের পাড়ুই হত্যা মামলা শুক্রবার কলকাতা থেকে দিল্লিতে পৌঁছল।

নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ এবং তাঁর আইনজীবীরা এ দিন সকালে দিল্লি রওনা হন। সন্ধ্যা থেকে তাঁরা দফায় দফায় এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিক্রমজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হতে পারে। তবে সেটা করা হবে শীর্ষ আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনার পরেই।

রবিশঙ্করের সঙ্গে কথা বলার আগেই অবশ্য এই মামলার সব নথিপত্র নিয়ে বিক্রমজিৎবাবুর সঙ্গে সন্ধ্যায় দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে হৃদয়বাবুদের। তাঁদের আশা, সোমবার শীর্ষ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হলে মঙ্গলবার তার শুনানি হতে পারে। হৃদয়বাবুর আইনজীবী শীর্ষেন্দু সিংহরায় জানান, তাঁরা চান, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পাড়ুই মামলায় যে-স্থগিতাদেশ দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তা প্রত্যাহার করে নিক। সেই সঙ্গে যাতে ওই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়, তার জন্য তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক সিবিআই-কে।

২০১৩-র ২১ জুলাই বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকার কসবা-নবগ্রামে খুন হন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। প্রায় ন’মাসেও ওই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত না-হওয়ায় তাঁরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে হৃদয়বাবু এ দিন জানান। দিল্লি পৌঁছে তিনি বলেন, “অভিযুক্তেরা এখনও অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। হুমকি দিচ্ছে। আমরা ভীতসন্ত্রস্ত। সুবিচারের আশায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছি।”

সাগর-হত্যার তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে একটি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিট তাঁর এজলাসে যে-ক’টি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তার একটিতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারপতি দত্ত। তিনি জানতে চান, গত জুলাইয়ে এক জনসভায় সরাসরি পুলিশকে বোমা মারার কথা বলার পরেও তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? অনুব্রতের সঙ্গে এক মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সাগর-হত্যা মামলায় অনুব্রত অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই খুনের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার দাবি ওঠে। বিচারপতি দত্ত জানান, সিবিআইকে দায়িত্ব দিতে তিনি প্রস্তুত। তবে তার আগে ন্যায়বিচারের স্বার্থেই ডিজি-র কাছ থেকে তিনি কিছু প্রশ্নের উত্তর চান। গত ১১ এপ্রিল ডিজি-কে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন বিচারপতি। ডিজি জানিয়ে দেন, বেলা ২টোয় তিনি হাজির হবেন।

১১ এপ্রিল সকালে কোর্ট বসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পক্ষ বিচারপতি দত্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল মামলা করে। তার শুনানিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ তিন সপ্তাহের জন্য এই মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়। তিন সপ্তাহ পরে আর বিচারপতি দত্তের এজলাসে নয়, প্রধান বিচারপতির এজলাসেই মামলাটি ওঠার কথা ছিল।

বিচারপতি দত্তের নির্দেশের জেরে হৃদয়বাবুরা মনে করেছিলেন, ১১ এপ্রিলই মামলার একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তা না-হওয়ায় হৃদয়বাবু, তাঁর মা ও স্ত্রী আশাহত হয়ে পড়েন। তার পরেই হৃদয়বাবুর আইনজীবীরা ঠিক করেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। আইনজীবীদের একটি বড় অংশ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের নানা ভাবে সহায়তা করেন। হাওড়ার এক বিশিষ্ট আইনজীবী শুক্রবারেও হৃদয়বাবুর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE