Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফিরতি শীতের দাপটে মহানগরেও কড়া নাড়ছে শৈত্যপ্রবাহ

ঠুকঠুকের পালা শেষ। এ বার রীতিমতো ধুন্ধুমার। এবং ফেরত আসা উত্তুরে হাওয়ার সেই মারমুখী ব্যাটিংয়ে শীতেরও পৌষমাস। ঘূর্ণাবর্তের ঠেলায় মাঘের গোড়ায় তাকে মুখ লুকোতে হয়েছিল বটে, কিন্তু এখন কাশ্মীরের বরফ-ছোঁয়া বাতাসে ভর করে বীর বিক্রমে সে বাংলা কাঁপাচ্ছে। ভরা মাঘে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা। উত্তরবঙ্গের তিন জেলা শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি। এমনকী, ফিরতি শীতের দাপটে খাস কলকাতাও শৈত্যপ্রবাহের প্রায় দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে!

উষ্ণতার খোঁজে। রবিবার দুপুরে, কলকাতার মিলেনিয়াম পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উষ্ণতার খোঁজে। রবিবার দুপুরে, কলকাতার মিলেনিয়াম পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

ঠুকঠুকের পালা শেষ। এ বার রীতিমতো ধুন্ধুমার।

এবং ফেরত আসা উত্তুরে হাওয়ার সেই মারমুখী ব্যাটিংয়ে শীতেরও পৌষমাস। ঘূর্ণাবর্তের ঠেলায় মাঘের গোড়ায় তাকে মুখ লুকোতে হয়েছিল বটে, কিন্তু এখন কাশ্মীরের বরফ-ছোঁয়া বাতাসে ভর করে বীর বিক্রমে সে বাংলা কাঁপাচ্ছে। ভরা মাঘে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা। উত্তরবঙ্গের তিন জেলা শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি। এমনকী, ফিরতি শীতের দাপটে খাস কলকাতাও শৈত্যপ্রবাহের প্রায় দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে!

বস্তুত চলতি শীতে এ রাজ্যে শৈত্যপ্রবাহের ভাঁড়ারে বেশ টান। পৌষের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলায় সে এক দিনের জন্য দেখা দিয়েছিল। তার পরে নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের জেরে ঠান্ডা কার্যত উধাও হয়ে যায়। জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে তো মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাঝে-মধ্যে ১৭ ডিগ্রির গণ্ডি ছাড়িয়ে ফেলেছে! লেপ-কম্বল-সোয়েটার মাফলার কুলুঙ্গিতে তুলে রাখার জোগাড়। এমতাবস্থায় মাঘের শুরুতেই শীত বিদায় নেবে কি না, এমন আশঙ্কা যখন ধীরে ধীরে চেপে বসছে, তখনই আকাশ পরিষ্কার হয়ে রাজ্যে উত্তুরে হাওয়ার রাস্তা খুলে দিল। ঘটনাচক্রে তখনই কাশ্মীর হয়ে উত্তর ভারতে নেমে এল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। মেঘমুক্ত পরিমণ্ডল পেয়ে বিনা বাধায় তা ঢুকে পড়ল পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে।

পরিণামে শুক্রবার থেকেই তামাম পশ্চিমবঙ্গে তাপমাত্রা একটু-একটু করে নামছিল। রবিবার এতটাই নেমে গেল যে, শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ল দক্ষিণবঙ্গের একাংশ। আজ সোমবারও দক্ষিণবঙ্গ-উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। উল্লেখ্য, শীতকালে কোনও অঞ্চলের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন যা তাপমাত্রা, থার্মোমিটারের পারদ তার নীচে নেমে গেলে শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রবিবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা বাঁকুড়া, বীরভূম ও পূর্ব মেদিনীপুরে তা-ই হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া ও বর্ধমান শিল্পাঞ্চলে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়েছে। কলকাতাও জুবুথুবু। আলিপুরের রেকর্ড অনুযায়ী, মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছে। আর এক ডিগ্রি নামলেই কলকাতা শৈত্যপ্রবাহের গ্রাসে পড়বে। সে ক্ষেত্রে মাঝ-মাঘে এ মরসুমে প্রথম শৈত্যপ্রবাহের হিম পোহাবে কলকাতা।

অন্য দিকে উত্তরবঙ্গেও ঠান্ডা ফিরছে জাঁকিয়ে। ঘন কুয়াশার দরুণ সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেমন বাড়তে পারেনি, তেমন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দ্রুত নেমেছে। দুইয়ে মিলে ঘোর শীতের ঠকঠকানি। কোচবিহারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন ৬.৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। জলপাইগুড়ি-মালদহে শৈত্যপ্রবাহ কড়া নাড়ছে। তবে দক্ষিণবঙ্গবাসী ঝকঝকে নীল আকাশের নীচে রোদে পিঠ দিয়ে শীতের আমেজ উপভোগ করার সুযোগ পেলেও উত্তরবঙ্গে তাতে বাদ সেধেছে কুয়াশা। আলিপুর জানাচ্ছে, উত্তরবঙ্গে আজ, সোমবারও ভোরে ঘন কুয়াশার সঞ্চার হবে। তাতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা। দিনের তাপমাত্রাও তেমন বাড়তে পারবে না।

অর্থাৎ, বঙ্গের হাওয়া কাঁপুনি ধরাবে আজও। আবহবিদেরা বলছেন, শীতের এ হেন পুনরুত্থান যার দৌলতে, কাশ্মীর থেকে নেমে আসা সেই বরফ-শীতল কনকনে বাতাসের প্রভাবে মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়-বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশাতেও তাপমাত্রা নিম্নগামী। ওই সব রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ থাবা বসিয়েছে। উপরন্তু কাশ্মীরে এ দিন নতুন করে বরফ পড়েছে। আগামী তিন দিন কাশ্মীর-হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে প্রবল থেকে অতি প্রবল তুষারপাতের সতর্কতা দিয়ে রেখেছে মৌসম ভবন।

ফলে উত্তুরে বাতাসে হিমের ছোঁয়া থাকবে। তা পড়ে পাওয়া শীতটা স্থায়ী হবে কত দিন?

আবহবিদেরা নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলছেন না। যদিও তাঁদের অনুমান, আগামী দু’-তিন দিন অন্তত শীতের কামড় ভালই মালুম হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

winter alipore weather office cold wave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE