Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্দির বদলি ঘিরে তাণ্ডব হুগলি জেলে

কুখ্যাত দুষ্কৃতী নেপু গিরিকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে পাঠানোর নির্দেশ নিয়ে ধুন্ধুমার হয়ে গেল হুগলি জেলে। প্রথমে নেপুর শাগরেদদের তাণ্ডব, জেলে ভাঙচুর। পরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের পাল্টা আক্রমণ, মারপিট, ফটকে আগুন লাগানো।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জখম রক্ষী সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে। ছবি: তাপস ঘোষ

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জখম রক্ষী সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

কুখ্যাত দুষ্কৃতী নেপু গিরিকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে পাঠানোর নির্দেশ নিয়ে ধুন্ধুমার হয়ে গেল হুগলি জেলে।

প্রথমে নেপুর শাগরেদদের তাণ্ডব, জেলে ভাঙচুর। পরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের পাল্টা আক্রমণ, মারপিট, ফটকে আগুন লাগানো। কারারক্ষীরা আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিপদ ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া হয়। খবর যায় পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের কাছে। পুলিশ নামলে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে ঢোকে। দুষ্কৃতীদের মারে আট জন জেলকর্মী আহত হয়েছেন বলে রাত পর্যন্ত খবর মিলেছে।

সম্প্রতি নেপুকে তার হিন্দমোটরের গোপন ডেরা থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। সোমবার চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেখান থেকেই তাকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এই খবর পেয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে হুগলি জেলে থাকা নেপুর এক দল শাগরেদ। কেন নেপুকে হুগলি জেলে নিয়ে আসা হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলে হইচই বাধিয়ে দেয় তারা। ভাঙচুর শুরু হয়ে যায়। তছনছ করা হয় জেলের আসবাব।

খানিক বাদে নেপুর বিরুদ্ধ দলের দুষ্কৃতীরা তাদের বাধা দিতে নামে। দু’পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। ব্যাপক ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে উত্তেজিত এক দল কয়েদি জেলের ভিতরে একটি ফটকে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় কারারক্ষী এবং অন্য কর্মীদের। প্রাণ বাঁচাতে কারারক্ষীরা ছুটোছুটি শুরু করে দেন। পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষের হাতের বাইরে চলে যায়।

এই অবস্থায় চুঁচুড়া লাগোয়া কয়েকটি থানার ওসিদের ডেকে নেন হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী। কমব্যাট ফোর্স নিয়ে জেলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু প্রথমে পুলিশও বাধা পায়। দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যায়নি। সুকুমার মুখোপাধ্যায় নামে এক আহত কারারক্ষীকে পুলিশ কোনও রকমে জেলের মধ্যে থেকে বের করে এনে হাসপতালে পাঠায়।

নেপুকে হুগলি জেলে আনার এই মরিয়া চেষ্টা কেন? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, জেলে কয়েদিদের থেকে মোটা টাকার তোলাবাজি চলে। তা নিয়ে দুষ্কৃতীদের মধ্যে গোলমালও হয়। নেপু গিরির মতো দুষ্কৃতী জেলে হাজির থাকলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। মূলত হুগলিতেই তার দাপট। হুগলি জেলে নিয়ন্ত্রণ রাখা তার পক্ষে সহজ। সে কলকাতার জেলে চলে গেলে রাশ অনেকটাই আলগা হয়ে যাবে, তাতে তার শাগরেদদের ক্ষতি।

হুগলি জেলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব অবশ্য নতুন কিছু নয়। মাস কয়েক আগে এক দুষ্কৃতী জামিন না পাওয়ায় তার দলবল জেল চত্বরে পুলিশের উপরে হামলা চালিয়ে ‘দাদা’কে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে ফের ধরে আনতে পুলিশের কালঘাম ছুটে যায়।

রাতে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের নিরস্ত্র করে রাশ নিজেদের হাতে নিয়েছে।” তবে ফের জেলে দুষ্কৃতীদের এই তাণ্ডব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কারা কর্তৃপক্ষের রাশ কতটা আলগা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE