Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফের কালিয়াচকে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের, গুলিবিদ্ধ যুবক

এলাকা দখলের জন্য সমাজবিরোধীরা বারবার জড়াচ্ছে গুলির লড়াইয়ে। মাসুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মালদহের কালিয়াচকে এমনই এক ঘটনায় রবিবার রাতে আহত হন এক যুবক। পায়ে গুলি লেগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আহত আজাদ শেখ। ছবি: বাপি মজুমদার

দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আহত আজাদ শেখ। ছবি: বাপি মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

এলাকা দখলের জন্য সমাজবিরোধীরা বারবার জড়াচ্ছে গুলির লড়াইয়ে। মাসুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মালদহের কালিয়াচকে এমনই এক ঘটনায় রবিবার রাতে আহত হন এক যুবক। পায়ে গুলি লেগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। মাসখানেক আগে একই এলাকায় দুষ্কৃতীদের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ গিয়েছে এক ট্রাক মালিকের। জখম হয়েছেন দু’জন। তাই কালিয়াচকের ‘গ্যাং ওয়ার’ ঠেকাতে পুলিশ আদৌ সক্রিয় কি না সে প্রশ্ন তুলছে অতিষ্ঠ জনতা। একই প্রশ্নে সরব বিরোধীরাও। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় নিয়মিত টহলদারি হয়। অপরাধীদের ধরাও হচ্ছে।’’

মাসখানেক আগে কালিয়াচক থানার নওদা-যদুপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়। বেমক্কা গুলি লেগে মারা যান ফৈজউদ্দিন শেখ নামে নিরীহ এক ট্রাকমালিক। এ বারের ঘটনাস্থলও নওদা-যদুপুরে, জাতীয় সড়কের উপরেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত ৯টা নাগাদ ভাগলপুর বাসস্ট্যান্ডে এলোপাথাড়ি গুলি চলে। প্রাণভয়ে পালাতে গিয়ে বাঁ পায়ের হাঁটুতে গুলি খান স্থানীয় কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা আজাদ শেখ। রক্তাক্ত অবস্থায় মিনিট দশেক তিনি সেখানেই পড়ে ছিলেন। সমাজবিরোধীরা এলাকা ছাড়লে পড়শিরা তাঁকে সিলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে সরানো হয় মালদহ মেডিক্যালে।

বছর পঁচিশের আজাদ কৃষিজীবী পরিবারের ছেলে। পৈতৃক জমিতে চাষ করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের পাশে চায়ের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ পর-পর গুলির আওয়াজ। পালাতে যেতেই বাঁ পায়ে গুলি লাগল। ওখানেই পড়ে যাই।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার দখল নিয়ে নওদা-যদুপুরে সমাজবিরোধীদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মিত গুলি, বোমার লড়াই চলে। একটির অন্যতম ‘মদতদাতা’ তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ। অন্যটির পিছনে রয়েছে ‘কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ’ জাকির শেখ। মাসখানেক আগে দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে ট্রাকমালিক ফৈজউদ্দিনের মৃত্যুর পরে বিষয়টি নিয়ে হইচই হয়। তৃণমূল বহিষ্কার করে বকুলকে।

এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের বক্তব্য, খুন, ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত বকুলের মাথায় যত দিন শাসক দলের ‘হাত’ ছিল, জাকিরেরা কোণঠাসা ছিল। বকুলকে বহিষ্কার করা হতেই তারা মাথা চাড়া দেয়। ইতিমধ্যে বকুলের সহযোগী সার্জেন শেখ গ্রেফতার হওয়ায় পোয়াবারো হয় জাকিরদের। আপাতত পালিয়ে গেলেও, এলাকায় ফিরতে চাইছে বকুল। তাই রবিবার রাতে জাকিরদের উপরে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ কিচ্ছু করে না বলেই দু’দলের এত বাড়াবাড়ি। সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভয় করে!’’

জাকিরের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতার কথা মানেননি সাংসদ তথা জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নুর। তাঁর কথায়, ‘‘কালিয়াচক তো বটেই, সার্বিক ভাবেও জেলার আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে পুলিশি-নিষ্ক্রিয়তায়।’’ প্রতিবাদে কংগ্রেস থানায়-থানায় আন্দোলন-কর্মসূচি শুরু করবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশের। বলেছেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটছে ঠিকই। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থাও নিচ্ছে। অযথা হইচই করছেন বিরোধীরা।’’

সন্ধ্যা ৭টা বাজতে না বাজতেই সুনসান হয়ে যাওয়া নওদা-যদুপুরের পথঘাট অবশ্য অন্য কথা বলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE